ঢাকায় ‘অর্থী’, টরন্টোতে ‘সাবা’
গতকাল মুক্তিপ্রাপ্ত চরকি অরিজিনাল ফিল্ম ‘ফরগেট মি নট’–এ অর্থী চরিত্রে হাজির হয়েছেন তারকা অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। একই সময়ে আরেক চলচ্চিত্র ‘সাবা’ নিয়ে টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রয়েছেন তিনি।
‘পুনর্জন্ম’ থেকে ‘আরারাত’—পরপর থ্রিলার ওয়েব সিনেমা, সিরিজ করেছেন মেহজাবীন চৌধুরী। তিনি ভাবলেন, থ্রিলার থেকে খানিকটা বিরতি দরকার। থ্রিলারের বাইরে রোমান্টিক ঘরানার গল্প খুঁজছিলেন। প্রেম, বিয়ে কিংবা বিচ্ছেদের চর্চিত গল্প নয়; একটু আলাদা।
এর মধ্যে নির্মাতা রবিউল আলম রবির কাছে ‘ফরগেট মি নট’–এর গল্প শোনেন। গল্পটা মনে ধরায় নাম লেখান। ওয়েব সিনেমাটি গতকাল মুক্তি পেয়েছে। মুক্তির ঘণ্টা দুয়েক আগে টরন্টো থেকে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছবিটিসহ নানা বিষয়ে নিয়ে কথা বলেছেন মেহজাবীন চৌধুরী।
অর্থী চরিত্রটি নিয়ে তাঁর ভাষ্য, এই চরিত্রের মধ্যে অনুশোচনা, অবসাদ কিংবা মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়ার সাবলীল প্রকাশ রয়েছে।
‘চরিত্রটা পেয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, শুধু প্রেম–ভালোবাসা থাকবে না, আরও কিছু আবেগ পর্দায় তুলে ধরতে পারব। সে কারণেই কাজটা করেছি। চরিত্রের মতো গল্পটাও খুব ভালো লেগেছে। আরেকটা বিষয় হলো, সিনেমার চিত্রনাট্য খুবই উন্নত মানের।’ বলেন এই তারকা অভিনেত্রী।
চরকির ‘ঊনলৌকিক’, ‘ক্যাফে ডিজায়ার’ নির্মাতা রবিউল আলম রবির নির্মাণে প্রথম কোনো কাজ করেছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ ছিল বলে জানান মেহজাবীন।
তিনি জানান, নির্মাতা রবিউল আলমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচয় থাকলে তিনি দেশের বাইরে থাকায় সামনাসামনি দেখা হয়নি। তবে একে অপরের কাজ দেখেছেন। এই নির্মাতার ঊনলৌকিক তাঁর ভালো লেগেছিল।
মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, ‘রবি ভাইয়ার ভালো গুণ হলো, তিনি কখনো নিজেকে ডিরেক্টর হিসেবে জাহির করেন না। সহকর্মী হিসেবে পাশে থাকেন। শিল্পীদের কাজের স্বাধীনতা দেন। ফলে ভালো পারফরম্যান্সের স্পৃহা আরও বেড়ে যায়।’
দর্শকেরা ‘ফরগেট মি নট’ কেন দেখবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘এটা হয়তো আপনার মনে লম্বা সময়ের জন্য গেঁথে থাকবে। আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আশা করছি, দর্শকের ভালো লাগলে সফল। আর ভালো না লাগলে এখান থেকে শিখব, সামনে আরও ভালো করার চেষ্টা করব।’
এই সিনেমায় মেহজাবীন চৌধুরী ছাড়াও অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান, ইরফান সাজ্জাদ, বিজরী বরকতউল্লাহসহ আরও অনেকে। এটি চরকির ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রকল্পের চতুর্থ চলচ্চিত্র।
টরন্টোতে সাবা
‘সাবা’ চলচ্চিত্র নিয়ে কানাডার টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রয়েছেন মেহজাবীন চৌধুরী। এটিই তাঁর ক্যারিয়ারে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র; এতে নামভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে।
উৎসবের ডিসকভারি প্রোগ্রামে নির্বাচিত ছবিটি ৭ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে। ইতিমধ্যে প্রিমিয়ারের সব টিকিট শেষ হয়েছে।
বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর অসুস্থ মাকে নিয়ে সাবার জীবনসংগ্রামকে পর্দায় তুলে এনেছেন নির্মাতা মাকসুদ হোসেন। এতে মেহজাবীন ছাড়াও রোকেয়া প্রাচী, মোস্তফা মন্ওয়ার অভিনয় করেছেন।
মেহজাবীনের ভাষ্যে, ‘অনেক দিন পর একই সময়ে “ফরগেট মি নট” ও “সাবা” দর্শকের সামনে আসছে। দুটি কাজ নিয়েই আমি রোমাঞ্চিত।’
মেহজাবীনের চার চাওয়া
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন মেহজাবীন চৌধুরী। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের সংস্কারের কথা বলছেন অনেকে।
টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনকে কেমন দেখতে চান—এমন প্রশ্নের জবাবে মেহজাবীনের কয়েকটা প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রেটিং প্রথাটা জোরদার করা দরকার। যাতে কোন কনটেন্ট কত বছর বয়সের দর্শকের জন্য, সেটা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
দ্বিতীয় বিষয়, গল্প। তিনি বলেন, ‘দেখা যায়, হালকা মেজাজের কাজগুলো মানুষ বেশি দেখেন। যখনই একটা কাজ একটু ভারী, একটু গভীরতা আছে। সেই কাজগুলো হয়তোবা দর্শকেরা দেখতে চান না। এই গল্পগুলো এগিয়ে আসা উচিত। সব ধরনের কাজই হবে। কোনো জনরার কারণে আরেকটা জনরা যেন পিছিয়ে না যায় ও ভালো মানের গল্পকে সাপোর্ট করা উচিত। যাতে পরে প্রযোজক, পরিচালকেরা, শিল্পীরা অনুপ্রেরণা পায়।’
তিন. প্রডাকশন মেম্বার, ক্রু মেম্বার, লাইট, সাউন্ড, আর্ট ডিরেক্টররা যেন সম্মানটুকু পান। পারিশ্রমিকটুকু সময়মতো পান। কোনো বকেয়া না থাকেন।
চার বিষয়, নারী ও পুরুষ শিল্পী ও কলাকুশলীদের সমতার চর্চা করা। মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, ‘এখনো সিনেমা, নাটক ও ওটিটিতে দিন শেষে অনেক বেশি মেল ডমিনেট। আমার কাছে মনে, এই বিষয়টি ঠিক হওয়া উচিত। অনেক নারী অভিনেত্রীরা আছেন, তাঁরা যাতে আরও সুযোগ পান। তাঁদের নিয়ে যেন আরও গল্প হয়।’
তিনি বলেন, ‘শুধু পুরুষকে কেন্দ্র করে গল্প এগিয়ে যায়, একা এগিয়ে লাভ নেই। একটা ইন্ডাস্ট্রি ও দেশ তখনই এগিয়ে যাবে, যখন দেখা যায়, নারীরা সম্মানটুকু পাচ্ছেন। সমানভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যায়, তখনই একটা দেশ এগিয়ে যায়। মেয়েরা সম্মানটুকু, সমান পারিশ্রমিক পাবেন। তখন বলব, আমাদের দেশে পরিবর্তন এসেছে।’