>বরেণ্য অভিনেত্রী শাবানার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘স্বামী কেন আসামি’ দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বাজারে প্রবেশ করে ভারতের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এস কে মুভিজ। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত যৌথ প্রযোজনায় চারটি ছবি নির্মাণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর ঠিক ১৬ বছর পর জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে আবার যৌথ প্রযোজনায় ছবি তৈরি শুরু করে এই প্রতিষ্ঠান। ‘শিকারি’ দিয়ে শুরু। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ১৩টি ছবি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে। ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আশিকী’, ‘রোমিও বনাম জুলিয়েট’, ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’, ‘অগ্নি’, ‘শিকারি’, ‘নবাব’, ‘রক্ত’, ‘চালবাজ’, ‘ভাইজান এলো রে’। এস কে মুভিজের কর্ণধার অশোক ধানুকা জানান, এখন থেকে তাঁরা বাংলাদেশের সঙ্গে আর কোনো ছবি বানাবেন না। কেন? গতকাল বুধবার বিকেলে অশোক ধানুকা কলকাতা থেকে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে।
শুনেছি, বাংলাদেশে এস কে মুভিজ আর কোনো ছবি তৈরি করবে না। কেন?
খুব শখ করে বাংলাদেশে ছবি বানাতে গিয়েছিলাম। প্রথম ছবি বানিয়েছিলাম ১৯৯৭ সালে, নাম ‘স্বামী কেন আসামি’। ইচ্ছে ছিল, বাংলাদেশের ছবির বাজারটা বিকশিত করতে আমরা ভূমিকা রাখব। কারণ, সেখানে বাংলা ছবির বাজারটা ভালো। ভাবলাম, যদি ভালো ছবি দেওয়া যায়, তাহলে কাজ হতে পারে। এরপর দেখলাম, ঢাকায় মানুষদের মধ্যে লোভ ঢুকে গেছে। নিয়মকানুন ছাড়া কাজ শুরু হলো। এত সস্তা কাজ করছিল, তাই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। লম্বা বিরতির পর ২০১৪ সাল থেকে আবার নতুন করে বাংলাদেশের বাজার কাজে লাগানোর কথা ভাবি। কিন্তু গত দুই-আড়াই বছরে দেখলাম, শুধু বাধা আর বাধা। ১৬-১৭টা সংগঠন আছে, কোনো ছবি বানাতে গেলে ওই সব সংগঠন বাধা দেয়। নানা সমস্যা তৈরি করে। শিল্পীদেরও সমস্যা আছে। জাজ মাল্টিমিডিয়া কিছু কাজ ভুল করেছে। একটা কাজে মানুষের আবেগ থাকা উচিত, ভাবা উচিত আমাদের ইন্ডাস্ট্রি যেন ভালো থাকে।
আপনার তো ঢাকায় অফিস আছে। সিনেমার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এখানে অফিস করেছেন। তাহলে এখন অন্য কথা বলছেন কেন?
সেটা ঠিক আছে। কিন্তু পদে পদে এত বাধা পাব, ভাবতেও পারিনি। কোনো ছবি তৈরির সব নিয়ম মানার পরও মুক্তি দিতে পারিনি। মুক্তি দিলেও টাকা তুলে আনতে পারি না। ‘ভাইজান এলো রে’ ছবির সময় দেখলাম নতুন নিয়ম, কোনো উৎসবে ছবি মুক্তি দিতে পারব না। এতই যখন সমস্যা, তাহলে ওখানে সিনেমা করে কী লাভ? সিনেমা হল ১৮০ টাকায় টিকিট বিক্রি করবে, আমি টাকা পাব ৩৫ টাকা! বাকি টাকা প্রেক্ষাগৃহের মালিক পাবে। সব জায়গায় সমস্যা।
কলকাতায় টিকিট বিক্রি থেকে প্রযোজক কত পাচ্ছে?
সেভেনটি পার্সেন্ট প্রযোজক পায়।
অভিনয়শিল্পীদের কাছ থেকে কী ধরনের অসহযোগিতা পেয়েছেন?
বাংলাদেশে শাকিব খান যখন ছবিপ্রতি ১৫ লাখ টাকা সম্মানী পেয়েছেন, তখন ওকে দিয়ে ভালো ভালো ছবি বানিয়েছি। এখন সে আমাকে বলছে, তাঁকে ৬০ লাখ টাকা না দিলে সিনেমা করবে না! আমার তো বাংলাদেশ দিয়ে শুধু চলে না, টাকাটা তো তুলে আনতে হবে।
শাকিব খান ছাড়া আর কাউকে নিয়ে কাজ করেছেন?
মাহিয়া মাহীকে নিয়ে আমরা কাজ করেছি।
আর নায়ক?
