সিরিয়াল কিলার যখন ভূতের চেয়ে ভয়ংকর
ঘুঘু ধরার ফাঁদ হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এক পাগল পাগল চেহারার লোক। আউলাঝাউলা চুল, অপরিষ্কার পোশাক, কাঁধে একটা ঝোলার মতো ব্যাগ। এই সাধারণ চেহারার আড়ালে কল্পনাই করা যায় না লোকটার আসল পেশা।
তার নাম মোজাফফর গায়েন ওরফে মজু। আদপে সে একজন ভয়ংকর খুনি। ঠান্ডা মাথায়, নির্মমভাবে সে খুন করে একের পর এক মানুষকে। কিন্তু প্রতিটি খুনের পরই সে শখের বশে দুটি কাজ করে। প্রথমটি হচ্ছে, চালের রুটি দিয়ে হাঁসের সালুন খাওয়া। তবে দ্বিতীয় শখটি খুনের চেয়েও ভয়ংকর। ভয়ংকর সেই শখকে সে ‘ঘুঘু ধরা’ বলে।
একবার প্রভাবশালী এক ব্যক্তিকে খুন করতে যায় মজু মিয়া, কিন্তু সবকিছু সেখানে পরিকল্পনামতো হয় না। পালাতে গিয়ে মজু মিয়া এমন এক জায়গায় আশ্রয় নেয়, যেখানে সবকিছু অচেনা লাগে তার।
কিন্তু এ অচেনা জায়গাতেও সে দেখা পায় কিছু পরিচিত মানুষের। কী ঘটতে থাকে এরপর? ঘুঘু ধরতে ধরতে মজু মিয়া কি নিজেই কি আটকে যায় কোনো ফাঁদে?
একনজরে
সিরিজ: ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’
পর্ব: ‘হাঁসের সালুন’
জনরা: হরর
পরিচালক: কাজী আসাদ
গল্প: শরীফুল হাসান
অভিনয়: মোশাররফ করিম, নিদ্রা নেহা, শিল্পী সরকার অপু, সালাহউদ্দিন লাভলু
জানতে হলে দেখুন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির অ্যানথোলজি সিরিজ ‘আধুনিক ভাতের হোটেল’-এর শেষ পর্ব ‘হাঁসের সালুন’।
শরীফুল হাসানের ‘হাঁসের সালুন’ একটি দারুণ গল্প। রোমাঞ্চকর গল্পের ভয় যে ভূতের ভয়কেও হার মানায়, তা এই পর্ব না দেখলে বোঝা যেত না। প্রথম দিকে ভৌতিক কোনো ঘটনা না থাকলেও গল্পের ভঙ্গিতে গায়ে কাঁটা দিয়েছে বারবার।
মজু মিয়ার চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। পাগল পাগল চেহারার ধূর্ত দৃষ্টির মজু মিয়াকে মোশাররফ করিম ছাড়া অন্য কোনো অভিনেতা এভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন কি না, বলা মুশকিল। সহজ, গ্রাম্য ভাষায় তাঁর হাস্যরসাত্মক সংলাপ শুনে বোঝার উপায় থাকে না এই লোক কিছুক্ষণ পর কী করতে চলেছেন। চরিত্রের সঙ্গে তিনি এত সুন্দরভাবে মিশে ছিলেন যে তাঁকে দেখেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল।
তবে ‘হাঁসের সালুন’-এর পার্শ্বচরিত্রদের কথা না বললেই নয়। নিদ্রা নেহা, শিল্পী সরকার অপু, সালাহউদ্দিন লাভলু—প্রত্যেকেই তাঁদের চরিত্র অনুযায়ী অসাধারণ অভিনয় করেছেন।
নিদ্রা নেহা ও মোশাররফ করিমের কথোপকথনের দৃশ্যটা পুরো গল্পকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে। তাঁদের কথোপকথন এবং ‘দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা’ গানটা যেন ‘চেরি অন দ্য টপ’। শুরুতেই ভয় ছড়িয়ে গল্প শুরুর পর দৃশ্যটি যখন আসে, দর্শক যখন টান টানভাবে দেখতে বসে, যেন নিশ্বাস ফেলার জায়গা দেয়। একটু আরাম করে যেন তারা দেখতে পারে পরের অংশটুকু।
‘আধুনিক বাংলা হোটেল’-এর প্রথম পর্ব ‘বোয়াল মাছের ঝোল’ দিয়েই মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন নতুন নির্মাতা কাজী আসাদ। ‘খাসির পায়া’ একটু দুর্বল হয়েছে ঠিকই, তবে শেষপাতে; অর্থাৎ ‘হাঁসের সালুন’-এ তা অনেকটাই পুষিয়ে দিয়েছেন তিনি। ‘হাঁসের সালুন’–এ নির্মাতা আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন গ্রামের পটভূমিতে। সিরিয়াল
কিলিংয়ের রোমাঞ্চকর গল্পের মধ্যেও গ্রামীণ দৃশ্য যেন আরাম দিচ্ছিল চোখে। পুষ্প ও মজু মিয়ার কথোপকথনের সময় রংবেরঙের কাপড়ের যে দৃশ্য, সেটি চোখে লেগে থাকে। আবার মাটির চুলার রান্না, কিংবা গ্রাম্য পরিবেশে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক প্রচার, সভা, মিটিং—এসব তিনি যত্ন দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। আবার গল্পের মধ্যে ভুলে যাননি হাস্যরসাত্মক সংলাপ ঢোকাতে৷ তাই রোমাঞ্চের মধ্যেও দর্শকেরা একটু জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন।
নির্মাতা শেষ দিকে যে টুইস্ট রেখেছিলেন, তা একদম গল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধরতে পারা যায় না। তবে ভূতের গল্প দেখতে বসে ভূতের ভয়টাই কোথাও যেন একটু কম লাগল! যদি গল্প, নির্মাণ, লোকেশন, কাস্ট—এসব নিয়ে নির্মাতা কথা বলার সুযোগ দেননি, তাই ভৌতিক আবহ কম থাকলেও খেতে ‘হাঁসের সালুন’ ভালোই লেগেছে।