তারকাদের গোপনে সংসার, ঢাকঢোল পিটিয়ে বিচ্ছেদ

প্রেম, বিয়ে, এমনকি সংসারও গোপন রাখতেই যেন পছন্দ করেন তারকারাকোলাজ
প্রেম, বিয়ে, এমনকি সংসারও গোপন রাখতেই যেন পছন্দ করেন তারকারা। জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে পারে, এটাই গোপন রাখার বড় কারণ। তবে ব্যতিক্রমও আছেন কেউ কেউ, যাঁরা অকপটে প্রেম–ভালোবাসার কথা স্বীকার করেন। সংসারও শুরু করেন সাড়ম্বরে। সম্প্রতি বিচ্ছেদের মিছিলে থাকা পরীমনি ও শরীফুল রাজের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক গোপনে সংসার শুরু ও আওয়াজে বিচ্ছেদ ঘটা কয়েকজন তারকাকে—

পরীমনি ও শরীফুল রাজ

ঢালিউড তারকা পরীমনি সিনেমার বাইরের কর্মকাণ্ডে যতটা আলোচিত, তেমনটা অন্য কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। প্রেম, সম্পর্ক, মামলা–কাণ্ডে তিনি সমসায়মিক অন্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। ২০২১ সালেও নানা ঘটনায় বিনোদন অঙ্গনে পরীমনি বেশ আলোচিত ছিলেন। আর চিত্রনায়ক শরীফুল রাজ ‘পরাণ’ মুক্তির পর আলোচনায় আসেন। এর মধ্যেই ‘গুণিন’ ছবিকে ঘিরে নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিমের মাধ্যমে পরী ও রাজের পরিচয়।

আরও পড়ুন

তারপর অল্প সময়ে দুজন প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে প্রেম। সিনেমা মুক্তির আগে বিয়ে, যা একেবারে গোপনই ছিল। এর মধ্যে সন্তান আগমনের খবরও ছড়িয়ে যায়। গোপনে সংসারজীবন শুরু করলেও একসময় তা প্রকাশ্যে আসে। এরপর ঘোরাফেরা, আড্ডাবাজি, হইহুল্লোড় করে দিন পার করছিলেন। পরীমনির সঙ্গে হাত ধরাধরি করে আদালত চত্বরে বেশ কয়েকবার রাজকে দেখা যায়। বিষয়টা এমন, যেন একে অন্যের জন্য জান হাজির।

রাজ ও পরীমনি
প্রথম আলো

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই যেন দৃশ্যপট বদলে যেতে লাগল। আস্তে আস্তে পরীমনি ও রাজের তিক্ততার খবর চাউর হতে থাকে। কখনো তা প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে। এ বছরের মে মাসে সম্পর্কের অবনতি চরম আকার ধারণ করে। পরীমনি ও শরীফুল রাজ দুজন দুজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সামনে নিয়ে আসেন। কেউ সরাসরি বলেন, কেউবা ইঙ্গিতে। তাতে মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যায়, পরী ও রাজের বিচ্ছেদ এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। অবশেষে ১৮ সেপ্টেম্বর রাজকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে দেন পরীমনি। তাঁদের সংসারভাঙনের খবরে শোরগোল পড়ে যায়। বিয়ে ও সংসার শুরুতে দুজন যতটা গোপনীয়তা মেনে রক্ষা করেছিলেন, বিচ্ছেদে ঠিক তার উল্টো। পরীমনি ও রাজের বিচ্ছেদের খবরটা অনেক আলোচনার জন্ম দেয়।

আরও পড়ুন
শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস
সংগৃহীত

শাকিব খান–অপু বিশ্বাস–শবনম বুবলী

সংসার শুরুর গোপনীয়তায় শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস যেন বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে। ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের ব্যাপারটি কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে রেখে তাঁরা দুজন সমানতালে সিনেমার শুটিং অব্যাহত রাখেন। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের বাইরের একটি হাসপাতালে জন্ম হয় শাকিব ও অপুর সন্তান আব্রাহাম খান জয়ের। ৯ বছর ধরে তাঁরা সংসার করলেও বিয়ের বিষয়টি নিয়ে কেউই প্রকাশ্যে কথা বলেননি।

আরও পড়ুন

সন্তান আব্রাহাম খান জয়ের জন্মের ছয় মাসের মাথায় প্রথম বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। একটি টিভি চ্যানেলে ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল উপস্থিত হয়ে শাকিবের সঙ্গে নিজের গোপনে বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন অপু বিশ্বাস। সেই বিয়ের খবর যেই জনসমক্ষে চলে আসে, তখনই দুজনের মধ্যে শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়েন। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস নিজেদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ করে দেন। তাঁদের সেই টানাপোড়েন চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যায়। এরপর ওই বছরের ১৭ নভেম্বর আইনজীবীর মাধ্যমে অপুর কাছে তালাকের নোটিশ পাঠান শাকিব খান। তাঁর পক্ষে আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলামের অফিস থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র কার্যালয়, অপু বিশ্বাসের ঢাকার নিকেতনের বাসা এবং বগুড়ার ঠিকানায় এই তালাকের নোটিশ পাঠানো হয়। শাকিব ও অপুর এই তালাক কার্যকর হয় নোটিশ পাঠানোর তারিখ থেকে তিন মাস পর। শাকিব–অপুর বিচ্ছেদের খবরটিও তখন টক অব দ্য কান্ট্রি হয়।

