হীরা ডাকাতি, নাকি ধোঁকা
‘লাকি ভাস্কর’-এর স্ক্যাম নিয়ে নেট–দুনিয়া এখনো সরব! লাকির স্ক্যামকে হয়তো হারাতে পারবে না ‘সিকান্দার কা মুকাদ্দার’-এর সিকান্দার। তবে তাঁর অভিনব চুরির কাহিনি দেখে আপনি অবাক হতে বাধ্য!
একনজরে
সিনেমা: ‘সিকান্দার কা মুকাদ্দার’
জনরা: ক্রাইম থ্রিলার
স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম: নেটফ্লিক্স
পরিচালক: নীরজ পান্ডে
অভিনয়: অবিনাশ তিওয়ারি, জিমি শেরগিল, তামান্না ভাটিয়া, রাজীব মেহতা
দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট
পরিচালক নীরজ পান্ডে পরিচিত তাঁর থ্রিলারের জন্য। এই নির্মাতার ‘স্পেশাল ২৬’, ‘আ ওয়েনসডে’, ‘বেবি’, ‘স্পেশাল অপস’, ‘খাকি’ যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা সেটা ভালোই জানেন।
ভরপুর অ্যাকশন আর রোমাঞ্চকর গল্পে তিনি তাঁর জাত চিনিয়েছেন আগেই। সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে তাঁর নতুন সিনেমা ‘সিকান্দার কা মুকাদ্দার’। দর্শকদের প্রত্যাশা কতটুকু মেটাতে পারল এ সিনেমা?
হীরা চুরির কথা শুনলেই এখনো চোখে ভাসে ‘ধুম ২’ সিনেমার সেই রুদ্ধশ্বাসকর চুরির দৃশ্য। ‘সিকান্দার কা মুকাদ্দার’ সিনেমার শুরু এ রকম টান টানভাবে না হলেও দেখতে গিয়ে ধাঁধায় পড়তে হয়।
২০০৯ সাল। মুম্বাই শহরের সবচেয়ে বড় হীরা প্রদর্শনীর দিন পুলিশের কাছে খবর আসে, অনুষ্ঠানে ডাকাতি হবে। খবর পেয়েই পুলিশ সতর্ক হয়ে যায়। যারা চুরি করতে এসেছিল, তারা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। কিন্তু তারপরও সবার চোখের সামনে চুরি হয়ে যায় ৬০ কোটি দামের লাল হীরা। একদিকে চুরি করতে আসা সবাই মৃত, অন্যদিকে হীরাও গায়েব! রহস্যের কূলকিনারা করতে পারে না কেউ। ঘটনার তদন্তের ভার পড়ে পুলিশ কর্মকর্তা জাসবিন্দর সিংয়ের (জিমি শেরগিল) ওপর। অপরাধীদের কাছে জাসবিন্দর এক মূর্তিমান আতঙ্ক। কারণ, তাঁর অপরাধী ধরার সাফল্য ১০০ শতাংশ।
জাসবিন্দর সন্দেহভাজন অপরাধীদের একটি তালিকা বানান। তালিকায় স্থান পায় তিনজন, মঙ্গেশ দেশাই (রাজীব মেহতা), কামিনী সিং (তামান্না ভাটিয়া) ও সিকান্দার শর্মা (অবিনাশ তিওয়ারি)। জাসবিন্দরের নিজের ধারণার ওপর আত্মবিশ্বাস চূড়ান্ত। আর এ নিয়ে দম্ভ করতেও ছাড়েন না তিনি। তবে ঘটনা এমন দিকে চলে যায় যেন এই প্রথম হারের স্বাদ পেতে হয় জাসবিন্দরকে। জাসবিন্দরের ধারণা কি সত্যিই ভুল ছিল? শেষ পর্যন্ত কি তিনি ধরতে পারেন চোরকে?
‘সিকান্দার কা মুকাদ্দার’ সিনেমাকে চোর-পুলিশের গল্প বললে ভুল বলা হবে না। গল্প একবার সিকান্দারের দৃষ্টিতে এগিয়ে যায়, একবার জাসবিন্দরের। মাঝখানে দেখা যায় ১৫ বছর ধরে চলা ঘটনাপ্রবাহ। টান টান উত্তেজনা দিয়ে গল্প শুরু হলেও গল্পটা যেন মাঝামাঝি এসে একটু ঝুলে যায়। এখানে যেন সেই ক্রাইম-থ্রিলারের কারিগর নীরজ পান্ডেকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে একের পর এক টুইস্টের কারণে গল্প থেকে চোখ সরানো যায় না।
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সিনেমার অভিনয়শিল্পীরা। জিমি শেরগিল পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দুর্দান্ত। একদিকে নিজের ধারণাকে প্রমাণ করতে তাঁর মারিয়া ভাব, অন্যদিকে নেশার গ্রাসে সব হারিয়েও তাঁর ফিরে আসাটা দারুণ ছিল। সিকান্দারের সংগ্রাম অবিনাশ তিওয়ারি যে ফুটিয়ে তুলেছেন, এটি তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম ভালো অভিনয় বললে ভুল বলা হবে না।
একের পর এক সংগ্রামী চরিত্রে অভিনয় করতে করতে শেষ পর্যন্ত তিনি যখন উঠে দাঁড়ান, সেখানেও তিনি দারুণ অভিনয় করেছেন। গ্ল্যামারহীন চরিত্রে তামান্না ভাটিয়ার অভিনয় ভালো ছিল। প্রথম দিকে কামিনী চরিত্রের যেসব দিকে খটকা লাগে, গল্প আগানোর সঙ্গে সঙ্গে তা দূর হয়ে যায়।
এ সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে আলাদা করে বলতেই হয়। প্রথম দিকের লং শটের দৃশ্যগুলো নিখুঁত ছিল। এ ছাড়া গল্পের স্থান মুম্বাই হোক, আগ্রা বা আবুধাবি; সেসব জায়গা অরবিন্দ সিং ফুটিয়ে তুলেছেন ভালোভাবেই। ‘সিকান্দার কা মুকাদ্দার’ সিনেমায় অনেক কিছুই আগে থেকে অনুমান করা যায়। তবে চুরি হওয়ার পর যখন ১৪ বছর পরের ঘটনা দেখানো হয়, তখন সম্পর্কের রসায়ন বেশ খাপছাড়া লাগে। এখানে পরিচালক আরেকটু কাজ করলে ভালো হতো।
তবে এ গল্পের প্রধান আকর্ষণ এর রোমাঞ্চ। আগে থেকে শেষটা অনুমান করা গেলেও শেষেরও যেন একটা টুইস্ট থাকে। আর এই শেষটা যেন আরেকবার সেই চুরি হয়ে যাওয়া হীরার মতোই ধোঁকা দিয়ে যায়।