সেদিন গিটার ভাঙাটা আশীর্বাদ ছিল
কোক স্টুডিওতে ‘প্রার্থনা’ গানটি গেয়ে আলোচিত মিজান। আব্বাসউদ্দীন আহমদের বিখ্যাত গান ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই’ ও মাইজভান্ডারির ‘বাবা মাওলানা’র মিশেলে নতুন এই গান তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া এখন নিয়মিত নতুন গানে মনোযোগী হচ্ছেন ওয়ারফেজ ব্যান্ডের এই সাবেক সদস্য। সম্প্রতি চলচ্চিত্রেও গান করেছেন। কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
প্রশ্ন :
কোক স্টুডিওতে প্রার্থনা গানটি মুক্তির পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
‘প্রার্থনা’ গানটি মুক্তির পর সবার কাছ থেকে দারুণ সাড়া পাচ্ছি। রীতিমতো অভিভূত। আমি তো মনে করি, সবাই ‘প্রার্থনা’ কবুল করে নিয়েছেন। মানুষ ভালো সংগীতের, সুস্থ ধারার সংগীতের মূল্যায়ন করছেন। আমি তাই অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হচ্ছি। সামনে আরও ভালো কী গান করা যায়, ভাবছি।
প্রশ্ন :
সংগীত আপনার কাছে কী?
আমার কাছে সংগীত প্রার্থনার মতো। আমি তো আসলে মিউজিক সেভাবে কোথাও শিখিনি। তাই অনেক সময় অনেক রকম হয়ে যায়।
প্রশ্ন :
জীবনের কোন পর্যায়ে এসে মনে হয়েছে সংগীত প্রার্থনা?
একদম শুরু থেকে, যখন আমি স্কুলে পড়ি। সেই ষষ্ঠ–সপ্তম শ্রেণি থেকে। যতই দিন গেছে, ততই এটা গাঢ় হয়েছে। সংগীতকে মনের মধ্যে লালনপালন বেশি করেছি।
প্রশ্ন :
সংগীতের পথে চলতে গিয়ে পরিবারকে কীভাবে পাশে পেয়েছেন?
গানের ব্যাপারে পরিবার কোনো দিন সাহায্য করেনি। পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আমি গানের জীবন বেছে নিয়েছি। পরিবার চাইত, ছেলে পড়াশোনা করে বড় হবে, চাকরি–বাকরি করবে, স্যুটেড–বুটেড জীবন যাপন করবে। আগেকার মা–বাবারা যেমনটা চাইতেন আরকি। আমার আব্বা আবার একটু বেশি রাগী ছিলেন। তাই তিনি ভাবতেন, হাতে আবার গিটার–টিটার কিসের! স্কুলে থাকতেই আব্বা আমার গিটার ভেঙে ফেলেন। বন্ধুর উপহার দেওয়া সেই গিটার ভেঙে ফেলায় মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। যদিও সেই গিটারের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। আমারও তখন গিটার কেনার সামর্থ্য ছিল না। বাবার কাছেও চাইতাম না। কারণ, তিনি পছন্দ করতেন না। চাইলে যদি আবার রাগটাগ করেন, এই ভয়ে। আমি মনে করি, সেদিন গিটার ভাঙাটা আশীর্বাদ ছিল। আমাকে সংগীতে বেশি আত্মনিবেশ করতে সহযোগিতা করেছে। একটা জিদ কাজ করেছে।
প্রশ্ন :
ঈদে নতুন কোনো গান প্রকাশিত হচ্ছে কি?
আমি এখন আগের চেয়ে কাজ বেশি করছি। ঈদের চলচ্চিত্রে গাওয়া গানটি মুক্তি পাবে। এটি আমার গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান।
প্রশ্ন :
চলচ্চিত্রে গান গেয়ে অভিজ্ঞতা কেমন। আগ্রহ কি বেড়েছে?
খুবই চমৎকার অভিজ্ঞতা। সিনেমার গানে কাজ করা ভিন্ন রকম। এটা ঠিক, চলচ্চিত্রে গাওয়ার অনেক প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু করা হয়নি। একটা পর্যায়ে এসে দেখলাম, ভালো করতে পারলে সিনেমার গান বেঁচে থাকে। বহু সিনেমার গান যুগ যুগ ধরে বেঁচে আছে। নিজের মধ্যে উপলব্ধি হলো, গানের যেকোনো ক্ষেত্রেই একজন মিউজিশিয়ানের কাজ করা উচিত। সিনেমার গান করে যদি আমি ভালো করতে পারি, তাহলে সেটাই আমার সফলতা। আমি মনে করছি, আমাকে দিয়ে আরও নানা ধরনের গান গাওয়ানো সম্ভব। সংগীত পরিচালকেরা আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারবেন।
কেউ কেউ বলে থাকেন, গানের জন্য নাকি আপনাকে খুঁজে পাওয়া যায় না!
এটা মোটেও ঠিক কথা নয়। অনেকে হয়তো ফোন করেন, কিন্তু পরিচিত না হলে ধরা হয় না। প্রয়োজন জানিয়ে এসএমএস করলে আমি কিন্তু ঠিকই কলব্যাক করি। এমনিতে আমি আমার মতো থাকতে পছন্দ করি। এটাও ঠিক, আমার গেল কয়েক বছরে কাজ করা হয়েছে কম। এখন ভালো লাগছে, তাই কাজও করছি বেশি।
প্রশ্ন :
গান নিয়ে আপনার স্বপ্নের কথা শুনতে চাই।
আমি আন্তর্জাতিক সংগীতাঙ্গনে কাজ করতে চাই। কিছুটা যদিও করেছি। গানবাংলার মাধ্যমে বিদেশের নামকরা অনেক মিউজিশিয়ানের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে। আরও বেশি করতে চাই।
প্রশ্ন :
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের তুলনায় দেশের সংগীতের অবস্থান কোথায় মনে করছেন?
আমাদের দেশের শিল্পীদের মেধা আছে, যোগ্যতা আছে। আমাদের দেশে এখন আন্তর্জাতিক শিল্পীরা এসে কাজ করছেন। কোক স্টুডিও এসেছে। তারা এসেছে, এর মানে বাংলাদেশে মেধাবী মিউজিশিয়ান আছেন, আছে ব্যবসায়িক বড় বাজারও। অন্যথায় এত বড় প্ল্যাটফর্ম কিন্তু আমাদের দেশে আসত না। আমরা মেধাবীদের মূল্যায়ন কম করি। এই ধরনের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম আসার পর সত্যিকারের মেধাবী ও যোগ্য শিল্পীদের চাহিদা বাড়বে।
প্রশ্ন :
গানে এককভাবে, নাকি ব্যান্ড নিয়ে এগোবেন?
আমি মঞ্চে শ্রোতাদের সরাসরি গান শোনাতে পছন্দ করি। রেকর্ডিংও করব। আবার দলগতভাবেও এগোব। কারণ, একটা কাঠামোও আছে।