কারিনা দেখিয়ে দিয়েছেন

রুপালি পর্দার তারকা মানেই জিরো ফিগার, প্রচলিত এই ধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন অনেক তারকা। ওজন নিয়ে নারীদের নানা বিড়ম্বনার গল্পও উঠেছে এসেছে সিনেমায়। সম্প্রতি চরকিতে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ৩৬-২৪-৩৬-এর একটি। রেজাউর রহমানের এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন কারিনা কায়সার, ছবির চিত্রনাট্য দলেও ছিলেন তিনি। ওজন নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত জীবনেও নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। লিখেছেন সৌমেন্দ্র গোস্বামী

কারিনা কায়সারচরকির সৌজন্যে

ভিডিও ক্যাসেটের ব্যবসা প্রেম প্রকাশের। মা–বাবা তাঁর বিয়ে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় করছেন। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে পাত্রী দেখতে গিয়ে হতাশ হয় সে। বাড়ি ফিরে সবাই যখন মেয়ের প্রশংসা করে, তখন প্রেম বিরক্ত হয়। মেয়ে পছন্দ হয়েছে কি না প্রশ্ন উঠলেই প্রেম বলে ‘মেয়ের ওজন বেশি’; এই সম্বন্ধ করতে সে রাজি নয়। হিন্দি সিনেমা দাম লাগাকে হেইসার এই গল্প অনেকেরই জানা। প্রেম প্রকাশ চরিত্রে আয়ুষ্মান খুরানা ও কনের চরিত্রে ভূমি পেড়নেকর অভিনয় করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা ফাটাফাটি মুক্তি পায় ২০২৩ সালে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত পরিবারে বাড়ির সব দায়িত্ব থাকে একজনের কাঁধে। যেটি ক্রমেই গল্পে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তা হচ্ছে, ফুল্লরা ভাদুড়ির ওজন। বেশি ওজনের কারণে তাকে কথা শুনতে হয়।

কারিনা কায়সার
চরকির সৌজন্যে

স্বামী যদিও যথেষ্ট সাহায্য করে ফুল্লরাকে, কিন্তু মানুষের করা টীপ্পনি, ছুড়ে দেওয়া নানা প্রশ্ন মেনে নিতে পারে না ফুল্লরা। সে যেমন, তেমনভাবেই সফল হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিতে চায়। সিনেমাটিতে ‘বাচস্পতি ভাদুড়ি’র চরিত্রে আবীর চট্টোপাধ্যায় এবং ‘ফুল্লরা’ চরিত্রে দেখা গেছে ঋতাভরী চক্রবর্তীকে।

সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ঢাকাই সিনেমা ৩৬-২৪-৩৬। এতে প্রধান চরিত্র সায়রা। নিজের পরিচয় তাঁকে এভাবে বলতে শোনা যায়, ‘আমি সায়রা বিনতে সাহের, হাইট: ফাইভ-নাইন, এজ-২৬, ওয়েট-প্লাস মাইনাস ওয়ান টোয়েন্টি কেজি।’ বাড়তি ওজন নিয়ে অনেক বাঁকা চাহনি সহ্য করতে হয় তাকে। কিন্তু এসব পাত্তা দেয় না সে। কিন্তু বিপত্তি হয় তাহসিরের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর। ফোনে কথা বলতে বলতে দুজনের প্রেম। সামনাসামনি প্রথম যেদিন দেখা হয়, সেদিনও সব ঠিক ছিল। কিন্তু পরদিন থেকে তাহসির সায়রার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।চার বছর পর গল্প অন্যদিকে মোড় নেয়। বিয়ের একটা ইভেন্ট করতে গিয়ে তাহসিরকে দেখে সায়রা। দেখা হয় নিরবের সঙ্গেও। তাহসিরের সঙ্গে বন্ধুত্বের গল্প বলতে গিয়ে ভিডিও বার্তায় নিরব বলে, ‘আমি হইলাম তাহসিরের ন্যাংটাকালের বন্ধু…আমি যদি ওরে না বাঁচাইতাম, তাহলে আজকে ওর বিয়ে হইতো ওই মোটকা ওয়েডিং প্ল্যানারের সঙ্গে। তখন কী হইতো—তাহসির উইথ মোটকা সাইরা।’

কারিনা কায়সার
চরকির সৌজন্যে

কথাটা শুনে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সায়রা চলে আসে। ৩৬-২৪-৩৬-এ ‘সায়রা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন কারিনা কায়সার। এ ছবি দিয়েই জনপ্রিয় এই কনটেন্ট ক্রিয়েটরের অভিনয়ে অভিষেক হলো। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই গায়ের রং, ওজন নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়। সমাজের বিচারে আমরা হয়তো তথাকথিত পারফেক্ট নই। এই নিরাপত্তাহীনতা নিয়েই আমরা বড় হই। মানুষটা দেখতে কেমন, সেটাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু তাঁর কী প্রতিভা আছে, এগুলো সেভাবে পাত্তা পায় না।’ কারিনা বলেন, সবাই সবার মতো করেই সুন্দর, এই বার্তাই তাঁরা সিনেমায় দিতে চেয়েছেন।ঢাকাই সিনেমায় এসব বিষয় আগে সেভাবে উঠে আসেনি। কারিনার পর্যবেক্ষণ, আগে টিভি নাটক বা সিনেমায় ধূসর রঙের বা ওজন বেশি, এমন চরিত্র থাকলেও সে ধরনের অভিনয়শিল্পী নেওয়া হতো না। বরং মেকআপ দিয়ে পরিচিত তারকাদের দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া হতো। এই আক্ষেপ তাঁরও ছিল।

কারিনা কায়সার
চরকির সৌজন্যে

‘এই সিনেমা মুক্তির পর এত নারী মেসেজ করেছেন, মনে হয়েছে আমরা তাঁদের গল্প বলতে পেরেছি। দর্শকেরা তাঁদের গায়ের রং আর ওজন নিয়ে যেসব অভিজ্ঞতা লিখেছেন, পড়ে আমিও আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম,’ বলেন কারিনা। ৩৬-২৪-৩৬ সিনেমায় ঘুরেফিরে এসেছে সৌন্দর্যের পরিমাপক বা ‘বিউটি স্ট্যান্ডার্ড’ প্রসঙ্গ। দর্শকের মতে, কারিনা দেখিয়ে দিয়েছেন। হাস্যরসের মাধ্যমে সহজে প্রমাণ করেছেন, যা তিনি বলতে চেয়েছেন।

‘৩৬-২৪-৩৬’–এর দৃশ্য। চরকির সৌজন্যে

এ প্রসঙ্গে কারিনা বলেন, ‘আমাদের খালা, ফুফি; আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মানুষগুলো কিন্তু একই রকম দেখতে নন। অথচ অনলাইনে সব মেয়েকেই কিন্তু কোনো না কোনোভাবে বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে। কেন সবাই এখনো ধরে রেখেছেন যে সবাইকে দেখতে একই রকম হতে হবে? সোনম কাপুর কিছুদিন আগেই অনুসারীদের বলেছেন, ‘আমাদের যে তোমরা অনুসরণ করো, আমরাও এ রকম দেখতে নই। এটা একটা পুরো টিমের কাজ বলে আমরা এ রকম দেখতে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।’ কারিনা চান, ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও প্রকল্পে কাজ করতে।