খেতে কেমন হলো ‘বোয়াল মাছের ঝোল’
বোয়ালিয়া গ্রাম বিখ্যাত বোয়াল মাছের জন্য। সেখানে নাকি মানুষের সাইজের মাছ পাওয়া যায়! এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সেই গ্রামে বেড়াতে আসেন তাঁর প্রাক্তন ছাত্র আজিজের বাড়িতে। আজিজের মায়ের হাতের বোয়াল মাছের ঝোল খাওয়ার খুব ইচ্ছা তাঁর। সারা রাত ধরে ভূতের গল্প শুনে শুনে বড়শি দিয়ে মাছ ধরবেন।
একনজরে
সিরিজ: আধুনিক বাংলা হোটেল
পর্ব: বোয়াল মাছের ঝোল
জনরা: হরর
পরিচালক: কাজী আসাদ
গল্প: শরীফুল হাসান
অভিনয়: মোশাররফ করিম, গাজী রাকায়েত
পূর্ণিমা রাত! বোয়াল মাছের ঝোল দিয়ে রাতে ভাত খেয়ে ছাত্রের সঙ্গে মাছ ধরতে বসেন তিনি। দিঘির পাড়ে দুজন বসে বড়শিতে টোপ দেন। তারপর আজিজ বলা শুরু করেন গল্প বলা। তাঁর গ্রামের গল্প। যে গল্প কেউ শোনেনি আগে! এ গ্রামের মানুষ মারা গিয়েও মারা যায় না। তিন দিন পরেই বেঁচে ওঠে। কী হয় তাঁদের সঙ্গে? কেমন করে তাঁরা ফিরে আসে? গল্প শুনতে শুনতে আজিজের শিক্ষকও কি ভূতের কবলে পড়েন? টান টান গল্পে এভাবেই এগিয়ে যায় ‘বোয়াল মাছের ঝোল’-এর কাহিনি।
‘বোয়াল মাছের ঝোল’–এর মূল দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম ও গাজী রাকায়েত। অ্যান্থলজি সিরিজে মোশাররফ করিমকে আগে কখনো দেখা যায়নি, অভিষেকটাই হলো মনে রাখার মতো।
প্রধান চরিত্রে মোশাররফ করিম দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তিনি যেভাবে তাঁর ছোট ছোট সংলাপের মধ্য দিয়েই ভয় ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন, তা একমাত্র তাঁর মতো শক্তিশালী অভিনেতার পক্ষেই সম্ভব। শিক্ষকের চরিত্রে গাজী রাকায়েতের অভিনয় ছিল নিখুঁত। তিনি যখন মাঝির সঙ্গে কথা বলেন কিংবা গ্রামের স্মৃতিচারণা করেন, তা যে কাউকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে শিকড়ে।
‘বোয়াল মাছের ঝোল’ পরিচালনা করেছেন কাজী আসাদ। পরিচালক হিসেবে এটি তাঁর প্রথম কাজ। আর প্রথম কাজেই তিনি বাজিমাত করেছেন বলা যায়। চিত্রনাট্য, লোকেশন, নির্মাণ, অভিনয়—সবকিছুতেই যত্নের ছাপ ছিল স্পষ্ট। তবে এই পর্বের সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে আলাদাভাবে কথা বলতেই হয়। নির্মাতা ওয়াইড লং শটে গ্রামবাংলার ক্যানভাস যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা অসাধারণ।
বাস থেকে নামার পর বিশাল গাছের নিচের সেই গ্রামীণ পটভূমি কিংবা নৌকায় চড়ার সময় মেঘের ভেতর সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ার সে দৃশ্য চোখে লেগে থাকে। গাছটিকে তো গল্পের একটা চরিত্রই মনে হচ্ছিল।
পূর্ণিমা রাতে দিঘির পাড়ে বসে গল্প করার সে দৃশ্য দেখে পরাবাস্তব মনে হয়। যদিও রাতের দৃশ্যটিতে ভিএফএক্স ব্যবহার করা হয়েছে। তবু কাজটা এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে মনে হয়, এখনই যদি সেখানে ছুটে যাওয়া যেত!
‘বোয়াল মাছের ঝোল’–এর গল্পে নির্মাতা কোনো তাড়াহুড়া করতে চাননি। বরং ধীরে ধীরে চরিত্র নির্মাণ করে তিনি দর্শককে টেনে নিয়ে গেছেন মূল গল্পের দিকে। ‘বোয়াল মাছের ঝোল’ ভূতের গল্প হলেও হুটহাট ভৌতিক সাউন্ড ব্যবহার বা জাম্পস্কেয়ার ব্যবহার না করে এখানে ভয় দেখানো হয়নি। নির্মাতা বরং মনোযোগ দিয়েছেন সংলাপে। ‘আমি এই গ্রামেরই ছওয়াল না, আমার একটা দায়িত্ব আছে না’, মোশাররফ করিমের কণ্ঠে এমন আরও কয়েকটি সংলাপ দেখার পরও মনে থেকে যাবে।
নির্মাতা সিরিজের এই পর্বে সৃষ্টি করেছেন এমন এক ভৌতিক আবহ, যেখানে গল্প আর পারিপার্শ্বিক পরিবেশই আপনাকে নিয়ে যাবে পরিণতির দিকে। এই সিরিজ কিন্তু দ্রুতগতির নয়, নির্মাতা বরং আরাম করে একটা গল্প বলতে চেয়েছেন।
শেষ পাতে বগা তালেবের কণ্ঠে ‘আমারে বুইঝো না ভুল’ গানটা যেন সে পরিবেশটাকেই পূর্ণতা এনে দেয়। গানটা নির্মাতা আসাদেরই লেখা।
৪০ মিনিটের ‘বোয়াল মাছের ঝোল’ মোটাদাগে ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো সিরিজ নয়, নির্মাতার উদ্দেশ্যও সম্ভবত সেটা ছিল না। হেমন্তের নরম রোদের মতোই তিনি হাজির করেছেন ‘ফিল গুড’ একটা কনটেন্ট। ‘একবার হলো কী’ বলে আগে বয়োজ্যেষ্ঠরা বলতেন নানা কিছিমের ভূতের গল্প। এগুলোর কোনটিতে ভয় কিছুটা কম থাকলেও গল্প হিসেবে ছিল দারুণ। ‘বোয়াল মাছের ঝোল’ তেমনই একটা কনটেন্ট। তবে এখানে ভূতের মেকআপ আরও একটু ভালো হতেই পারত। সব মিলিয়ে ‘বোয়াল মাছের ঝোল’ খেতে মন্দ না।
হ্যালোইনের রাতে মুক্তি পেয়েছে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির অরিজিনাল সিরিজ ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’-এর প্রথম পর্ব ‘বোয়াল মাছের ঝোল’। সিরিজটি তিন পর্বের। বাকি দুই পর্ব ‘খাসির পায়া’ ও ‘হাঁসের সালুন’। মুক্তি পাবে পরের দুই সপ্তাহে।