সেদিন সানী ভাই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন, সেখানে আমাদের কথা–কাটাকাটি হয়
সম্প্রতি খল অভিনেতা ডিপজলের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে ওমর সানী ও জায়েদ খানের উপস্থিতি ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। সেই ঘটনা এখন দেশের সিনেমা অঙ্গনে আলোচিত ইস্যু। বিয়ের অনুষ্ঠানে কী ঘটেছিল, সেটা নিয়ে প্রথম আলোর মুখোমুখি হলেন জায়েদ খান
প্রশ্ন :
অভিনেতা ডিপজলের ছেলের বিয়ের দিন কি ওমর সানীর সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল?
দেখা হবে না কেন? অবশ্যই দেখা হয়েছিল। প্রায় ৫–৭ মিনিটের মতো আমরা একসঙ্গেই ছিলাম। যে সময়টুকু ছিলাম তার শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলাম সেদিন সানী ভাই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। ডিপজল ভাই তাঁকে অনুষ্ঠানে খেতে রিকোয়েস্ট করছেন, তিনি খাবেন না। সেখানে আমাদের কিছুটা কথা–কাটাকাটি হয়।
প্রশ্ন :
সেখানে কথা-কাটাকাটি কেন হয়েছিল?
হ্যাঁ। আমাদের কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। তিনি অনেকটা গুছিয়েও কথা বলতে পারছিলেন না। আমি নাকি মৌসুমী আপাকে অসম্মান করেছি। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, শুক্রবারের ঘটনা শনিবার রাতে বললেন কেন? কেন ওই দিন বলেননি, কেন আমার একটা রায়ের আগে ভিত্তিহীন ঘটনা সামনে আনলেন।
প্রশ্ন :
ওমর সানীর দাবি, তিনি ঘটনাস্থলে আপনাকে চড় মেরেছেন, আপনি তখন পিস্তল বের করে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন?
এসবই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমন কিছুই ঘটেনি। এটা সত্য কি না, সেখানে যারা ছিল, সেটা ভিডিওতে দেখুন, তাদের কাছে জিজ্ঞেস করুন। তাহলেই সত্যটা বেরিয়ে আসবে। আমাকে রোজিনা আপা, অঞ্জনা আপা ফোন করে বলছেন, ‘আমরা কিছু দেখলাম না। কখন কীভাবে ঘটনাটি ঘটল।’ ডিপজল ভাই আমাদের সঙ্গে ছিলেন, তিনি ফোন দিয়ে বলছেন, ‘আমার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, আমি কিছুই জানলাম না।’ আপনি চাইলে তাদের ফোন দিয়ে জানুন।
প্রশ্ন :
কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী ও ওমর সানী বলছেন আপনার কাছে পিস্তল ছিল? আপনি বের করে হুমকি দিয়েছেন?
দেখুন, যেখানে বিয়ে হয়েছে, সেই স্থানটা নিরাপত্তায় ঘেরা ছিল। সেখানে গেটে মেটাল ডিটেক্টর থাকে, কড়া সিকিউরিটি ছিল, এখানে বৈধ আর্মস নিয়ে কেউ ঢুকতে পারে না। সানী ভাই যা বলছেন, সেখানে গতকালকের কথার সঙ্গে আজকের কথার অনেক অমিল। তিনি বলছেন, ‘পিস্তল বের করে বলেছি গুলি করব, মেরে ফেলব, এটা তিনি ছাড়া আর কেউ দেখল না।’ ওমর সানী ভাই যদি বলতেন, ‘রাস্তায় আমার হাতে পিস্তল দেখেছেন সেটা মানাতো। আর তাঁর সঙ্গে যতটা সময় দেখা হয়েছে, পুরো সময় রোজিনা আপা, অঞ্জনা আপা ডিপজল ভাই ছিলেন। তাঁরা কেউ দেখলেন না...অদ্ভুত। পিস্তল নিয়ে আমি ঢুকিইনি, এত মানুষের মাঝে পিস্তল বের করলাম কখন, কীভাবে? আর শিল্পীরা বিয়েতে পিস্তল নিয়ে যাবে কেন? এখানে তো অন্য কোনো গন্ডগোল ছিল না। কখনো শুনেছেন বিয়েতে গোলাগুলি হয়? এমন ঘটনায় আমি খুবই কষ্ট পাইছি।’
প্রশ্ন :
একটি সূত্র বলছে, চিত্রনায়িকা মৌসুমীকে নিয়ে আপনি নোংরা কিছু বলেছেন?
