অ্যাভাটার: ফুরাল ১৩ বছরের অপেক্ষা
‘অ্যাভাটার’-এর গল্পটা সেই নব্বইয়ের দশকেই লিখেছিলেন জেমস ক্যামেরন। প্রযুক্তিগত কারণে তখন করা সম্ভব হয়নি। ২০০৯ সালে যখন হলো, তৈরি হলো নতুন ইতিহাস, বদলে গেল বিশ্ব চলচ্চিত্রের ভাষা। এই স্কেলে গল্প বলা, ক্যামেরা থেকে প্রযুক্তির ব্যবহার আর সঙ্গে অতি অবশ্যই আবেগ; যা পর্দায় তুলে ধরতে বরাবরই মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন পরিচালক। এরপর এক যুগের বেশি সময় পার হয়েছে, এখনো সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল সিনেমা অ্যাভাটার। এতেই অনেকটা আঁচ করা যায় ছবিটির জনপ্রিয়তা। ১৩ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষ হয়েছে, গতকাল প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘অ্যাভাটার-এর সিকুয়েল অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’।
প্যানডোরায় সংঘাত
জেমস ক্যামেরন জানিয়েছেন, চিত্রনাট্য লেখার সময় নিজেকে টিনএজারের বাবা মনে করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘লেখার সময় মনে করি, আমার ছেলেমেয়েরা কৈশোর পার করছে। পরিবারই মানুষের সবচেয়ে বড় জায়গা। কোনো না কোনোভাবে আমার শিল্পের মাধ্যমে সেটি তুলে ধরি। আজকালকার অ্যাকশন সিনেমায় এসব আর দেখা যায় না।’
জেক সলিকে নিয়ে শুরু হবে এবারের কিস্তি, অ্যাভাটারের শরীরে ভর করে যে প্যানডোরা গ্রহে হাজির হয়। গ্রহটিতে থাকে না’ভি আদিবাসীরা। জলজ এই গ্রহের মহামূল্যবান সম্পদ আনঅবটেনিয়াম, যা পৃথিবীকে বাঁচাতে দরকার। তবে গ্রহের বাসিন্দারা এটিকে হাতছাড়া করবে কেন! শুরু হয় প্যানডোরাবাসীদের সঙ্গে সংঘাত।
পুরোনোরা ফিরছেন, আছে নতুন চরিত্র
জেক সলির চরিত্রে আগেরবারের মতোই আছেন স্যাম ওয়ার্দিংটন। এ ছাড়া আগের কিস্তির জোয়ি সালদানা, সিগুর্নি ওয়েভার, স্টিফেন লাংরাও থাকছেন। নতুন যুক্ত হয়েছেন ক্লিফ কার্টিস, মিতকানিয়া গোত্রের নেতা তনোয়ারির চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। আছেন ক্যামেরনের প্রিয় পাত্রী কেট উইন্সলেট, তাঁকে দেখা যাবে রোনাল চরিত্রে। এ ছাড়া এবার দেখা যাবে এডি ফ্যালকো, জেমি ফ্ল্যাটার্স, ব্রেনডন কাউওয়েলকে।
কেন এত দেরি
সবচেয়ে বিলম্বিত সিকুয়েলগুলোর একটি হতে যাচ্ছে ‘দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’। প্রথমটার ১৩ বছর পর দ্বিতীয় কিস্তি। প্রথম পর্ব মুক্তির ব্যাপক ব্যবসায়িক সাফল্যের পর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরেই সিনেমাটির মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেশ কয়েকটি কারণে এতটা দেরি হয়ে গেল।
প্রথমত, গভীর সমুদ্রের মধ্যে সিনেমাটির শুটিং করা হয়েছে, সমুদ্রের যথাযথ লোকেশন খুঁজতে গিয়ে কয়েক বছর কেটে যায়। পুরো চিত্রনাট্য লিখেও বহুবার বদলাতে হয়। এ ছাড়া ছিল প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি কেবল এই সিনেমার জন্যই আবিষ্কৃত হয়েছে! এরপর শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয় কোভিড, ফল আরও কয়েক বছরের বিলম্ব।
