রেস্তোরাঁতেও চাকরি করতে হয়েছে, এখন প্রতি সিরিজ থেকে ২ লাখ টাকার বেশি আয়
ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর মধ্যে আলোচিত হয়েছে ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’। ওটিটিতে মুক্তির পর প্রশংসিত হয়েছে দুই সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ ও ‘মহানগর ২’। গল্প, অভিনয় ও নির্মাণের পাশাপাশি সিনেমা ও সিরিজ দুটির চিত্রগ্রহণ করেও আলোচিত হয়েছেন তিনি। তিনটি কাজের চিত্রগ্রাহকদের সংগ্রাম ও এগিয়ে চলার গল্প জেনেছেন মনজুরুল আলম। পর্ব-২
ভালো লাগা থেকে চিত্রগ্রাহক হতে এসেছিলেন কামরুল ইসলাম। সেটা ২০০৮ সালের কথা। তখন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে (নিমকো) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেন তিনি। ভেবেছিলেন কোর্স শেষে সহজেই কাজ জুটে যাবে। টেলিভিশন চ্যানেল থেকে শুরু করে অনেক প্রোডাকশন হাউসেই ঘোরাঘুরি করছিলেন, কিন্তু সুযোগ পাননি। অনেকের কাছ থেকে শুনতে হয়েছিল, লবিং না থাকলে এখানে সুবিধা করতে পারবেন না। কিন্তু ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’–এর এই চিত্রগ্রাহক মেধা দিয়ে এগিয়ে যেতে চান। তাই বাধাটাও বেশি।
কামরুল ফটোগ্রাফিতে বেশি মনোযোগী ছিলেন। কাজ শেখার পাশাপাশি সিনেমার ফটোগ্রাফি দেখতে থাকেন। একটু একটু এগিয়ে যান। কিন্তু ঢাকায় তখন অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে টিকে থাকাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। একসময় বাধ্য হয়ে পেশা ছাড়েন। চাকরি নেন একটি রেস্তোরাঁয়। প্রায় এক বছর এভাবেই চলে। কিন্তু মন পড়ে থাকত সিনেমাটোগ্রাফিতে। আবার রেস্তোরাঁর কাজ ছেড়ে দেন। প্রতিদিন স্টুডিও ও প্রোডাকশন হাউসে ঘুরতে থাকেন। একসময় পরিচয় হয় চিত্রগ্রাহক হৃদয় সরকারের সঙ্গে। টানা দুই বছর তাঁর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ২০১৩ সালে ‘মোকামতলা’ নাটক দিয়ে চিত্রগ্রাহক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন।
কামরুল বলেন, ‘না বুঝেই ক্যামেরার কাজ করতে এসেছিলাম। প্রথম নাটকের কাজের পর অনেকেই প্রশংসা করতে লাগলেন। তখন মনে হলো সরাসরি কাজের প্রশংসা পাওয়া তো বেশ ভালোই লাগে। ক্যামেরার প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়। একসময় মনে হতে থাকে আমার সিদ্ধান্তই ঠিক। এটাই আমার জায়গা। ভালো কাজই আমাকে কাজের সুযোগ করে দিয়েছে।’ দীপংকর দীপন, হাসান মাসুদ উজ্জ্বল, শিহাব শাহীন, মাহমুদ দিদার, মিজানুর রহমান আরিয়ানদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। ‘নীল প্রজাপতি’, ‘বড় ছেলে’, ‘বুকের বাঁ পাশে’ নাটকগুলো প্রচারের পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। অনেকেই তাঁকে চিনে থাকেন। পরে ওটিটির কাজের জন্য আবার তাঁকে সংগ্রাম করতে হয়।
কীভাবে ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’–এ যুক্ত হলেন কামরুল? ২০২০ সালের পর দেশে ওটিটির কাজের দাপট শুরু হয়। শুরু হয় একের পর এক ওয়েব সিরিজ ও সিনেমা নির্মাণ। কিন্তু কোনো কাজেই ডাক পাচ্ছিলেন না কামরুল। তিনি বলেন, ‘নাটকের জন্য নিয়মিত ডাক পাচ্ছি। সবাই পরিচিত নির্মাতা। তাঁরাই যখন ওটিটির জন্য কাজ বানাচ্ছিলেন, তখন আমাকে নিচ্ছিলেন না। অনেককে অনুরোধ করেছি, কিন্তু লাভ হয়নি। কারণ, আমি ওটিটিতে নতুন। নির্মাতারা আমাকে কাজে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাননি। সেখানে শিহাব শাহীন ভাই প্রথম আমাকে ওটিটির কাজের সুযোগ করে দেন। তাঁর সঙ্গে ১০ বছরের মতো কাজ করছি। আমাদের কাজের সিঙ্ক ভালো। তিনিই আমাকে ‘মায়াশালিক’, ‘সিন্ডিকেট’, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’–এর মতো বড় প্রজেক্টে নিয়েছেন। তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা।’
জানা গেল, প্রতিটা সিরিজ থেকে দুই থেকে তিন লক্ষাধিক টাকা পারিশ্রমিক পান তিনি। পারিশ্রমিক দিন হিসেবে। তবে এটা কখনো বাড়ে, কখনো কমে। অনেক সময় কাজ বুঝে পারিশ্রমিক কমও নেন। তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই টানা কাজ করি না। আগে গল্প শুনি। তারপর ঢাকার বাইরে হলেও আগে লোকেশন গিয়ে ঘুরে আসি। প্রি–প্রোডাকশনে বেশি সময় দিই। ১০ থেকে ১৫ দিনের বেশি শুটিং করতে পারি না।’ বর্তমানে তাঁর হাতে রয়েছে ১০টির মতো ওয়েব সিরিজ ও সিনেমার কাজ। ‘বিউটি সার্কাস’ সিনেমার চিত্রগ্রহনের জন্যও প্রশংসা পেয়েছেন তিনি।