‘চারুলতা’ থেকে ‘মালতী’: কায়রোতে দেখা মিলল তাদের
অভিনেত্রী মাধবী মুখার্জির সেই সরল দৃষ্টি সিনেমাপ্রেমীদের আবারও মনে করিয়ে দিল, সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ আজও কতটা প্রাসঙ্গিক। অন্যদিকে শঙ্খ দাশগুপ্তর ‘প্রিয় মালতী’তে মালতী রানীর শূন্য চাহনি কিছু সময়ের জন্য স্থবির করে দিয়েছিল দর্শককে। অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর বিষাদময় অশ্রু প্রভাবিত করে ভিনদেশি দর্শকদেরও।
বলছি ৪৫তম কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের কথা। আরব বিশ্ব ও আফ্রিকা মহাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবে এ বছর প্রদর্শিত হয়েছে চারটি বাংলা চলচ্চিত্র। এর মধ্যে কায়রো ক্ল্যাসিকস বিভাগে রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের তিনটি ও ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন বিভাগে জায়গা করে নিয়েছে শঙ্খ দাশগুপ্ত পরিচালিত ‘প্রিয় মালতী’।
১৪ নভেম্বর মিসরের কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শঙ্খ দাশগুপ্ত পরিচালিত ও মেহজাবীন চৌধুরী অভিনীত ‘প্রিয় মালতী’ ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। এরপর আরও বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় ছবিটির। ছবির প্রদর্শনী শেষে দর্শকের চোখে ফুটে ওঠে মালতীর বেদনা। যেন ‘প্রিয় মালতী’র মালতী রানীর কষ্টগুলো ছুয়ে গেছে তাদেরও। মেহজাবীন চৌধুরীর অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসাও করেন অনেকে। ভিনদেশি দর্শক থেকে শুরু করে প্রবাসী বাংলাদেশি—মালতী যেন সবার পরিচিত!
এই চলচ্চিত্রে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর চরিত্র অভিনয় করেছেন মেহজাবীন। এখনো ছবির গল্পের ব্যাপারে কোনো আঁচ এর নির্মাতা, শিল্পী ও প্রযোজক—কেউই দিতে নারাজ। তবে যাদেরই সৌভাগ্য হয়েছে কায়রো উৎসবে বসে ‘প্রিয় মালতী’ ছবির দেখার, তাদেরই বয়ান ছিল—অদ্ভুত মায়া, বিষাদ আর অস্থির বাস্তবতার মোড়কে জড়ানো এই ছবি তুলে ধরে এই সময়ের চিত্র। মালতী হয়ে ওঠে এই সময়ের প্রতিনিধি। মালতীর দীর্ঘশ্বাস, মালতীর হাহাকার, মালতীর অসহায়ত্ব—শুধু বাংলার নয়, এটা যে সর্বজনীন, তা বোঝা যায় উৎসবে ছবিটি বেরিয়ে আসা দর্শকদের অভিব্যক্তিতে। মালতীর প্রতিটি বেদনাই যেন সুনিপুণভাবে ছুঁয়ে গেছে ভিনদেশি সিনেমাপ্রেমীদের।
এই একই উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে বাংলার কালজয়ী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের তিনটি চলচ্চিত্র—‘চারুলতা’, ‘মহানগর’ ও ‘নায়ক’। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ‘কায়রো ক্ল্যাসিকস’ বিভাগে চলচ্চিত্রগুলো প্রদর্শিত হয়েছে।
কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বাঙালিদের এই পদচারণ নতুন কিছু নয়। এর আগে এই উৎসবেরই প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশ নিয়েছিল তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’। এরপর মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’ও এই আসরেই প্রদর্শিত হয়। আর এবার ‘প্রিয় মালতী’ লড়াই করেছে প্রতিযোগিতা বিভাগে। বাংলা চলচ্চিত্রকে আরও একবার বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরল এই ছবি।
কায়রোর যাত্রা শেষ হতে না হতেই ‘প্রিয় মালতী’র গন্তব্য ভারতের গোয়ায়। আফ্রিকার অন্যতম প্রাচীন চলচ্চিত্র উৎসব শেষ করে ছবিটি এশিয়ার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী উৎসবে আলো ছড়াচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ইন্ডিয়ার ৫৫তম আসরে ফ্রেম পার সেকেন্ড ও চরকির সহপ্রযোজনার এই ছবি ‘সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ বিভাগে লড়াই করছে। কায়রো, গোয়ার পর ‘প্রিয় মালতী’ বাংলা চলচ্চিত্রকে আরও কতটা বড় পরিসরে তোলে, এখন তা–ই দেখার অপেক্ষা। সেই সঙ্গে অপেক্ষা দেশের প্রেক্ষাগৃহে এই সিনেমা দেখার। মালতীর অনুভূতিগুলো দেশের দর্শকদেরও ছুঁয়ে যাক—এ শুভকামনাই থাকল ‘প্রিয় মালতী’র জন্য।