ক্যানসার নিরাময়ের ভুয়া দাবি, বিতর্কিত ইনফ্লুয়েন্সারকে নিয়ে সিরিজ

`অ্যাপল সিডার ভিনেগার’-এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারের অভাব নেই। কী খেলে কী হবে, কোন রোগ কিসে সারবে, এমন অনেক কিছুই বলে দেন তাঁরা। এসব ইনফ্লুয়েন্সারের অনেক অনুসারী। যাঁদের কেউ কেউ এসব কথা যাচাই-বাছাই না করেই বিশ্বাস করেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব বিশ্বাস করলে কত বড় বিপদ হতে পারে, সে বার্তা দিতেই নেটফ্লিক্সের নতুন সিরিজ ‘অ্যাপল সিডার ভিনেগার’। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তির পর থেকেই আলোচনায় ছয় পর্বের সিরিজটি।  

বিতর্ক কী নিয়ে
অস্ট্রেলিয়ান ইনফ্লুয়েন্সার বেল গিবসনের নাম অনেকে শুনে থাকবেন। এই তরুণী আলোচনায় আসেন একটি মোবাইল অ্যাপকে কেন্দ্র করে, পরে লেখেন রান্নার বই। অনুসারীদের কাছে বেল পরিচিত ছিলেন ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরু’ হিসেবে। যেকোনো অসুখের বিকল্প চিকিৎসা, স্বাস্থ্যকর খাবারসহ জীবনযাপন নিয়ে পরামর্শ দিতেন তিনি। একবার এই বেল দাবি করেন, তিনি ব্রেন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

`অ্যাপল সিডার ভিনেগার’-এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছিলেন, হাতে মাত্র চার মাস সময়। বেল শুরুতে কেমোথেরাপি নেন, পরে রেডিওথেরাপি; কোনোটিই কাজে আসেনি। পরে প্রাকৃতিক ও বিকল্প ওষুধ গ্রহণ, ডায়েট, ব্যায়ামের মধ্যমে ক্যানসারমুক্তি হয়েছেন। স্বভাবতই অস্ট্রেলিয়াজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। সবাই তাঁর বিকল্প জীবনধারা নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। হাজারো ক্যানসার রোগী তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু ২০১৫ সালের মাঝামাঝি জানা যায়, বেলের সব দাবি ভুয়া। তিনি আসলে প্রতারক। অর্থ আর খ্যাতির লোভে পড়ে এমন সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে মিথ্যা দাবি করেন তিনি। পরে বেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়, করা হয় মোটা অঙ্কের জরিমানা। আলোচিত এ ঘটনা নিয়েই নির্মিত হয়েছে নেটফ্লিক্সের সিরিজটি।

যেভাবে তৈরি হলো সিরিজটি
২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিরিজটির ঘোষণা আসে। শুটিং হয় মেলবোর্নের আশপাশে। গত বছরের ১৯ নভেম্বর মুক্তি পায় প্রথম ট্রেলার, পরেরটি আসে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় সিরিজটি।

`অ্যাপল সিডার ভিনেগার’-এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

বেলের পুরো ঘটনা নিয়ে ‘দ্য ওম্যান হু ফুলড দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামে বই লিখেছেন সাংবাদিক বে ডোনলি ও নিক টসকানো। সে বই থেকেই তৈরি হয়েছে সিরিজটি। ‘অ্যাপল সিডার ভিনেগার’-এর ক্রিয়েটার সামান্থা স্ট্রস, পর্বগুলো পরিচালনা করেছেন জেফ্রি ওয়াকার।

সিরিজটিতে বেল গিবসনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মার্কিন অভিনেত্রী কেইটলিন ডেভার। ২০২১ সালে হুলুর সিরিজ ‘ডোপসিক’ দিয়ে পরিচিতি পান তিনি। সিরিজটির জন্য গোল্ডেন গ্লোব ও এমি পুরস্কার বাগিয়েছিলেন। এমন একটি চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে রোমাঞ্চিত ডেভার। তবে তিনি ভ্যারাইটিকে বলেন, অভিনয়ের চেয়ে বরং অস্ট্রেলিয়ান উচ্চারণ নিয়েই বেশি চিন্তিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সিরিজটি নিয়ে ভ্যারাইটিকে তিনি আরও বলেন, ‘আগে বেল সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। তবে সুস্থতা নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের প্রতি আলাদা আগ্রহ আছে। আমার মা স্তন ক্যানসারে মারা গিয়েছেন। তাঁর জীবনের শেষ তিন বছর খুব কাছ থেকে দেখেছি, এর পর থেকেই জীবনযাপন নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠি। প্রথাগত চিকিৎসা কাজ না করায় আমি বিকল্প নিয়ে ভাবছিলাম, তখনই এ সিরিজের প্রস্তাব আছে। এই সিরিজের চরিত্রগুলো অনেকেরই চেনা মনে হবে। আমিও এমন অনেককে ইনস্টাগ্রামে অনুসরণ করি।’

কী বলছেন সমালোচকেরা
মুক্তির পর থেকে প্রশংসিত হয়েছে ‘অ্যাপল সিডার ভিনেগার’। রটেন টমাটোজে সিরিজটির গড় রেটিং ১০-এ ৭.৫। মেটাক্রিটিকে ১০০-তে সিরিজটির স্কোর ৭১। সমালোচকেরা সিরিজটিতে কেইটলিন ডেভারের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। অনেকের মত, ইনফ্লুয়েনসারদের চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস নয়—এমন বার্তা ভালোভাবেই দিতে পেরেছে সিরিজটি।