আবারও সত্য ঘটনা, আলোচনায় তমা
প্রায় এক যুগের বেশি আগে ‘বলো না তুমি আমার’ দিয়ে বড় পর্দায় তমা মির্জার অভিষেক হয়েছিল। এরপর অনেক সিনেমাতেই অভিনয় করেন তিনি। ২০১৫ সালে শাহনেওয়াজ কাকলী পরিচালিত ‘নদীজন’ সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু গতানুগতিক নায়িকাসুলভ চরিত্র থেকে বের হতে পারছিলেন না।
তারপর বছর দুয়েক আগে চরকি প্রযোজিত ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’তে নিজেকে ভেঙে নতুন করে জন্ম দেন তমা। পরে ‘সাত নম্বর ফ্লোর’ দিয়ে আবারও জ্বলে ওঠেন। সময় যত যাচ্ছে, ক্রমেই যেন জ্বলে উঠছেন তমা মির্জা। নানা রূপে নিজেকে পর্দায় হাজির করছেন। কারও কারও মতে, তমাকে নতুন করে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করেছেন রায়হান রাফী। সেই রাফীর নতুন ওয়েব ফিল্ম ‘ফ্রাইডে’তেও বাজিমাত করেছেন তমা।
মুক্তির আগে টিজার আর ট্রেলার প্রকাশ থেকেই আলোচনায় ছিলেন তমা। অভিনয়ের একঝলকে সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি। আর সম্প্রতি বিঞ্জ অ্যাপে মুক্তির পর থেকে অভিনয়ের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসা পাচ্ছেন। তমাকে এর আগে এ রকম ভয়ংকর এবং ভিন্নধর্মী চরিত্রে দেখা যায়নি। তমাও তা–ই মনে করছেন। এই চলচ্চিত্রে তাঁকে ‘মুনা’ চরিত্রে দেখা গেছে। ‘সুড়ঙ্গ’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে সিলেটে থাকা তমা গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘সত্য ঘটনার এই চরিত্র ফুটিয়ে তোলা ছিল ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। আমি পরিচালকের কাছে কৃতজ্ঞ, তাঁর সহযোগিতা না পেলে এটা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।
ঢাকার কদমতলী এলাকায় ২০২১ সালের জুনে সংঘটিত ‘ট্রিপল মার্ডার’ ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। সেই ঘটনার ছায়া অবলম্বনেই রায়হান রাফী নির্মাণ করলেন ওয়েব ফিল্ম ‘ফ্রাইডে’! রাফি এর আগে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘জানোয়ার’ নামে একটা ওয়েব ফিল্ম বানিয়েছেন। বড় পর্দার দর্শকের জন্য বানিয়েছেন ‘পরাণ’। দুটোই ছিল সত্য ঘটনা অবলম্বনে। এবার বানালেন ‘ফ্রাইডে’। সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি তিনটি চলচ্চিত্রই প্রশংসিত হয়েছে।
তমা জানান, এক বছর আগেই পরিচালকের কাছ থেকে গল্পটি শুনেছেন তিনি। এর পর থেকেই মুনা হওয়ার মিশনে নামেন। পত্রপত্রিকা এবং টেলিভিশনের খবর থেকে যতটা জানতে পেরেছিলেন, সেটাই ছিল সম্বল।
তমা বলেন, ‘পুলিশ, চিকিৎসক, প্রেমিকা কিংবা বউ—এসব চরিত্র আমাদের সবারই কমবেশি চেনা। ওই ধরনের চরিত্র করে আমরা অভ্যস্তও বলা যেতে পারে। কিন্তু যে খুনি চরিত্রে অভিনয় করেছি, এটা তো আমার জন্য একেবারে অচেনা। বাংলাদেশেও এ ধরনের কাজ আগে হয়নি। পরিচালক আমাকে থ্রিলার এবং সাইকোপ্যাথ মুভি দেখার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমি শুনিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে, কল্পনায় কতটা কী করতে পারি, সেটা দেখি। তবে পরিচালক আমাকে কমফোর্ট জোন দিয়েছেন। আর ছবিটির প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ দৃশ্যটা যেমন, আমরা শুটিংও সেভাবে করেছি। এতে চরিত্রের ভেতর ঢুকতেও আমার জন্য সহজ হয়েছে।’
গেল বছরের নভেম্বরে ফ্রাইডের শুটিং শুরু করেন রায়হান রাফী। সাভার শহর থেকে দুই ঘণ্টা গাড়ি চলা দূরত্বে একটি বাড়িতে টানা ১৬ দিন ধরে চলে শুটিং। পরিচালক সূত্রে জানা গেছে, শেষ পরিণতির দৃশ্যটি ধারণ করা হয় টানা ২৭ ঘণ্টা ধরে। একটা অন্ধকার ঘরে ভোর পাঁচটায় অভিনয়শিল্পীরা ঢোকেন। পুরো শুটিং শেষ করে তাঁরা সেখান থেকে বের হন।
রাফী বলেন, ‘জানোয়ার যখন বানিয়েছিলাম, তখন দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গিয়েছিল। পরাণ-এর সময়টায় পরকীয়ার খবর শুনছিলাম। আর ফ্রাইডের ঘটনা কোভিড সময়ের। মনে হয়েছিল, কোভিডের কারণে মানুষ এ ধরনের বীভৎস ঘটনাগুলো ভুলে গেছে। আমার কাছে ঘটনাটা তাই অবিশ্বাস্য লেগেছিল। গল্পটা কঠিন ছিল। তবে আমার ইচ্ছা সৎ ছিল। যতটুকু সত্য ঘটনা রাখা যায়, এর সঙ্গে নিজের দর্শন আর ভাবনার সন্নিবেশ ঘটিয়েছি। এতটা প্রত্যাশা করিনি, যতটা সাড়া পেয়েছি।’
শেষে রাফী বলেন, ‘বিশেষভাবে বলতে চাই, দুর্বল চিত্তের মানুষের জন্য এই কনটেন্ট নয়। এটি এমন গল্প, যাতে কিছু নৃশংস দৃশ্য আছে। সবাই এসব দৃশ্য সহ্য করতে পারবেন না। তাই প্রস্তুতি নিয়ে দেখা উচিত। আমার বিশ্বাস, গল্পটি সবার ভালো লাগবে।’