যেভাবে সুলতানা হয়ে উঠলেন বাঁধন
এটা কি আজমেরী হক বাঁধন? নাকি সত্যি সত্যি সুলতানার গল্প? যার কাছে জীবন একটি সংগ্রামের নাম। পরিবারের জন্য এই সংগ্রামে শামিল হয় মাদক বহনকারী সুলতানা। একসময় মনে গেঁথে যায় সুলতানার মুখ। আমাদের সমাজেরই চেনা মুখ সে। যে জীবনের গোলকধাঁধায় পা রেখে ফেরার পথ খুঁজে পায় না। পর্দার সুলতানা চরিত্রে এতটাই মানিয়ে গেছেন, তিনি যে আজমেরী হক বাঁধন, দেখতে দেখতে সেটা মনেই থাকে না!
সুলতানারূপী এই বাঁধন ধরা দিলেন ‘গুটি’তে। পেপসি নিবেদিত ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির অরিজিনাল সিরিজ ‘গুটি’, পাওয়ারড বাই কেএফসি, পরিচালনা করেছেন শঙ্খ দাসগুপ্ত। যেখানে নামকে ছাপিয়ে যেন সুলতানা হয়ে উঠেছিলেন অভিনেত্রী।
গত বছর ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এ রেহানা চরিত্রে অভিনয়ের পর নিজেকে বারবার ভাঙছেন বাঁধন। এবারের সুলতানা চরিত্রেও হাজির হয়েছেন নতুনভাবে। হলজুড়ে দর্শকদের করতালি সে কথাই বলে। আজ সকালে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে ‘গুটি’র প্রেস শোর আয়োজন করে চরকি। দেখানো হয় সিরিজটির দুই পর্ব। প্রদর্শনীর পর ভূয়সী প্রশংসা করেন উপস্থিত দর্শক।
কথা হয় বাঁধনের সঙ্গে। চরিত্রের মধ্য দিয়ে বাস্তবতার এত কাছাকাছি যাওয়া কীভাবে সম্ভব হয়েছে? এমন প্রশ্নে বাঁধন বলেন, ‘একটি মেয়ের মানবিক জার্নি। যে গল্পটা আমরা অনেকবার পত্রিকায় দেখেছি। সে চরিত্র হাতে পাওয়ার পরে আমার কাছে এটা মনে হয়েছিল, আমাকে যেকোনো মূল্যে সুলতানা হয়ে উঠতে হবে। আমরা ঢাকা–চট্টগ্রামের অনেক জায়গায় শুটিং করেছি। এই সময়ে চরিত্রের মধ্যে থেকেছি। খুব ভোরে আমরা ঘুম থেকে উঠতাম, শুটিং করতাম। সবকিছুর মধ্যে চরিত্রটি ছিল। এমনও হয়েছে, আমাকে দর্শক দেখবেন পা খুঁড়িয়ে হাঁটতে। শুটিংয়ের বাইরেও আমি সুলতানার মতো আচরণ করেছি।’
সুলতানা চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বাঁধন আরও বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সাময়িকীর সাহায্য নিয়ে বাস্তব কিছু চরিত্রের সাহায্যে পর্দার সুলতানাকে সাজিয়েছি। অনেক কিছু করেছি। আবার দেশের প্রেক্ষাপটের কারণে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়নি। শরীরের মধ্য দিয়ে মাদক পাচার করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এ ঘটনায় অনেকে মারাও গিয়েছেন। একটা সময় আমার কাছে প্রশ্ন ছিল, জীবনে কি আর কিছু করার নেই। এখানেই সুলতানা বাধার মধ্যে পড়ে যায়। আসলে তার আর কিছু করার নেই। একজন নারীর কঠিন সংগ্রাম আমি অনুভব করেছি।’
‘গুটি’র পরিচালক শঙ্খ দাসগুপ্ত ভাগাভাগি করলেন ওয়েব সিরিজটি নির্মাণের গল্প। তিনি গল্পের পরে চেয়েছিলেন শক্তিশালী চরিত্র দিয়ে কাজটি করতে। তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম কথা ছিল ভালো অভিনয়শিল্পী লাগবে। সেটা আমার কাজটিকে সহজ করে দেয়। সেখানে বাঁধন, মৌসুমী হামিদসহ সবাই দারুণ পরিশ্রম করেছেন চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে। আমরা দীর্ঘ সময় নিয়ে চিত্রনাট্য করেছি। যাঁরা মাদক এভাবে শরীরে বহন করেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। গল্পটি নিয়ে গবেষণা করতে হয়েছে। এখন দর্শক কীভাবে নেবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।’ এ সময় তিনি সুলতানার চরিত্র প্রসঙ্গে বলেন, ‘শরীরে মাদক বহন করার দৃশ্যের অংশগুলো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। দর্শক দেখলে বুঝতে পারবেন। আমরা সেটা বাস্তবিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’
সিরিজে লিপি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মৌসুমী হামিদ। তিনি অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘বাস্তব চরিত্রের কাজগুলো আমাকে সব সময় টানে। লিপি চরিত্রটি আমার খুবই পছন্দের। শুটিংয়ের সময় চরিত্রের মধ্যেই ছিলাম।’
এ সময় তিনি শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে বলতে থাকেন, ‘খুবই নিবেদন নিয়ে কাজটি করেছি। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠতাম। সবার আগে দেখতাম, বাঁধন আপু উঠে বসে আছেন। এটা আরও বেশি ভালো লেগেছে। তিনি চরিত্রের মধ্যেই থাকতেন। আমিও তখন সবার আগে উঠে চরিত্রের মধ্যে থাকার চেষ্টা করতাম। আমাদের টিমওয়ার্কটি সবচেয়ে ভালো ছিল।’ সিরিজে নান্নু চরিত্রে দেখা যাবে নাসির উদ্দিন খানকে। বরাবরই তিনি দারুণ অভিনয় করেন। এবারও সিএনজিচালক হিসেবে সেই ছাপ রাখলেন। বাঁধনের স্বামীর চরিত্রে শাহরিয়ার নাদিম জয়ও ভালো অভিনয় করেছেন।
‘গুটি’র প্রেস শোর শুরুতে দেখানো হয় ২০২২ সালে নির্মিত চরকির অরিজিনাল কনটেন্টগুলোর একঝলক। এরপর বক্তব্য দেন চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি। বছরের প্রথম ওয়েব সিরিজ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি। রেদওয়ান রনি বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলি। গত বছর বলেছিলাম, চরকি প্রতি মাসে একটা করে সিনেমা দেবে। এ বছর আমাদের টার্গেট প্রতি মাসে, অর্থাৎ ১২ মাসে ১২টি সিরিজ মুক্তি দেওয়ার। সেই ধারাবাহিকতায় বছরের প্রথম ওয়েব সিরিজ আজ মুক্তি পাচ্ছে। সময়ের দর্শকদের কথা মাথায় রেখে আমরা “গুটি” নির্মাণের সঙ্গে ছিলাম। ভালো কনটেন্ট দিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের যে স্বপ্ন চরকি বাংলা কনটেন্টের রাজধানী হবে, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বছরজুড়ে নতুনত্ব পাবেন চরকির দর্শক।’