শাকিব খান ও শবনম বুবলী
ছবি: ফেসবুক

শাকিব–অপু অধ্যায়ের সমাপ্তির পর শাকিব খানের সঙ্গে চিত্রনায়িকা শবনম বুবলীর প্রেম ও বিয়ের গুঞ্জন চাউর হয়। তাঁরাও কেউ তা স্বীকার করেননি। যতবারই প্রশ্ন করা হয়, ততবারই এসবকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন দুজন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বেবি বাম্পের ছবি দিয়ে সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন বুবলী। এর কয়েক দিন পর শাকিব খান ও শবনম বুবলী তাঁদের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সন্তান শেহজাদ খান বীরের কথা জানান। বিয়ে ও সংসার শুরু নিয়ে কোনো কথা শোনা না গেলেও সন্তানের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর দুজনকে নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকে। একপর্যায়ে শাকিব খান জানান, বুবলীর সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। অন্যদিকে শাকিবের উদ্দেশে বুবলী বলেন, ‘এখনো আপনার সঙ্গে আমার ডিভোর্স হয়নি।’ তবে তাঁদের সম্পর্ক যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, সন্তানের কারণে শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলীকে নানা সময়ই একসঙ্গে দেখা যায়।

আরও পড়ুন

বিয়ের ১৩ দিনেই আলাদা থাকা শুরু মিলার

গায়িকা মিলার সঙ্গে বৈমানিক পারভেজ সানজারির প্রেমের সম্পর্ক ১০ বছরের। কিন্তু ১০ বছরের প্রেমের সেই বিয়ে টিকেছিল মাত্র ১৩ দিন। বিয়ের ১৩ দিনের মাথায় মতের অমিলের কারণে তাঁরা দুজন আলাদা থাকা শুরু করেন। মিলার মতে, ‘১০ বছর সম্পর্কের পর আমরা বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় জানতে পারি, তার আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে। বুঝতে পারি, সে আমাকে ঠকাচ্ছে। যে লোক এত দীর্ঘ সম্পর্কের পরও আমার সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে, তার সঙ্গে আমি থাকতে পারব না।’

সানজারি ও মিলা
ছবি : মিলার সৌজন্যে

২০১৭ সালের ১২ মে পারিবারিকভাবে প্রেমিক পারভেজ সানজারিকে বিয়ে করেন পপ গায়িকা মিলা। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। আর ওই বছরের ৬ অক্টোবর শুক্রবার রাতে ফেসবুকের ভেরিফায়েড ফ্যান পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে এ দুঃসংবাদ জানান মিলা নিজেই। মিলার বিয়েটা চুপিসারে হলেও বিচ্ছেদ সেভাবে হয়নি। এরপর মামলায় জড়িয়ে তাঁরা বেশ কিছুদিন আলোচনায় ছিলেন।

আরও পড়ুন

লুবায়না–হাবিব–রেহান–বিচ্ছেদ নিয়ে লুকোচুরি

২০০৩ সালে লুবায়না নামের এক তরুণীর সঙ্গে প্রথম বিয়ে হয় জনপ্রিয় গায়ক ও সংগীত পরিচালক হাবিব ওয়াহিদের। মনের অমিলের কারণে প্রেমের সেই বিয়ে ভেঙে যায় অল্প সময়ের ব্যবধানে। এরপর ২০১১ সালের ১২ অক্টোবর পারিবারিক পছন্দে একেবারে চুপিসারে বিয়ে করেন চট্টগ্রামের মেয়ে রেহানকে। সেই সংসারও ভেঙে যায় ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি। বিয়ের খবরটা গোপন করতে পারলেও বিচ্ছেদেরটা গোপন রাখতে পারেননি। বিচ্ছেদ নিয়ে বেশ কিছুদিন লুকোচুরির চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি গায়ক ও সংগীত পরিচালক হাবিব ওয়াহিদের। চট্টগ্রামের মেয়ে রেহান চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় সংসারও টিকিয়ে রাখতে পারেননি তিনি। এই সংসারে একটি ছেলেসন্তান রয়েছে তাঁর।

হাবিব ওয়াহিদ ও রেহান চৌধুরী
ছবি : ফেসবুক

হাবিবের সঙ্গে সংসার ভাঙার জন্য রেহান মডেল পিয়া বিপাশা ও তানজিন তিশাকে সরাসরি দায়ী করেন। তবে বেশি দায়ী করেন তানজিন তিশাকে। এই দুই মডেলকে হাবিব অনেক বেশি প্রশ্রয় দিয়েছেন বলেও দাবি করেছিলেন রেহান। এসব কারণে হাবিবের গোপন বিয়ের খবর ততটা চাউর না হলেও বিচ্ছেদের খবর ছিল অনেক বেশি আলোচিত। অবশ্য ২০২১ সালে আফসানা চৌধুরী নামের এক মডেলকে বিয়ে করেন হাবিব। এই সংসারেও তাঁর একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।

আরও পড়ুন