কেটের ইতিহাস
‘টাইটানিক’-এর পর আবারও জেমস ক্যামেরনের সিনেমায় কেট উইন্সলেট। ছবিটির মুক্তি সময় এনে দিয়েছে এই পরিচালক ও অভিনেত্রী জুটির উদ্যাপনের অন্য এক উপলক্ষও। কারণ, আর দিন কয়েক পর ১৯ ডিসেম্বরই টাইটানিক মুক্তির ২৫তম বার্ষিকী। ছবিটিতে অভিনয়ে করতে গিয়ে নতুন রেকর্ডও গড়েন অস্কারজয়ী ব্রিটিশ অভিনেত্রী—পানির নিচে ৭ মিনিট ১৪ সেকেন্ড শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন, যার অর্থ ৭ মিনিটের এই বেশি সময় ধরে পানির নিচে নিশ্বাস বন্ধ করে ছিলেন তিনি। ছবি মুক্তির আগে এক ভিডিও বার্তায় বিষয়টি কেট নিজেও নিশ্চিত করেছেন। আগের রেকর্ডটি ছিল টম ক্রুজের; মিশন ইমপসিবল: রোগ নেশন-এর শুটিংয়ে যেটি গড়েছিলেন অভিনেতা।
রেকর্ডটি নিয়ে অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি সত্যই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, সত্যিই পারছিলাম না। আমি আগে ৬ মিনিট ১৪ সেকেন্ড নিশ্বাস না নিয়ে ছিলাম। এবার নিজের রেকর্ড ভাঙতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম।’ সিনেমায় নিজের চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘রোনালএক যোদ্ধা, শক্তিশালী নারী, মৃত্যু হতে পারে জেনেও যে মানুষের অধিকারের জন্য লড়াইয়ে নামতে ভয় পায় না।’
৩ ঘণ্টা আর ৩৫০ মিলিয়ন
‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিটের সিনেমা। সিনেমার দৈর্ঘ্য নিয়ে পরিচালক বলেন, ‘সবকিছুই টান টান রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও আবেগ তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ। এটি করতে গিয়েই সময়টা লেগেছে।’ দৈর্ঘ্যের মতো সিনেমাটি বাজেটেও অনেক ছবিকে ছাড়িয়ে গেছে। ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’ নির্মাণে ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩০০ কোটি ডলারের বেশি বাজেটে মাত্র ৭টি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। তারই একটি ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’।
আরও সিকুয়েল
দ্বিতীয়টি মুক্তির বছর কয়েক আগেই আরও তিন কিস্তির ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন পরিচালক। ‘অ্যাভাটার ৩’-এর শুটিং এর মধ্যেই শেষ, মুক্তি পাবে ২০২৪ সালে; চতুর্থ ও পঞ্চমটি মুক্তি পাবে যথাক্রমে ২০২৬ ও ২০২৮ সালে। ক্যামেরন বলেন, ‘সব কটিরই চিত্রনাট্য লেখা শেষ, ঘটনাক্রম থেকে শুরু করে সিনেমায় কী দেখাব, সেটা পুরোপুরি তৈরি।’
ব্যাপক প্রশংসা
মুক্তির আগে দেশে দেশে প্রিমিয়ার হয়েছে ‘অ্যাভাটার: দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’-এর, যা দেখে সাধারণ দর্শক থেকে সমালোচক সবাই মুগ্ধ। এমন দুর্দান্ত দৃশ্যায়ন আর গল্পের বুনট ছবিটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে তাঁদের মত। তবে দর্শকের একাংশ ছবিটির সমালোচনাও করেছেন। তাঁদের মতে, ছবিটি বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার চিন্তা উসকে দেবে।