মানসিক শক্তিতে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি
করোনা জয় করে সম্প্রতি কাজে ফিরেছেন অভিনেতা আজিজুল হাকিম। ‘স্বর্ণমানব-৪’ নামের একটি টেলিছবির শুটিং করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে একসঙ্গে চারটি চ্যানেলে প্রচারিত হবে সেটি। নানা প্রসঙ্গে গত রোববার প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
প্রশ্ন :
কাজ শুরু করলেন। শরীর কি পুরোপুরি ঠিক হয়েছে?
গত শনিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সব রিপোর্ট দেখে বললেন, আমি ঠিকঠাক আছি। কোভিড–পরবর্তী সময়ে শরীরে হিমোগ্লোবিন একটু কম থাকে। বললেন, সেটা পূরণ করতে হবে। খাবারের ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রশ্ন :
‘স্বর্ণমানব-৪’ টেলিছবিতে অভিনয় করলেন কী ভেবে?
মানসিক শক্তি নিয়ে আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি। শুটিং ইউনিট থেকে নিশ্চিত করেছে, সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে কাজটি করা হবে। সে কারণে সাহসটা পেয়েছি। ‘স্বর্ণমানব–৪’ টেলিছবির রচয়িতা মইনুল খানের গল্পে আগেও কাজ করেছি। তিনি বলেছেন, এই চরিত্র আমাকে ছাড়া হবেই না। একই সঙ্গে এটাও বলেছেন, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা যা দেওয়া দরকার, তিনি নিশ্চিত করবেন। এদিকে চিকিৎসক আমাকে বলেছেন, যেহেতু বেশ কিছুদিন বাসায় থাকতে হবে, তাই ডিপ্রেশন ভর করতে পারে। আমি যেন মাঝেমধ্যে বাসা থেকে বের হই, পছন্দসই গল্পে কাজ করি। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা যেন বজায় থাকে, এটাও সুস্থ হয়ে ওঠার একটা পার্ট। চিকিৎসক অবশ্য বেশি মানুষের কাছে না যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। আর বাইরে বের হওয়ার সময় যেন অবশ্যই মাস্ক পরি।
প্রশ্ন :
শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এই টেলিছবিতে আমি শুল্ক গোয়েন্দার চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার চারটি দৃশ্য ছিল। প্রত্যেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করেছেন। শুটিং ইউনিটের পরিবেশ আমাকে সত্যিই মুগ্ধ করেছে।
প্রশ্ন :
আপনাকে আরও কয়েকটি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। সেগুলোর কী অবস্থা?
ওই ধারাবাহিকগুলোর কাজ থমকে আছে। অসুস্থতার কারণে শুটিং করতে না পারায় ‘গোলমাল’ ও ‘বকুলপুর’ নাটকের প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে। পরিচালক যোগাযোগ করেছিলেন। আমার জন্য বিশেষ আয়োজনে শুটিং করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। আমি এখন শুটিং শিডিউলে পরিবর্তন এনেছি। অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করব না। সিস্টেমেটিক একটা জীবন যাপন করতে চাই।
প্রশ্ন :
করোনাই আপনাকে সচেতন করল?
একদমই তা–ই। কাজ করতে গিয়ে আমরা নিজেদের দিকে খেয়াল রাখতে ভুলে যাই। করোনার পর স্বাস্থ্যগত দিক থেকে সচেতনতা ও নিজেকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন :
বাসায় সময় কাটছে কীভাবে?
প্রচুর বই পড়ছি। ছেলেকে সময় দিচ্ছি। মেয়েও কয়েক দিন পরপর বাসায় আসছে, ওর সঙ্গে গল্প করছি। আমার স্ত্রীও (জিনাত হাকিম) অসুস্থ ছিল, তাকেও সময় দিচ্ছি।
প্রশ্ন :
কার লেখা বই পড়ছেন?
হাসান আজিজুল হকের ‘ফিরে যাই ফিরে আসি’, ‘এই পুরাতন আখরগুলি’। হায়াৎ মামুদের সাক্ষাৎকারের একটা সংকলন পড়েছি। মোহাম্মদ বারী আর হরিশংকর জলদাসের বইও পড়ছি। এখন সময়টা পড়ার মধ্যে কাটছে।
প্রশ্ন :
আপনার সবচেয়ে প্রিয় লেখক?
আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক হাসান আজিজুল হক, শওকত আলী, সেলিনা হোসেন, হরিশংকর জলদাস, শাহাদুজ্জামান, নাসরীন জাহান।
প্রশ্ন :
আপনি একবার একটা গল্পের বই লিখেছিলেন। এখন কি লেখালেখি করতে পারছেন?
আমার করোনাকালীন জীবন নিয়ে লিখতে শুরু করেছি। গল্প লেখার অভ্যাস ছিল। এখন আর তাগিদটা ওভাবে আসে না। আমি তো মাঝেমধ্যেই লিখি। সেই ২০১২ সালে নয়টা গল্প নিয়ে একটা বই প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প লেখার জন্য প্লট দরকার, সব সময় প্লট আসে না। তবে করোনার সময়টা আমাকে দারুণ কিছু ভাবনা দিয়েছে, তা নিয়েই একটা গল্প লিখছি। আমি নিজের অনুভূতি, মেয়ে ও জামাইয়ের ভাষ্যে যা শুনেছি, আমার চিকিৎসক ভাগনের কাছে শোনা এবং শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বিবরণ থাকবে সেই গল্পে। মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানোর জন্যই লিখছি।
প্রশ্ন :
এর মধ্যে আর কোনো পরিকল্পনা আছে?
আমার মেয়ের জামাই যেহেতু ড্রিম ওয়েবারের স্বত্বাধিকারী, তারা আমাকে ও জিনাতকে নিয়ে পাঁচ মিনিটের একটি ডকু ড্রামা বানানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সেটার শুটিং করব। একটি রিসোর্টে বেড়ানোর ফাঁকে সেই শুটিং হবে। এই ডকু ড্রামায় আমাদের সুখী জীবনের গল্প থাকবে।