হলিউডে জন্মালে আমি রোকেয়া প্রাচী হতাম না

আজ রোকেয়া প্রাচীর জন্মদিন
ছবি: সংগৃহীত
ক্যারিয়ারের শুরুর সময়টাকে গোল্ডেন টাইম মনে করেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। এখনো দুখাই, মাটির ময়না সিনেমাগুলোর মতো ভালো চরিত্রের অপেক্ষায় আছেন। সম্প্রতি শেষ করেছেন সে রকম দুটি সিনেমার কাজ। আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। কাজ ও ক্যারিয়ার নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।

প্রশ্ন :

শুভ জন্মদিন।

ধন্যবাদ।

প্রশ্ন :

আজকের দিনটির জন্য অপেক্ষা করেন?

অপেক্ষা ঠিক বলব না। তবে আমার বাচ্চারা অপেক্ষা করে। দিনটি একই সঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। কাছের অনেক মানুষ শুভেচ্ছা–ভালোবাসা জানায়, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে ব্যস্ত থাকতে হয়, এ রকম বেশ কিছু কারণে দিনটি আমার অনেক আনন্দে কাটে।

প্রশ্ন :

দেখলাম একটি অনুষ্ঠানে...

বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে শিশু–কিশোরদের রচনা প্রতিযোগিতা ছিল। বিষয় ছিল ‘আমার বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ’। জন্মদিনে স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে ভালো সময় কেটেছে। তাদের কথা শুনলাম, বেশ ভালো লাগল।

বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে শিশু–কিশোরদের রচনা প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে রোকেয়া প্রাচী
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

শিশু–কিশোরেরা বক্তব্যে কী বলেছে?

আমরা অনেক নেগেটিভ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাই। আমরা হতাশায় ভুগি, কাদা–ছোড়াছুড়ি করি। কিন্তু শিশুদের কথা শুনে মনে হলো, তারা পড়াশোনা করে, দেশ নিয়ে জানার চেষ্টা করে, তাদের চোখে অনেক স্বপ্ন। তারা যদি স্বপ্নময় পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারত, তাহলে বাংলাদেশ প্রোপার নেতৃত্বের হাতে যেত। আজকের শিশুদের নিয়ে আমরা আশাবাদী।

প্রশ্ন :

হঠাৎ কাজ কি কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন? কেন?

করোনার কারণে খুব বেশি কাজ করিনি। সম্প্রতি ওটিটির একটি সিনেমা ও অনুদানের ছবি ‘সাবিত্রী’তে অভিনয় করেছি। আর ভালো চিত্রনাট্যের অপেক্ষায় আছি। একটা বয়সের পর শিল্পীকে তাঁর উপযোগী চরিত্র বাছতে হয়। আমাদের এখানে কাজের সংকট। সব বয়সের চরিত্র পাওয়া মুশকিল। আমি যেনতেন কোনো কাজ করে ৩০ দিন ব্যস্ত থাকতে চাই না।

দুখাই সিনেমার পোস্টারে রোকেয়া প্রাচী ও রাইসুল ইসলাম আসাদ
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

এখন যেগুলো করছেন, সেসব কাজ নিয়ে আপনি কতটা খুশি?

বর্তমান কাজের সংকট দেখে মনে হচ্ছে, আমি অনেক সৌভাগ্যবান শিল্পী। আমার জীবনের শুরুতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আন্দোলনের সেই সময়ে কাজ করতে পেরেছি। পরে ‘দুখাই’ চলচ্চিত্র দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে। ‘মাটির ময়না’ বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা হিসেবে কান উৎসবে গিয়েছে, সেখানে অভিনয় করেছি। ভালো পরিচালকদের নির্মাণে কাজ করেছি। দেশ–বিদেশ থেকে পুরস্কার ও সম্মান সবই পেয়েছি। আজ ক্যারিয়ার শুরু করলে ভালো কাজগুলো করতে পারতাম না।

প্রশ্ন :

সম্প্রতি টেলিভিশন প্রযোজকদের নির্বাচন করেছেন, হঠাৎ নির্বাচনে অংশ নিলেন কেন?

হ্যাঁ, আমরা হেরেছি (হাসি)। মূলত আমার সহকর্মীরা চেয়েছেন বলেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সাংস্কৃতিক এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে, আমি নির্বাচনে অংশ নিতে চাই, এটা বড় কথা নয়, পরিবারের মানুষের চাইতে হবে। তবে আরও আগে থেকে নির্বাচনে সম্পৃক্ত হলে ভালো হতো। আর প্রযোজকদের যে ১০০ সদস্য ভোট দিয়েছেন, আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। এই ১০০ জনের ভালোবাসা আমার কাছে অমূল্য।

‘মাটির ময়না’ সিনেমার দৃশ্য সহশিল্পীদের সঙ্গে রোকেয়া প্রাচী
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

কখনো কি মনে হয়েছে, অভিনয়শিল্পী হিসেবে হলিউডে জন্ম হলে হয়তো ভালো হতো, মেধার মূল্যায়ন ঘটত?

আমার জীবনদর্শন এমন নয়, এটা না হলে ওটা হতো। বাংলাদেশ থেকে যা পেয়েছি, এটাই আমার জন্য সেরা প্রাপ্তি। আমার সবকিছু বাংলাদেশকে নিয়ে। হলিউডে জন্মালে আমি রোকেয়া প্রাচী হতাম না। আমার প্রাপ্তি–অপ্রাপ্তি, আনন্দ সবই রোকেয়া প্রাচী এবং বাংলাদেশকে নিয়ে। এখানে রোকেয়া প্রাচী হিসেবেই বেড়ে উঠতে চাই। আমি কখনো অস্তিত্বকে ভুলি না, আমার কোনো হতাশা নেই। নির্বাচনে হেরেও আমি হাসিখুশি ছিলাম। আমি আনন্দে থাকি। ভালো না লাগলে অভিনয়ও করি না।

প্রশ্ন :

বেশ কিছুদিন আগে তুহিন হোসেন নামের একজন নির্মাতা অভিযোগ তুলেছিলেন, মির্জাপুরে ‘যোগ-বিয়োগ’ নামে একটি শুটিং থেকে হঠাৎ করেই শিডিউল ফাঁসিয়ে চলে এসেছিলেন, এ নিয়ে আপনি কোনো মন্তব্য করেননি। কেন?

কেন চলে এসেছিলাম? আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলাম, এখনো আছি। তো সেই সময়ে আমি শুটিং করতে গিয়ে দেখি, এমন একটা বাসায় শুটিং হচ্ছে, যিনি অন্য রাজনৈতিক দর্শনের মানুষ। তিনিই নাটকের অর্থায়ন করেছেন। তিনিই আমার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করবেন। তিনি প্রফেশনাল অভিনেতা নন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে সেই শুটিং থেকে সরে এসেছিলাম। এটা আমার দর্শনের সঙ্গে যায় না। পরে আমি বিষয়টা পরিচালককে বলেছি। সেটা সেই সময়েই শেষ। হঠাৎ নির্বাচনের আগে সেই পরিচালক বিষয়টা সামনে এনেছেন আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। হয়তো কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় তিনি সাংগঠনিকভাবে নোটিশ পাঠাতে পারতেন। আর আমরা যেহেতু একই পরিবারের মানুষ, সেখানে সবার প্রতি সবার সম্মান থাকা উচিত। এতে তো সাজু মুনতাসির ও মনোয়ার পাঠানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়নি। নির্বাচনে কাউকে আক্রমণ করা উচিত নয়। আসলে নির্বাচনে দাঁড়ালে প্রিয় মানুষেরাও শত্রু হয়ে যায়।