এআইয়ের প্রভাব নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে এই সিনেমা
আমাদের জীবন বর্তমানে ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) অনেকটা অজান্তেই আমাদের জীবনে ঢুকে পড়ছে ধীরে ধীরে। পুরো বিশ্ব যখন এ আইয়ের হাতে, তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে সবাই যখন চিন্তিত; তখন নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে পরিচালিত ‘সিটিআরএল’ বা ‘কন্ট্রোল’ সিনেমাটি। ৪ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া এ সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনন্যা পান্ডে ও বিহান সামাত।
একনজরে
সিনেমা: কন্ট্রোল
জনরা: থ্রিলার
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
পরিচালক: বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে
অভিনয়: অনন্যা পান্ডে, বিহান সামাত
‘কন্ট্রোল’ সিনেমার কাহিনি নেলা ও জো জুটির। তাঁরা জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ায় তাঁদের নিউ ইয়ার পার্টি, ছুটিতে ঘোরাঘুরি, একসঙ্গে সময় কাটানোর নানা ভিডিও। সবার চোখে তাঁরা ‘পারফেক্ট কাপল’। কিন্তু নেলার করা একটি লাইভ ভিডিওতে ঘটে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
রাতারাতি অন্যদিকে ঘুরে যায় ঘটনার মোড়। নেলা হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার হাসির পাত্র। তাঁকে নিয়ে সব জায়গায় ট্রল হতে থাকে। এই সময় সে সাহায্য চায় এক এআই বটের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট)। নেলার অজান্তে সে ধীরে ধীরে তার জীবনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া শুরু করে আর ঘটাতে থাকে ভয়ংকর ঘটনা। নেলা কি পারে এই এআই বটকে থামাতে? নাকি হার মানতে হয় তাকে? জানতে হলে দেখতে পারেন ভিন্নধর্মী এ সিনেমা।
লেখক-পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে ‘কন্ট্রোল’ সিনেমাটি একটি ভিন্নধর্মী উপস্থাপনা। সিনেমায় নেলা-জোর প্রেমের রসায়ন ফুটে উঠেছে খুব অল্পই। বরং তাদের গল্প এগিয়ে যায় রিলসে দেখা ভিডিওর মতো করে।
আবার সিনেমার দ্বিতীয় অংশে অপেক্ষা করে থাকে সম্পূর্ণ আলাদা এক গল্পের প্লট। এই অপ্রত্যাশিত টুইস্টই পরে কী হবে, তা জানার জন্য দর্শককে আটকে রাখে। এই গল্পের আড়ালে এই প্রজন্মের মনস্তত্ত্বকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। তবে দুর্দান্ত চিত্রনাট্যের এ সিনেমার পরিচালনা আরেকটু ভালো হতেই পারত। পরিচালক যখন বিক্রম মোতওয়ানে, তখন প্রত্যাশা একটু বেশিই থাকে।
‘খো গায়ে হাম কাহা’, কিংবা ‘কল মি বে’-তে ইতিমধ্যে নজর কেড়েছেন অনন্যা পান্ডে। ‘কন্ট্রোল’ সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন প্রধান চরিত্রে। সেখানে তিনি সাবলীল অভিনয়ে নজর কেড়েছেন সবার।
অনন্যা নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দারুণ সক্রিয়, পর্দায় অভিনেত্রী চরিত্রটির সঙ্গে তাঁর বাস্তব জীবনের অনেক মিল আছে। হয়তো এ কারণেই নির্মাতা তাঁকে এ সিনেমায় নিয়েছেন; অনন্যাও ‘নিজের’ চরিত্রে ভালো করেছেন।
বিহান সামাতের পর্দায় উপস্থিতির সময় কম হলেও তিনি ভালো অভিনয় করেছেন। তবে সিনেমায় চরিত্ররা বিকাশের সুযোগ কম পেয়েছে। চরিত্রদের দীর্ঘ মনোযোগের কারণে মাঝেমধ্যে দেখতে একঘেয়ে লাগে।
সিনেমার আবহসংগীতের কথা না বললেই নয়। গল্পের সঙ্গে মানানসই স্নেহা খানওয়ালকার, অমিত ত্রিবেদী ও যশরাজ মুখতের সাউন্ডট্র্যাক যেমন গতিশীলতা আনে, তেমনি কখনো কখনো ভয়ের শীতল স্রোতও নামিয়ে দেয়। এ ছাড়া বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানে, অবিনাশ সম্পাথ এবং সুমুখী সুরেশ যে ভিন্ন একটি দুনিয়া গল্পের প্রয়োজনে তৈরি করেছেন, তা অনেকটাই নিখুঁত। তাই আমাদের নিজেদের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে কোনো সমস্যাই হয় না। বরং আমাদের ভাবতে বাধ্য করে আমাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে উপস্থিতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব নিয়ে। এখানেই পরিচালকের সার্থকতা।
সিনেমার নাম ‘কন্ট্রোল’ হলেও, সিনেমায় তাই দেখানো হয়েছে যা আমাদের আর নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই হয়তো ‘রেডি স্টেডি কাট’-এর জোনাথন উইলসন রটেন টমেটোজ-এর রিভিউতে লিখেছেন, ‘CTRL এর কিছু বলার আছে, কিন্তু এমন কিছুই যা আপনি আগে শোনেননি।’