দরজির কাজ করে মা সংসার চালিয়েছেন, জীবনের প্রথম পুরস্কার পেয়ে আপ্লুত অভিনেতা সেন্টু
‘আমার মা একটি সেলাই মেশিন দিয়ে দরজির কাজ করে আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে আসেন...।’ কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতে বললেন নবীন অভিনেতা আবদুল্লাহ আল সেন্টু। চ্যানেল আই ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২২-এর বেস্ট রাইজিং স্টার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন এই অভিনেতা। শনিবার রাতে চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বরে আয়োজিত আইসিটি ডিভিশন প্রেজেন্টস অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পুরস্কার গ্রহণকালে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। আরও ছিলেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, চ্যানেল আইয়ের আরেক পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুনসহ অনেকে। পুরস্কার গ্রহণ করতে গিয়ে মা ও মামিকে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন সেন্টু।
অভিনয় করে প্রথম পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল সেন্টু বলেন, ‘আমি গর্বিত এমন একজন মা পেয়ে। বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মা একটি সেলাই মেশিন দিয়ে আমাকে এ পর্যন্ত এনেছে। গ্রামের অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু মা আমার এগিয়ে চলায় সহযোগিতা করেছেন। আমার এই পুরস্কারটি আমার মা ও আমাদের কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকা সকলের জন্য উৎসর্গ করলাম। পরিচালক, সহকর্মীসহ আমাকে যাঁরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। বিশেষ ধন্যবাদ জানাই আইসিটি ডিভিশন এবং চ্যানেল আইকে। আমাকে ঘৃণা করা ও ভালোবাসা দুই পক্ষের কাছেই চিরকৃতজ্ঞ। ভালো কাজ করে যেতে চাই, ভালো মানুষ হতে চাই।’
অভিনয় না জেনেই শৈশবে নাট্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার জিতেছিলেন। সবার প্রেরণায় একসময় অভিনয় শুরু করেন আবদুল্লাহ আল সেন্টু। কিন্তু বারবার হোঁচট খেতে থাকেন। এর মধ্যেই সাফল্য হয়ে ধরা দেয় ‘বাংকার বয়’, ‘শুক্লপক্ষ’, ‘কারাগার’সহ একাধিক কাজ। এবারই প্রথম তিনি নিজের কাজের জন্য সম্মানিত হলেন। বাংলাদেশের প্রথম স্পিন-অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’–এর প্রধান চরিত্র অ্যালেন স্বপনের ছেলের জাদু চরিত্রে অভিনয় করে সাড়া ফেলেছেন সেন্টু। স্ক্রিন টাইম কম হলেও এতেই দর্শকদের মুগ্ধ করেছে জাদু চরিত্রটি।
প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেন্টু বলেছেন, ‘প্রথম দিকে পরিবার থেকে বলত। আমি বড় ছেলে। বাবা মারা গিয়েছেন। ছোট বোন আছে। মা দরজির কাজ করে যা পেতেন, তা–ই দিয়ে আমাদের সংসার চলত। মা চাইতেন সংসারে একটু সাহায্য করি। তখন গ্রামের মানুষও মাকে নানা রকম উল্টাপাল্টা বোঝাত।
আমিও মাকে বোঝাতাম—তোমার দরজির কাজ আর আমার অভিনয়ের টুকটাক আয়ের টাকা দিয়ে ডালভাত খেয়ে চলতে পারব। আমি তো চুরি, বাটপারি, মানুষ ঠকানো, দুই নম্বরি করে আয় করছি না। তখন মা সায় দিতেন। আমাদের কাছে মনে হয় সুখে থাকার জন্য বেশি কিছু দরকার নেই। গ্রামের কেউ কেউ মাকে উল্টাপাল্টা বোঝানোর চেষ্টা করতেন। তাঁরা বলতেন, সেন্টু কালো, খাটো। ও মিডিয়ায় কিছু করতে পারবে না। খামাখা জীবনটা নষ্ট করবে। এসব কথা শুনে অনেক কষ্ট লাগত। মানুষের অবহেলাই আমাকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমার মধ্যে জেদ কাজ করত, আমি কেন পারব না।’