বাংলাদেশের অন্য কোনো নায়কের সঙ্গে কাজ করা হয়নি।
ভারতের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, শাকিব খানকে দিয়ে তারা বাংলাদেশের সিনেমার বাজার দখল করতে চেয়েছে। সেটা সম্ভব হয়নি বলেই তারা এখন সরে যাচ্ছে।
ওখানে মানুষদের খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই। পরচর্চাই যেন কাজ। কোনো কাজ নেই, বসে আড্ডা মারা আর অন্যের বিরুদ্ধে কিছু একটা বলা! আমাকে বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। ভারতের বাজার কখনো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইনি। আমি মনে করি, সিনেমার বাজারে যত বেশি প্রযোজক থাকে, দেখবেন বাজার ততই ভালো হবে। প্রযোজক কমে গেলে বাজার ভালো হবে না। ওখানে মানুষজন যদি বাজে কিছু চর্চা করতে থাকে, আমি তো কিছু করতে পারব না।
মুম্বাই আর দক্ষিণের ছবির দাপটে কলকাতার বাংলা ছবি এখন কোণঠাসা। অনেকে বলছেন, কলকাতার বাংলা ছবি কোমায় চলে গেছে। ওখানে অনেকেই বলছেন, বাংলা ছবি যদি টিকিয়ে রাখতে হয়, তাহলে আপনাদের বাংলাদেশের বাজার বেশি দরকার।
আমার কোনো কোনো দ্বিমত নেই। এখানে বাণিজ্যিক ধারায় যেসব বাংলা ছবি তৈরি হয়, সেগুলোর বাজার খারাপ হয়ে গেছে। এখানে আর কপি ছবিতে চলছে না। মৌলিক গল্প নিয়ে, সাহিত্য নিয়ে ছবি বানালে খুব চলে। কোটি কোটি রুপি ব্যবসাও করছে। বাণিজ্যিক ছবির বাজার এখান থেকে বাংলাদেশে ভালো, এটা অস্বীকার করছি না। কিন্তু ভালো বললে তো কিছু হবে না। ওখানে যদি একটা ছবি এক কোটি টাকা ব্যবসা করে, কোনো প্রযোজকই বাসায় ৩০ কিংবা ৩৫ লাখ টাকা নিতে পারবে না। ব্যবসা হবে, কিন্তু প্রযোজক পাবে না। প্রযোজককে অন্তত ফিফটি পার্সেন্ট তো পাওয়া উচিত। আমাদের এখানে এক কোটি রুপি ব্যবসা করলে ৭০ লাখ রুপি প্রযোজক পায়।
এস কে মুভিজ তো জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে কাজ শুরু করেছিল। এই দুই প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার কারণ কী?
লোভ। জাজ মাল্টিমিডিয়ার আবদুল আজিজ সাহেবের লোভ বেড়ে গেছে। তাঁর কথা হচ্ছে, কলকাতার যত প্রযোজক আছেন, তাঁদের সবার সঙ্গে আজিজ একাই কাজ করবেন, অন্য কেউ কাজ করতে পারবেন না। এই লোভের কারণে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।
শাকিব খানকে আপনি ‘ছেলে’ বলেছিলেন। এখন তিনি আর আপনার ছেলে নন?
শাকিব এখনো আমার ছেলে। সে খুব ভালো অভিনেতা, তাতে যেমন দ্বিমত নেই। তাকে ভালোবাসি, তার প্রতি ভালোবাসায় কোনো ঘাটতি নেই, এটাও সত্য। সে আমার সঙ্গে চারটা ছবি করেছে। আমি দেখেছি, শাকিব খান বাংলাদেশে সকাল ৮টা কিংবা ১০টায় শিডিউল দিয়ে বেলা ২টা, ৩টায়, আবার কখনো ৪টায় আসে। কোনো দিন আবার বলে আজ আসবে না। অথচ আমার এখানে সকাল সাড়ে ৬টার সময় যদি শিডিউল থাকে, তাহলে ও ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এভাবে কাজ করেছে।
তাহলে শাকিব খানকে নিয়ে কেন ছবি বানাবেন না?
আমার যদি টাকা উঠে না আসে, পরপর যদি লস করি, তাহলে কেন তাঁকে দিয়ে ছবি বানাব?
আপনি সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, কলকাতায় শাকিবের বাজার তৈরি হয়নি। কিন্তু এবার ঈদেও দেখেছি, তাঁর ছবি ওখানে ভালো ব্যবসা করেছে।
শাকিব খানকে কলকাতায় কেউ চিনত না। আমার চারটা ছবি মুক্তি দিয়ে ওকে চিনিয়েছি। ‘ভাইজান এলো রে’ ছবির সময় ওর প্রতি সবার আগ্রহ দেখেছি। কলকাতায় আসলে বাণিজ্যিক ছবির বাজার খুব খারাপ। এখানে বিকল্প ধারার ছবির বাজার আছে।
বাংলাদেশে ছবি করবেন না, এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত?
এখন পর্যন্ত তা-ই। এত অসুবিধার মধ্যে ছবি বানানোর কোনো মানে হয়নি। ঢাকায় আমাদের অফিস আছে, থাকুক। তাতে সমস্যা দেখছি না।
আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।