এফডিসিতে অঞ্জনার মরদেহ, চোখের জলে শেষবিদায় জানালেন সহকর্মীরা
শেষবারের মতো এফডিসিতে এলেন অঞ্জনা। তবে ততক্ষণে এ পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে বিদায় নিয়েছেন তিনি। আজ শনিবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে অঞ্জনার মরদেহ বহনকারী গাড়িটি এফডিসিতে পৌঁছালে শোকাবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
শেষবারের মতো এই চিত্রনায়িকাকে দেখতে আসেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, ভক্ত থেকে সংবাদকর্মীরা। জোহরের নামাজের পর প্রথম জানাজা শেষে মরদেহ নেওয়া হয় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
অঞ্জনাকে শেষবিদায় জানাতে এদিন এফডিসিতে এসেছিলেন চিত্রনায়ক আলমগীর, উজ্জল, ইলিয়াস কাঞ্চন, চিত্রনায়িকা নূতন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, চিত্রনায়ক মেহেদী, অভিনেতা সুব্রত, নাসরিন, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, জয় চৌধুরী, রোমানা মুক্তিসহ অনেকে। পরিচালকদের মধ্যে ছটকু আহমেদ, শাহিন সুমন, মুশফিকুর রহমান গুলজার, চয়নিকা চৌধুরী, প্রযোজকনেতা খোরশেদ আলম খসরুসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এসেছিলেন প্রযোজক সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক, চিত্রগ্রাহক সমিতির সদস্যসহ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা।
অঞ্জনার স্মৃতিচারণা করে এদিন চিত্রনায়িকা নূতন বলেন, ‘একই সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের পথচলা। আমরা দুজন বোনের মতো ছিলাম। যেখানেই যেতাম, আমরা এত হাসিঠাট্টা করতাম, সবাই ভাবত আমরা আপন দুই বোন। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে সবশেষ দেখা হয়েছিল। আর দেখা হবে না ভাবতেই শূন্যতা অনুভব করছি।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘অঞ্জনা আপার এ শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। একজন ভালো শিল্পীর বাইরে অসম্ভব ভালো একজন মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর প্রাণবন্ত ও হাসিমাখা মুখ মিস করব। সবাই তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করবেন।’
চিত্রনায়ক উজ্জল বলেন, ‘চলচ্চিত্রে নায়িকা হওয়ার আগে তিনি এ দেশের একজন খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী ছিলেন। আমি দেখেছি, সে সময় বিদেশি রাষ্ট্রীয় অতিথি থেকে সরকারি বড় বড় অনুষ্ঠানে তাঁর নাচের ডাক পড়ত। সবাই তাঁর নাচের প্রশংসা করত। পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রে এসেও অনেক কালজয়ী সিনেমায় তিনি তাঁর মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। এভাবে আমরা সবাই একদিন চলে যাব, আমাদের কাজই থেকে যাবে। যাঁরা চলে গেছেন, তাঁদের স্মৃতি যেন আমরা সব সময় স্মরণ করি।’
তবে এদিন সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে চাননি চিত্রনায়ক আলমগীর ও ইলিয়াস কাঞ্চন। কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় নেই বলে জানান দুই অভিনেতা।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। জানা গেছে, তিন সপ্তাহ ধরে অসুস্থ ছিলেন একসময়ের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। শুরুতে জ্বর ছিল। সারা শরীর কেঁপে জ্বর আসত। একটা সময় ওষুধ খেয়েও কাজ হচ্ছিল না। শেষে জানা যায়, তাঁর রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এরপর অঞ্জনাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কয় দিন তাঁকে রাখা হয় সিসিইউতে।
সেখানকার চিকিৎসায় শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় হাসপাতাল বদলে গত বুধবার অঞ্জনাকে নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই রাতেই তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায় তাঁর অবস্থার কখনো উন্নতি, কখনো অবনতি হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত চলেই গেলেন এই নায়িকা।
সিনেমায় আসার আগেই অঞ্জনা পরিচিতি পান নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি ঢাকাই সিনেমায় কাজ শুরু করলেও তাঁর মুক্তি পাওয়া প্রথম চলচ্চিত্র ছিল শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’। নায়ক সোহেল রানার বিপরীতে ওই সিনেমার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি অঞ্জনাকে। নিজের সেরা সময়ে ঢাকাই সিনেমার প্রথম সারির প্রায় সব নায়কের বিপরীতেই অভিনয় করেছেন তিনি।