‘কিলার হিট’, প্রেমিকের যমজ ভাইয়ের সঙ্গে প্রেম, এরপর যা হলো

‘কিলার হিট’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

গল্পের পরিসর ছোট। সেটা হতে পারে একটা দ্বীপ, হতে পারে নিরুত্তাপ কোনো শহর; আবার হতে পারে কোনো একটা বাড়ি। এমন ছোট পরিসরে আগে প্রচুর থ্রিলার সিনেমা হতো। কিন্তু আজকাল সেভাবে আর অল্প বাজেটের বুদ্ধিদীপ্ত থ্রিলার হয় না। ‘কিলার হিট’ সে ধরনেরই সিনেমা। গত ২৬ সেপ্টেম্বর এটি মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে। কিন্তু ‘কিলার হিট’ কী পারল পুরোনো ধাঁচের থ্রিলারের সেই আমেজ ফিরিয়ে আনতে?

এক নজরে
সিনেমা:
‘কিলার হিট’
পরিচালক: ফিলিপ ল্যাকোট
অভিনয়ে: জোসেফ গর্ডন-লেভিট, শেইলিন উডলি, রিচার্ড ম্যাডেন
স্ট্রিমিং: অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও

গ্রিসের এক দ্বীপের ধনী পরিবারের গল্প। পরিবারটির জাহাজের তেজারতি। পরিবারের দুই সন্তান লিও আর এলিয়াস। ব্যবসা এলিয়াসই দেখেন, জাহাজ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী তিনি। আরেক ছেলে লিও ব্যবসা-বাণিজ্য বোঝেন না, নিজের মর্জিমতো চলেন।

‘কিলার হিট’ সিনেমার পোস্টার। আইএমডিবি

জানিয়ে রাখা ভালো, লিও আর এলিয়াস যমজ। একদিন পাহাড়ে চড়তে গিয়ে মারা যান লিও। এটা কী দুর্ঘটনাবশত মৃত্যু, নাকি খুন? এলিয়াসের স্ত্রী পেনেলোপির ডাকে দ্বীপে হাজির হন বেসরকারি গোয়েন্দা নিক। তিনি কি পারবেন রহস্য ফাঁস করতে? এ নিয়েই এগিয়েছে গল্প।

পেনেলোপি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। পানশালায় কাজ করতে লিওর সঙ্গে পরিচয়। তবে লিওর সঙ্গে নয়, পেনেলোপির প্রেম জমে ওঠে তাঁরই যমজ ভাই এলিয়াসের সঙ্গে। পরে বিয়েও হয়। লিও কি বিষয়টা সহজে মেনে নেন? এটা নিয়ে কি পরিবার অশান্তিতে ছিল?
কাকতালীয়ভাবে গোয়েন্দা নিকও ঘরছাড়া পারিবারিক অশান্তির কারণে।

‘কিলার হিট’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

স্ত্রীর বিচারবহির্ভূত সম্পর্ক আবিষ্কারের পর থেকেই জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তাঁর। তিনি পরিবার থেকে একরকম লাপাত্তা? নিক আর পেনেলোপির জীবন কি কোথাও একসূত্রে গাঁথা? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর খোঁজে খোঁজে এগিয়েছে ‘কিলার হিট’।

জমাটি রহস্যের প্রতিশ্রুতি থাকার পরও ‘কিলার হিট’ সিনেমাটি হিসেবে সেভাবে দাঁড়ায়নি এর সবচেয়ে বড় কারণ দুর্বল চিত্রনাট্য। জো নেসবোর গল্প ‘দ্য জেলাসি ম্যান’ অবলম্বনে নির্মিত এ সিনেমায় যেসব রহস্য তৈরি করেছেন নির্মাতা, সেগুলোতে ওটিটির এন্তার থ্রিলার দেখা দর্শকেরা সহজেই ধরে ফেলবেন। তবে এর চেয়েও হতাশার এ সিনেমার চিত্রনাট্য। গল্প অনুমানযোগ্য হলেও বুদ্ধিদীপ্ত চিত্রনাট্য অনেক সময় সে দুর্বলতা দূর করে দেয়। তবে ‘কিলার হিট’ এ ক্ষেত্রেও হতাশ করেছে। চিত্রনাট্য এড়িয়েছে একেবারেই সাদামাটাভাবে।

‘কিলার হিট’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

সিনেমায় ঘুষ দেওয়াসহ এমন কিছু ব্যাপার দেখানো হয়েছে, যা বাংলা সিনেমাতেই বেশি ভালো মানিয়ে যায়। বেসরকারি গোয়েন্দা নিক যেভাবে ‘চাহিবা মাত্র’ সব পেয়ে যাচ্ছিলেন, তা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। একইভাবে নিকের যে মূল শক্র, তিনি ঠিক সেভাবে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেননি। বুঝতেই পারছিলেন, নিক তাঁর মুখোশ উন্মোচনে আদাজল খেয়ে নেমেছেন। তারপরও তাঁর ভূমিকা ছিল অনেকটা নীরব দর্শকের মতো।

সব রহস্য সমাধান শেষে নিক ফেরার বিমান ধরেন কিন্তু তাঁর মনের মধ্যে থেকে যায় খচখচানি। কোথাও কি কিছু মিলল না? এরপর উড়োজাহাজ থেকে নেমে তিনি যে মোক্ষম চালটা দেন, সেটাও অনুমানযোগ্য। সিনেমার শেষে পরিবারের জন্য নিকের মনে যে অনুশোচনা তৈরি হয়, সেটাও কোথায় গিয়ে কৃত্রিম মনে হয়।

‘কিলার হিট’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

এই সিনেমার ভালো দিক বলতে গেলে লোকেশনের কথা প্রথম বলতে হয়। গ্রীষ্মে ইউরোপের দ্বীপগুলো হয়ে ওঠে অপূর্ব, সিনেমায় দেখানো গ্রিসের এ দ্বীপও ব্যতিক্রম নয়। প্রায় পুরো সিনেমাটির শুটিং হয়েছে দ্বীপটিতে, যা আপনার চোখের আরাম দেবে।
জোসেফ গর্ডন-লেভিট, শেইলিন উডলি, রিচার্ড ম্যাডেন—এ সিনেমায় তাঁদের কাজ গড়পড়তা। তাঁদের এর চেয়ে অনেক ভালো কাজ দেখা আছে দর্শকের। এ সিনেমায় ছাপ রাখার মতো কিছুই করেননি তাঁরা।

আরও পড়ুন

জো নেসবোর গল্প ‘দ্য জেলাসি ম্যান’–এ হিংসার আগুন কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেটা দেখা হয়েছিল, সিনেমাটিতে সেটা আর ফুটে উঠল কই?