হাসিব সাহেবের ‘সংসার-শিক্ষা’
সংসার সামলানোর দায়িত্ব যে মা ও বাবা দুজনেরই, সে কথা অনেক বাবাই ভুলে যান। এই যেমন বলা যায় হাসিব সাহেবের কথা। তাঁর কাছে অফিসই সব। সন্তানকে সময় দেওয়া বলে কোনো কিছু অন্তত হাসিবের অভিধানে নেই। হাসিব হলেন সেই ধরনের মানুষ, যাঁরা অফিসের কাজ ছাড়া বাকি সবকিছুকেই সময় নষ্ট বলে মনে করেন। সংসার সামলানো তাঁর কাছে আহামরি কোনো বিষয় নয়। এই হাসিব ঘটনাচক্রে একদিন হাজির হলেন অফিস সহকর্মীর বাসায়। মূল উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ফাইলের সন্ধান করা। কিন্তু সেখানে এমন কিছু ঘটল, যা সংসার নিয়ে হাসিবের জীবনদর্শনই বদলে দিল। তিনি বুঝতে পারলেন সংসার সামলানো ঠিক কতটা কঠিন। হাসিবের এই ‘সংসার–শিক্ষা’র পেছনে আছে একদল বাচ্চাকাচ্চা। যারা হাসিবকে বুঝিয়ে দেয় সংসার সামলানো কতটা কঠিন।
সংসারে প্রতিদিনের ঝুট-ঝামেলার এমন গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে চরকি ফ্লিক ‘সংসার আনলিমিটেড’। চরকির জন্য পরিচালক আবু হায়াত মাহমুদের প্রথম কাজ এটি। গতকাল রাত আটটায় মুক্তি পেয়েছে ‘সংসার আনলিমিটেড’। এই চরকি ফ্লিকটি কমেডি ঘরানার। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইরেশ যাকের। এ ছাড়া আছেন মৌসুমী হামিদ, সায়রা জাহান, মীর রাব্বির পাশাপাশি কয়েকজন শিশুশিল্পী।
গল্পের বিষয়বস্তুর সঙ্গে ‘সংসার আনলিমিটেড’ ইরেশকে টেনেছে গল্প বলার ধরনের জন্য। তিনি বলেন, ‘গল্পের বিষয়টা খুব মজার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এ রকম গল্প আরও অনেক হয়েছে। তবে মজা করে গল্প বলাটা খুব জরুরি। সহশিল্পী হিসেবে যাঁরা ছিলেন (মৌসুমী, রাব্বি, সায়রা), তাঁরা খুব কাছের মানুষ। তবে এ কাজ করতে গিয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি শিশুশিল্পীদের দেখে।’
শিশুশিল্পীদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে একটা উদাহরণ দিলেন অভিনেতা, ‘শুটিংয়ের সময় আমার মেয়ে হাসপাতালে ছিল। সে সময় অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছিল। সেটে আমার সঙ্গে তিনজন বাচ্চা অভিনয় করেছে। ওদের মধ্যে মুমতাহিনাকে দেখলাম প্রথম দিকে কোনো কথাই বলছে না। একটি দৃশ্যে ওকে কান্নার অভিনয় করতে হবে। কিন্তু সে একেবারে নির্লিপ্ত। কারও কোনো কথা শুনতে পাচ্ছে কি না বোঝা যাচ্ছিল না। তবে পরিচালক যে–ই অ্যাকশন বলল, ও এত ভালো, এত প্রাণবন্ত অভিনয় করল সবাই অবাক হয়ে দেখলাম। পরে বুঝলাম সে আসলে আমাদের অনেকের চেয়ে অভিজ্ঞ শিল্পী। দেশের চৌকস শিল্পীদের একজন।’
‘সংসার আনলিমিটেড’-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে মৌসুমী হামিদকে। চরকিতে এই প্রথম দেখা যাবে তাঁকে। তবে চেনা মানুষদের সঙ্গে কাজ হওয়ায় কোনো বেগ পেতে হয়নি অভিনেত্রীকে, ‘চরকির সঙ্গে প্রথম কাজ হলেও পুরো টিম মানে রনি ভাইসহ সবাই এত কাছের যে কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা মনে হয়নি।’ ‘সংসার আনলিমিটেড’-এ অল্প সময়ের উপস্থিতি হলেও মৌসুমী জানালেন তাঁর অভিনীত চরিত্রটি ‘ভীষণ ইন্টারেস্টিং’।
সব মিলিয়ে অভিনেত্রী জানালেন দারুণ একটা টিম পাওয়ায় কাজটি করে নিজের ভালো লাগার কথা। মৌসুমী বলেন, ‘মাসুম ভাই খুব মজা করে গল্পটা লিখেছেন। পরিচালক হায়াত ভাইয়ের সঙ্গেও আগে অনেক কাজ হয়েছে। তিনি খুব শান্ত, সৃজনশীল মানুষ। চিত্রগ্রাহক রাজু রাজ ভাইয়ের কথাও বিশেষভাবে বলতে চাই। অন্য সহশিল্পীরাও খুব কাছের মানুষ। কেবল রাব্বি ভাইয়ের সঙ্গে এই প্রথম স্ক্রিন শেয়ার করলাম। সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে।’
মৌসুমী হামিদের মতো ‘সংসার আনলিমিটেড’ দিয়ে চরকির সঙ্গে প্রথমবার কাজ করলেন মীর রাব্বিও। কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘চরকির সঙ্গে কাজ করার একটা ইচ্ছা ছিল। ফাইনালি সেটা হলো। আশা করি একসঙ্গে আরও কাজ হবে। এই গল্পটা একটু অন্য রকম। আমাদের প্রতিদিনের চেনা জীবনের সিরিয়াস কিছু বিষয় ও সেগুলোর ভেতরের বোধগুলো সুন্দর করে বিদ্রূপাত্মকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটা সুন্দর একটি পারিবারিক গল্প।’
সংসার আনলিমিটেড-এর আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ অভিনয়শিল্পী সায়রা জাহান। কাজটি করতে গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানালেন, ‘আমাদের প্রতিটা পরিবারের গল্পই ‘সংসার আনলিমিটেড’। কাজটা করতে গিয়ে গৃহিণীদের প্রতি সম্মান আরও বেড়ে গেছে। মনে হয় দেখার পর দর্শকেরাও আমার সঙ্গে একমত হবেন।’
পরিচালক আবু হায়াত মাহমুদ জানালেন, ‘আমাদের দেখা প্রতিদিনের গল্প নিয়েই ‘সংসার আনলিমিটেড’। তবে চেনা গল্প হলেও বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি কাজ হয় না।’ পরিচালক বলেন, ‘আমাদের উপমহাদেশে এ ধরনের গল্প খুব একটা বলা হয় না। চেষ্টা করেছি গল্পটা দর্শকদের কাছে সুন্দর করে তুলে ধরতে। এখন দর্শক কীভাবে নেবেন, সেটা তাঁদের বিষয়। আমাদের পুরো টিম কয়েক দিন ধরে নিজ নিজ জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। সবাইকে অনুরোধ করব, কাজটা দেখুন।’