৮৯ বছর বয়সে মারা গেলেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সুমিত্রা সেন
ভারতীয় রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সুমিত্রা সেন মারা গেছেন। ৮৯ বছর বয়সে আজ মঙ্গলবার ভোররাত চারটায় কলকাতার বাসায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কয়েক বছর ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন সুমিত্রা সেন। এর মধ্যেই গত বছরের ডিসেম্বরে ঠান্ডায় ব্রঙ্কোনিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন তিনি। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে গত ২১ ডিসেম্বর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। গতকাল সোমবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। আজ ভোরেই চলে গেলেন সুমিত্রা সেন।
‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’, ‘মধুর মধুর ধ্বনি বাজে’সহ দেড় শতাধিক রবীন্দ্রসংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন সুমিত্রা সেন। ভারত ছাপিয়ে বাংলাদেশের শ্রোতামহলেও পরিচিতি রয়েছে তাঁর। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেলেও নজরুলসংগীত, পল্লিগীতি, আধুনিক গান ও চলচ্চিত্রের গানেও পাওয়া গেছে তাঁকে।
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গান করেছেন সুমিত্রা সেন। ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, রবীন চট্টোপাধ্যায়, ভি বালসারা, তিমির বরণ, সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সংগীতায়োজনে গান করেছেন সুমিত্রা সেন।
বিয়ের আগে কুমারী সুমিত্রা দাশগুপ্ত নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। সেই নামেই ১৯৫১ সালে দুটি নজরুলসংগীত রেকর্ড করে সংগীতাঙ্গনে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। বিয়ের পর সুমিত্রা সেন নামে পরিচিতি পান তিনি। নায়ক উত্তমকুমারের অনুরোধে ১৯৬০ সালে ‘শুন বরনারী’ ছবি দিয়ে সিনেমার গানে অভিষেক ঘটে সুমিত্রার। অন্তত ১৬টি চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছেন তিনি। ‘শ্যামা’, ‘শাপমোচন’, ‘বাল্মীকি প্রতিভা’, ‘বর্ষামঙ্গল’, ‘বসন্ত’, ‘মায়ার খেলা’সহ কয়েকটি নৃত্যনাট্য ও গীতিনাট্যে তাঁর কণ্ঠ এখনো জীবন্ত। পঙ্কজ কুমার মল্লিকের পরিচালনায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’–র গানে (মাগো তব বীণে সংগীত) কণ্ঠ দিয়েছেন সুমিত্রা সেন।
২০১২ সালে সুমিত্রা সেনকে সংগীত মহাসম্মান পদক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। সুমিত্রা সেনের মৃত্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন শিল্পী কবীর সুমন। ১৯৯৩ সালে এইচএমভির ব্যানারে রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা’–তে সুমিত্রা সেনকে প্রশিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন কবীর সুমন। তাঁর মৃত্যুর খবরে সুমন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রসংগীতের মহিলা শিল্পীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন আমার প্রিয়। অনেকেই হয়তো জানেন না, সুমিত্রা সেন আধুনিক গানও গাইতেন এবং ভালো গাইতেন। রম্যগীতিতে তাঁর ও শংকর লাল মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া একটি গান, “গান গেয়ে বেলা যদি যায় তবে যাক না” খুবই ভালো লেগেছিল আমার কৈশোরে। অলক নাথ দের সুর ও সংগীতায়োজনে।’
সুমিত্রা সেনের দুই মেয়ে ইন্দ্রাণী সেন ও শ্রাবণী সেনও কণ্ঠশিল্পী। শ্রাবণী সেন রবীন্দ্রসংগীত চর্চা করছেন, ইন্দ্রাণী সেনকে সব ধরনের গানেই দেখা যায়।