চাকরির বই নিয়ে গানটি রেকর্ড করতে গিয়েছিলাম
২০০৬ সালে ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ দিয়ে শুরু। সেবার বাদ পড়ে গেলে ২০১২ সালে আবারও নাম লেখান। ২০১৮ সালে ভারতীয় রিয়েলিটি শো সারেগামাপা থেকে জনপ্রিয়তা পান। চলচ্চিত্রের গানে আগে কণ্ঠ দিলেও চরকি প্রযোজিত নেটওয়ার্কের বাইরে সিনেমায় দ্বৈত কণ্ঠের গান ‘রূপকথার জগতে’ গেয়ে প্রশংসিত হয়েছেন অবন্তি সিঁথি। গতকাল গানটি এক মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করেছে। নানা প্রসঙ্গে রোববার দুপুরে কথা বললেন তিনি
প্রশ্ন :
আপনি কি ‘রূপকথার জগতে?
না, আমি বাস্তবের জগতে এবং নেটওয়ার্কের ভেতরেই আছি (হাসি)। ভীষণ ভীষণ ভালো লাগছে। সবাই এই গানের এত প্রশংসা করছে, শুভকামনা জানাচ্ছে, ফেসবুকে শেয়ার করে নানা কথা লিখছে।
প্রশ্ন :
চলচ্চিত্রের গানে আগেও তো কণ্ঠ দিয়েছিলেন।
কয়েকটা প্লেব্যাক করেছিলাম, ওগুলো অতটা উল্লেখযোগ্য না। কিংবা এমনও হয়েছে, গানগুলো আমি সেকেন্ড টাইম শুনিও নাই (হাসি)। তবে সারেগামাপা প্রতিযোগিতা থেকে ফেরার পর এটাই প্রথম গান।
প্রশ্ন :
এই গানের সঙ্গে যুক্ত হলেন কী করে?
এই গানের সংগীত পরিচালকের (সাজিদ সরকার) সঙ্গে আরেকটি গান করার সুবাদে পরিচয়। একদিন তিনি হঠাৎ করে বললেন, আপু, একটা গান আছে, করবেন কি না? বললাম, পাঠান। শোনার পর ভালো লেগেছে। সুদিং একটা সুর। মনে আছে, একটা চাকরির বই নিয়ে স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করতে গিয়েছিলাম। সাজিদ ভাইয়াকে বলছিলাম, গানবাজনা ছেড়ে দেব, চাকরির প্রিপারেশন নিচ্ছি। এই, সেই, আরও কত কী বলেছি। অনেকক্ষণ কথা বলার পর ভাইয়া বললেন, চলেন, শুরু করি। দেখা যাক, কী হয়। তারপর দেখলাম, রেকর্ডিং করতে করতে ভালোর দিকেই যাচ্ছে। আমাকে তিনি ফ্রিডমও দিয়েছিলেন। আমিও গেয়ে আরাম পেয়েছি।
প্রশ্ন :
গান মুক্তি পেয়েছে। চাকরি কি খোঁজা লাগবে মনে হয়?
করোনা শুরুর পর থেকে আমার মনের মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেছে। এটাও ঠিক, গানের কাজও করছি। মাঝেমধ্যে চাকরির বইও পড়ি, আবার টুকটাক কাজও করি। এভাবেই চলছে আরকি।
প্রশ্ন :
আপনি তো একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিও করছিলেন?
গানের জন্যই ওটা ছেড়ে দিয়েছিলাম। দুটো আসলে একসঙ্গে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিও যে আমি খুব আনন্দ নিয়ে করছিলাম, তা–ও না।
প্রশ্ন :
এখন তাহলে পরিকল্পনা কী?
ভালো সুযোগ পেলে তো অবশ্যই গানের পাশাপাশি চাকরিও করব। গানটা প্যাশন অ্যান্ড প্রফেশন—দুটোই। চাকরির চিন্তা আপাতত নেই, আবার যখন ডিপ্রেশন শুরু হবে, তখন খোঁজা শুরু করব। মাস্টার্স পাস করার পর এটা চলছে।
প্রশ্ন :
আপনি তো যন্ত্রানুষঙ্গ নিয়েও কাজ করতেন।
করছি এখনো। আরও উন্নতি করার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে চারজন মেয়ে মিলে একটা ব্যান্ড করেছি। সবাই সবকিছু করি। আমাদের ব্যান্ডের নাম ইচ্ছে গান। সবাই সিঙ্গার, সবাই আবার বিভিন্ন ইনস্ট্রুমেন্ট বাজাতে পারে। আমার দলের অন্য সদস্যরা হলেন কাজী নওরীন, শাকিলা শুক্লা, ইন্নিমা রশ্মি। আমাদের ব্যান্ডের একটা টাইটেল গান তৈরি হয়েছে। ব্যান্ড তৈরির পরিকল্পনা আমাদের কয়েক বছরের ছিল। করোনার মধ্যে সবার ভাবনা এক হওয়ায় ব্যান্ড তৈরি করে ফেললাম।
প্রশ্ন :
গানের ব্যাপারে আপনার পরিবার কতটা আন্তরিক?
মুখে বলে, তারা অতটা পছন্দ করছে না, কিন্তু মনে মনে যে খুশি, এটা বুঝতে পারি। মায়ের সাপোর্ট তো অবশ্যই আছে, না হলে এত বছর তো গাইতে পারতাম না। বিশেষ করে আমার দিদি বেশি সাপোর্ট করে। পরিবারে বড় বোনই একমাত্র গান করতেন, এখন আর করে না। ছোট বোন নাচ করে।
প্রশ্ন :
বাবা পছন্দ করতেন?
বাবাই মূলত আমাকে নিয়ে স্বপ্নটা দেখেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, মেয়ে একদিন গানের জগতে নাম করবে। ছোটবেলায় বিভিন্ন কম্পিটিশনে বাবা নিয়ে যেতেন। আমাদের তিন বোনকে নিয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল, তোমরা পড়াশোনা করতেছ করো, পাশাপাশি কিছু একটা করতে হবে। ২০০৬–এ বাবা মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার আগে ওই বছরে আমি ক্লোজআপ ওয়ানে নাম দিয়েছিলাম। ৫৫-তে বাদ পড়ে যাই। বাবা খবরটা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। আজ আমার কিছুটা পরিচিতি তৈরি হয়েছে, কিন্তু বাবা দেখে যেতে পারলেন না।
প্রশ্ন :
নতুন গান, কাজের খবর বলুন।
কয়েকটা গান তৈরি করছি। কয়েকটা তৈরি হয়ে আছে। নিজের ইউটিউবে এসব গান ছাড়ব।