তাঁদের অভিনয়ে ফেরা
রফিউল কাদের ভেবেছিলেন, আর কখনোই হয়তো তাঁর অভিনয়জগতে ফেরা হবে না। বিয়ের পর স্বামী, সন্তান আর সংসারের দায়িত্ব নিয়ে আইমন শিমলাও ভুলতে বসেছিলেন অভিনয়। অন্যদিকে পড়াশোনা শেষ করে অভিনয় নাকি চাকরি—দোটানায় থাকা প্রিয়ম অর্চি অবশ্য অভিনয়কেই গুরুত্ব দিয়েছেন। ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির ওয়েব ফিল্ম ও সিরিজ দিয়ে তাঁদের ফেরার গল্পটাও অন্য রকম হয়ে রইল।
ক্যাফে ডিজায়ার দিয়ে ওটিটিতে নাম লেখান প্রিয়ম অর্চি। প্রথম কাজই তাঁকে এনে দিল প্রশংসা। গল্পে ধনী এক ছেলেকে মনে মনে পছন্দ করেন তিনি। কিন্তু ছেলেটি তা জানে না। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য একসময় দৌড় প্রতিযোগিতায় নাম লেখান অর্চি। এই দৌড়ে প্রথম হলেই ভালোবাসার মানুষকে পাওয়া যাবে। অর্চি বলেন, ‘একটু পরিশ্রম করতে হবে, এমন চরিত্রে অনেকেই নাম লেখাতে চান না। আমাকে শুধু দৌড়ের জন্য টানা অনেক দিন অনুশীলন করতে হয়েছে। সেই ফল এখন পাচ্ছি। যাঁরা কাজটি দেখেছেন, তাঁরা বলছেন, “দারুণ অভিনয় করেছ।” চরিত্র থেকে বের হতে পেরেছি। এখন একটা স্বপ্ন দেখতে পারছি। নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।’ আগে নাটকে অভিনয় করেছেন। নাম লিখিয়েছেন পায়ের তলায় মাটি নাই চলচ্চিত্রে। এখন অভিনয় নিয়ে স্বপ্ন দেখলেও তাঁর শুরুটা ছিল চ্যালেঞ্জিং।
এমবিএ শেষ করে সবাই যখন চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন অর্চি খুঁজছিলেন অভিনয় ও চাকরি একসঙ্গে করা যায়, এমন কাজ। একটি মিডিয়া এজেন্সিতে কাজের সুযোগ মিলে যায়। তিনি বলেন, ‘শৈশব থেকেই অভিনয় করি। পরিবার থেকে সহায়তা করত। কিন্তু একজন নারী হিসেবে অভিনয় করে যাওয়াটা আমার জন্য কঠিন ছিল। বুঝতে শেখার পর অভিনয় ছাড়া জীবনে অন্য কিছু ভাবতে পারিনি। এখন অভিনয়টাই করে যেতে চাই।’
১৯৯৭ থেকে ২০০৯—অভিনয় ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারতেন না রফিউল কাদের। অথচ ২০০৯ সাল থেকে অভিনয়টাই ভুলে যেতে বসেছিলেন। বাস্তবতা তাঁকে মার্চেন্ডাইজার হিসেবে চাকরির দুনিয়ায় নিয়ে যায়। এভাবে অভিনয় ছাড়াই কেটে যায় এক যুগ। আর কখনো অভিনয়ে ফিরতে পারবেন, এমনটা ভাবনারও অতীত ছিল। নাসির উদ্দিন খান, ইমতিয়াজ বর্ষণদের সঙ্গে অভিনয় করা রফিউল মনের খোরাক জোগাতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নাটক দিয়ে আবার অভিনয়ে ফেরেন। ঢাকায় কিছু কাজ করলেও এখন চরকির গুটি দিয়ে দর্শকদের প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি।
এই অভিনেতা বলেন, ‘গুটিতে কাস্টিংয়ের আগে আমার অভিনয়ের কিছু ভিডিও ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। পরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় গেলে বাঁধনের সঙ্গে দেখা হয়। বাঁধন তখন বলেন, পাঠানো ভিডিওগুলো পছন্দ করেছেন। তিনি আমার সঙ্গে অভিনয় করার জন্য অপেক্ষা করছেন। পরে শুটিং সেটেও তাঁরা আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেন। তখন আত্মবিশ্বাস বাড়ে। কিন্তু প্রচারের পর এতটা প্রশংসা পাব, ভাবিনি।’ এখন ঢাকায় থেকে নিয়মিত অভিনয়টাই করে যেতে চান।
আজমেরী হক বাঁধনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন আইমন শিমলা। বলা যায়, তিনিই গুটির খলনায়িকা। গল্পে তিনি বাঁধনের সঙ্গে একই ক্লিনিকে কাজ করেন। ম্যানেজার রফিউলের ডান হাত। চট্টগ্রামের মেয়ে, তাই চট্টগ্রামের ভাষায় অভিনয়ও ছিল সাবলীল। শিমলা বলেন, ‘গুটির নেতিবাচক চরিত্রটি দর্শক এতটা পছন্দ করবেন, কল্পনাও করিনি। প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি। এখন একটু আশা দেখছি, হয়তো অভিনয়ে সারভাইভ করতে পারব।’
ভূগোল পরীক্ষার দিন মঞ্চনাটকে নাম লেখান আইমন শিমলা। ২০১২ সালে তিনি মনে করেছিলেন, অভিনেত্রী হওয়া সহজ। স্কুলে নাচ, গান, মঞ্চনাটকে নাম লেখানোর পর পথনাটক নিয়েই দিনগুলো কাটতে থাকে তাঁর। পরে তিনি বুঝতে পারেন, এটা কঠিনের চেয়েও কঠিন। তত দিনে একেবারেই ঢুকে পড়েছেন অভিনয়ে। শিমলার মতে, ‘অভিনয়ে একবার মন চলে গেলে আর বের হওয়া যায় না। একসময় বিয়েও হয়। তারপর ফিরে আসতে পারব, এটা কল্পনাও করিনি। কাছের মানুষের প্রশংসায় এখন মনে হচ্ছে, আমাকে দিয়ে অভিনয় সম্ভব হবে।’