এটা তো আমিও শুনলাম। বাংলাদেশে মৌসুমী আপা এতটাই ফেলনা? আমি যদি কিছু বলেই থাকি, মৌসুমী আপা বলুক সেটা। যারটা সেই বলুক। মৌসুমী আপার কি কোনো অস্তিত্ব নেই। মৌসুমী বাংলাদেশে একটাই। তাঁর মতো মানুষকে আমরা সম্মান করি। শ্রদ্ধা ছাড়া মৌসুমীকে কিছু বলার সুযোগ নেই। কখনো কোনো সিনিয়র, কোনো মেয়ে শিল্পীরা অভিযোগ করতে পারলেন না জায়েদ এটা বলছে, ওটা করছে। আর সানী ভাই কমপ্লেইন করে বসল, মৌসুমী আপাকে ঘিরে। সানী ভাই, কেন কমপ্লেইন করবে, সেটা মৌসুমী আপার মুখ থেকে আসুক। মৌসুমী বলুন, জায়েদ আমাকে অসম্মানিত করেছে, ছোট করেছে, কিন্তু সানী ভাইয়ের বলার উদ্দেশ্য কী? মৌসুমী আপা ব্যক্তিত্বের মানুষ, তাঁকে অসম্মান করার সাহস কার আছে?
প্রশ্ন :
তাহলে বিয়ের অনুষ্ঠানে আপনাদের রাগারাগির সূত্রপাত কীভাবে হলো?
তিন দিন আগে সবাই দেখছে তিনি (সানী) নিপুণের জন্মদিনে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এটা তিনি করতেই পারেন। তবে আগে করেন না। হঠাৎ হয়তো ওই দিকে ঝুঁকেছেন। তিনি তো প্রথম নির্বাচনের আমার বিপক্ষে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন। এর মধ্যে মৌসুমী আপা আমাদের সঙ্গে নির্বাচন করেছেন, সে কারণে হয়তো আমাদের সঙ্গে ছিলেন। পরে হয়তো মনে হয়েছে নির্বাচন ঘিরে কেসের ঝামেলা আছে, সামনে একটা রায় আছে, এটাকে সামনে রেখে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন।
প্রশ্ন :
আপনি, মৌসুমী, ওমর সানী দীর্ঘদিন পর এই নির্বাচন ঘিরে এক হয়েছিলেন, হঠাৎ সম্পর্কের অবনতির হলো কেন?
ভালো সম্পর্ক তো আমার সোহানুর রহমান সোহান, ইলিয়াস কাঞ্চন ভাই, রিয়াজ ভাই সবার সঙ্গেই ছিল। আসলে আমাদের শিল্পীদের মধ্যে সম্পর্ক ধরে রাখা কঠিন কাজ। কখন কার মন ঘুরে যায় বলা যায় না। এটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আর অনুষ্ঠানে এমন কিছু ঘটেইনি, যেটা উদ্দেশ্যপ্রণীতভাবে নিউজ হওয়ার মতো।
প্রশ্ন :
আপনাকে যদি চড় মারে বা অসম্মানের মতো কিছু ঘটে, তাহলে আপনি আইনের আশ্রয় নেবেন কি না?
শিল্পীদের মধ্যে একটা ভিত্তিহীন ঘটনা নিয়ে এখনই আমি আইনের কাছে যাব কেন? সিনিয়র শিল্পীর মধ্যে ডিপজল ভাইসহ অনেকেই আছেন, তাঁরা যা বলবেন সেটাই হবে। হুট করে আমি আইনি ব্যবস্থায় যাব কেন? বিষয়টি তিনি (ওমর সানী) একাই ঘটিয়ে একাই ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছেন। হয়তো আলোচনায় আসার জন্য করছেন বা কারও ইন্ধনে হতে পারে।
প্রশ্ন :
আপনি বিভিন্ন সময় বলেছেন, আপনি অনেকের রোষানলে পড়েছেন, আপনাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল, এমনকি এমন কোনো ঘটনা ঘটছে?
আমাকে একসময় আসামি বানানো হয়েছিল। তারা থেমে নেই। আমাকে নিয়ে এখনো চক্রান্ত হচ্ছে। শিল্পী সমিতি নিয়ে থ্রেট হুমকি, অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন, আমাকে ফলো করা, কোথায় যাচ্ছি এগুলো থেমে নেই। এসব কারণে আমি সিনেমায় অভিনয়ও করতে পারছি না। কোনো সিনেমা করতে গেলে বাধা আসে। তারা ফোন করে, না করে দেয়, আমার সিনেমা রিলিজ করতে দেবে না এমন বহুত হুমকি চলছেই।
প্রশ্ন :
এমন ঘটনায় ওমর সানী মামলা করলে আপনি কী করবেন?
তাঁরা যা ইচ্ছা করতেই পারেন। আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলে মামলা করবেন, সাক্ষী প্রমাণ লাগবে। আর আমি তো আর্মস নিয়েই যাইনি। তাহলে কি তাঁরা মিথ্যা মামলা করবেন? আমি একটা কথাই বলব, মানুষের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হতে পারে, তার মানে এই না কেউ পিস্তল দিয়ে গুলি করতে যাবে। শিল্পীরা তো ট্রাকস্ট্যান্ডের লোকজন না। আমি একটি শিক্ষিত ছেলে, এ ঘটনায় আমি মর্মাহত। একটাই কথা বলব, পিস্তল হুমকির ঘটনাটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাঁদের আমি যথেষ্ট সম্মান করি।