ফুটেজ দেখলে সত্য-মিথ্যা প্রমাণ হয়ে যাবে: ইলিয়াস কাঞ্চন
>ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মঙ্গলবার নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের উদ্যোক্তা ইলিয়াস কাঞ্চনের লাইসেন্স করা পিস্তল ও গুলি বহনের ঘটনা এখন সারাদেশেই আলোচিত। বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিষয়টির জন্য দোষারোপ করছেন বরেণ্য এই চিত্রনায়ককে। ইলিয়াস কাঞ্চনের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই ঘটনা প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন অসত্য কথা বলছেন। আসলে সেদিন কী ঘটেছিল, জানতে চাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার বিকেলে কথা হয় ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে। তাঁর বয়ানে জানালেন সেদিনের সেই ঘটনার বিবরণ।
নানাভাবে ওই দিনের ঘটনার ব্যাখা আসছে। আসলে কি ঘটেছিল?
প্রথম কথা হল, একজন লাইসেন্সধারী তাঁর পিস্তল নিয়ে বিমানবন্দরে যেতে পারেন। বহন করতে পারেন, কিন্তু উপযুক্ত ব্যবস্থায়। তবে পিস্তল নিয়ে বিমানে উঠতে পারবে না। বিমানে পিস্তল বহন করে উঠতে না পারার ব্যবস্থা কিন্তু বিমানবন্দরে থাকে। স্ক্যানিং, দেহ তল্লাশি—যাই বলি না কেন—সবই আছে। আমরা বিমানে ভ্রমণ করি, তো বেশ ভালোমতোই জানি। আমি চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য সকালে বিমানবন্দরে গেলাম। সেদিনই ফিরব বলে, শুধু ল্যাপটপের ব্যাগটাই সঙ্গে নিয়েছি, অন্য কোনো লাগেজও নেইনি। বিমানবন্দরে ঢুকেই যথারীতি ল্যাপটপের ব্যাগ আমি স্ক্যানিংয়ে দেই। স্ক্যানিং থেকে ব্যাগটা চলে এল। এদিকে আমারও দেহ তল্লাশি শেষ। আমি ল্যাপটপের ব্যাগটা নিয়ে ভেতরে যাচ্ছিলাম। বোডিংও শেষ করলাম। ইমিগ্রেশনের জন্য ভেতরে যখন যাব। ল্যাপটপের ব্যাগটা রাখলাম। কোট, বেল্ট খুলছিলাম। তখন হঠাৎ করে মনে হল, অ্যারে আমার ল্যাপটপের ব্যাগের ভেতর তো পিস্তলটা রয়ে গেছে! কি ব্যাপার, পিস্তল আছে, কিন্তু ধরা পড়ল না কেন! ব্যাগটা ওদের কাছে চাইলাম, আমাকে কিন্তু এতক্ষণ কেউ কিছু বলে নাই। ব্যাগ হাতে নিয়ে বললাম,আমার ব্যাগে পিস্তল আছে। আমি জমা দিব। যেখানে বোডিং করলাম, ব্যাগটা নিয়ে সেখানে গেলাম। একজন নিরাপত্তারক্ষী এল।
জানতে চাইল, আমার বোর্ডিং পাস কই। আমার সঙ্গে যে ছিল, তার কাছেই বোর্ডিং পাস ছিল। তাঁর কাছে গেলাম। বোর্ডিং পাস নিয়ে এসে নিরাপত্তকর্মীর হাতে দিলাম। ফর্মে লিখলাম পিস্তলের লাইন্সেস নাম্বারসহ বিস্তারিত সবকিছু। আমি পিস্তল জমা দিয়ে বললাম, এই যে আমি স্ক্যানিংয়ে দিলাম, পিস্তল ধরা পড়ল না কেন! ভালো লাগল না বিষয়টা। আমি ইলিয়াস কাঞ্চন, আমি না হয় দায়িত্বের সঙ্গে এটা জমা দিলাম। অন্য কেউ তো উদ্দশ্যেপ্রণোদিতভাবে অন্য কিছুও করতে পারত। তাহলে এটা কি দাঁড়াল! এটা আপনারা দেইখেন। বলেই, আমি ভেতরে গিয়ে বসলাম। বিমান আমার আধাঘন্টা দেরি। তিনজন সিকিউরিটি এলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে। আমার ল্যাপটপ ব্যাগের ছবি তুলে নিল। যাওয়ার আগে বলল, দেখব আমরা। এই তো।
প্রথমে যখন আপনাকে তল্লাশি করা হচ্ছিল তখন জানাননি কেন?
আমি তাড়াহুড়ো করেই বিমানবন্দরে যাই। একই দিনে চলে আসব, তাই ল্যাপটপের ব্যাগে যে পিস্তল ছিল এটা আমার মনেই ছিল না। দ্বিতীয় স্ক্যানিংয়ে যাওয়ার আগে হঠাৎ মনে পড়ে। যখনই মনে পড়ল তখনই তো জানালাম। আর আগে থেকে জানলে তো আগেই বলতাম।
অস্ত্র নিয়ে কি এর আগেও কোথাও ভ্রমণ করেছিলেন?
না না। এর আগে কখনোই অস্ত্র নিয়ে কোথাও ভ্রমণ করিনি।
ওরা বলছে, অস্ত্র থাকার বিষয়টি আপনি আগে থেকে জানাননি। দ্বিতীয়বার তল্লাশীর সময় ধরা পড়লে জানাতে বাধ্য হন?
লাইসেন্স করা পিস্তল বহন করার যে পদ্ধতিগুলো আছে তা মেনে চলাটাই এক রকম জানানো। এখন আমি যদি স্ক্যানিংয়ে না দিতাম তাহলে বিষয়টা গোপন করেছি বলতে পারত। সেটা তো আমি মোটেও করিনি। ল্যাপটপ ব্যাগটা স্ক্যানিংয়ে দিয়েছি, দেহ তল্লাশিও করিয়েছি। দ্বিতীয়বার তল্লাশির আগে মনে পড়ায়, যে প্রক্রিয়ায় যাওয়ার দরকার, তা মেনেই তা বিমানে ভ্রমণ করেছি।
নিজের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে সংবাদমাধ্যমে অন্যায়ভাবে একের পর এক অসত্য কথা বলছেন, এমন অভিযোগ মন্ত্রণালয়ের?
আমি তো পুরো ঘটনাটা জানালাম। এখন এরকম কথা যদি কেউ বলে থাকেন, তাহলে সবাইকে বলব, বিমানবন্দরে তো ভিডিও ফুটেজ আছে। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখেও তাঁরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাই না, এসব ফুটেজ নিজেরা দেখতে পারেন। সংবাদমাধ্যমকে জানাতে পারেন। দেশবাসীর কাছেও সেই ফুটেজ চাইলে প্রকাশ করতে পারেন। তখন কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা এটা এমনিতে প্রমাণ হয়ে যাবে। মন্ত্রনালয় কিংবা কর্তৃপক্ষ যেসব কথা বলছেন, এটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। পুরোপুরি অসত্য।
আরও পড়ুন: