কিছুটা অসামাজিক হয়ে পড়েছি
অভিনেত্রী রোজিনা পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের ছবি ‘ফিরে দেখা’য় অভিনয় করছেন অর্চিতা স্পর্শিয়া। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের অজপাড়াগাঁ ও পদ্মা নদীর চরে শুটিং করছেন তিনি। সেখান থেকে ফিরেই নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কচ্ছপ ফিল্মস থেকে সিনেমা বানাবেন এই অভিনেত্রী। সাম্প্রতিক কাজের অভিজ্ঞতাসহ নানা বিষয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
প্রশ্ন :
‘ফিরে দেখা’ ছবিতে আপনার চরিত্রটি কেমন?
ছবিতে আমার চরিত্রের নাম নাসিমা। যুদ্ধকালে গ্রামের ১৬ বছরের সহজ সরল একটি মেয়ে। বাবা–ভাই আছে সংসারে। নাসিমার বিয়ে ঠিক হতেই দেশে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। মেয়েটির বিয়ে ভেঙে যায়। একদিন ভাইটিও যুদ্ধে চলে যায়। তখন নাসিমার জীবনে বড় রকমের আঘাত আসে। স্বপ্ন ভেঙে যায়।
প্রশ্ন :
চরিত্রটি যুদ্ধকালের। ক্যামেরার সামনে ফুটিয়ে তুলতে বেগ পেতে হচ্ছে?
যুদ্ধ দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সিনেমা, নাটক ও প্রামাণ্যচিত্র দেখেছি, বই পড়েছি। তবে এখানে আমার চরিত্র নিয়ে নিজের কোনো কল্পনা রাখিনি। পরিচালক যেভাবে আমাকে সাজিয়েছেন, সেভাবেই সেজেছি। লাল শাড়ি, চুলের বেণি, চুলে লাল ফিতা, হাতে কাচের চুড়িসহ ওই সময়কার গ্রামের একজন তরুণীর বেশভূষা যেমন, সেভাবেই আমাকে ক্যামেরায় আনা হয়েছে। চরিত্রটি পরিচালক যেভাবে বুঝিয়েছেন, সেভাবেই করার চেষ্টা করেছি। পুরোপুরি পরিচালককে ফলো করে কাজ করছি।
প্রশ্ন :
শুটিংয়ের ছবি দেখলাম ফেসবুকে ঘুরছে। পদ্মার চরে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
খুব ভালো লাগছে। গ্রাম আমার খুব প্রিয়। শহর আমাকে টানে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য, গ্রামে আমার কোনো বাড়ি নেই। গোয়ালন্দের একদম ভেতরের গ্রামে গ্রামে, কখনো পদ্মার ধারে বালুচরে শুটিং চলছে। সবুজে ঘেরা গ্রাম, পাখির ডাক ও পদ্মার কোল ঘেঁষে বিশাল চরে কাজ করতে মন ভরে যাচ্ছে। আবার কষ্টও হচ্ছে।
প্রশ্ন :
কেমন?
কড়া রোদের মধ্যে শুটিং। কোনো কোনো দৃশ্যে রোদের মধ্যেই শুটিংয়ের ভারি লাইট ব্যবহার হচ্ছে। তখন কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে। রোদের তাপে মুখ, হাত–পায়ের চামড়া পুড়ে গেছে। অনেক কালো হয়ে গেছি আমি।
প্রশ্ন :
এই ছবিতে কাজের আগ্রহ হলো কেন?
এটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ছবি। এ ধরনের ছবিতে প্রথম কাজ আমার। তা ছাড়া এই ছবি পরিচালনা করছেন রোজিনা। ছবিতে আছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তাঁদের সঙ্গে কাজ করা আমাদের প্রজন্মের শিল্পীদের ভাগ্যের ব্যাপার। এ কারণে প্রস্তাব হাতছাড়া করিনি।
প্রশ্ন :
অনেক দিন ধরে আপনাকে ছোট পর্দার নাটকে দেখা যায় না। কারণ কী?
শেষ নাটক ছিল ‘শ্যাওলা’। এরপর প্রায় পাঁচ বছর নাটকে কাজ করিনি। বলতে পারেন অসন্তুষ্টি থেকেই নাটকের কাজ ছেড়েছি। এরপর সিনেমার ব্যাপারে আমার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এখন সিনেমায় নিয়মিত কাজ করছি।
প্রশ্ন :
আপনার নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে সিনেমা নির্মাণের কথা বলেছিলেন। সেটার খবর কী?
‘ফিরে দেখা’ সিনেমাটির কাজ শেষ করে ফিরেই নিজের প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করব। আরও আগেই কাজ শুরু করার কথা ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে পিছিয়ে গেছি। এর মধ্যে অনেক কিছুই গুছিয়ে এনেছি। ২১ বা ২২ মার্চ থেকে শুটিং শুরু করার ইচ্ছা। ১ এপ্রিল আয়োজন করে সবাইকে জানাব।
প্রশ্ন :
শুটিং ইউনিট সূত্র বলছে, প্রতিদিন শুটিং প্যাকআপের পর বেশির ভাগ সময়ই আপনি ফোনে ব্যস্ত থাকেন, একজন বিশেষ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। সত্যিই কি তাই?
আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুটিং করি। শুটিংয়ের সময় আমি ফোন ব্যবহার করি না। সারা দিন যাঁরা আমাকে ফোনে পান না, শুটিং শেষ হলে তাঁদের কল ব্যাক করি। বিশেষ মানুষ তো অবশ্যই। সেটি আমার মা, বোন কিংবা বন্ধুবান্ধব। আপনি প্রেমিকের ইঙ্গিত দিচ্ছেন, বিষয়টি সত্য নয়।
প্রশ্ন :
তবে কি এ কারণেই অনেকে বলে যে আপনি ফোন ধরেন না, মেসেঞ্জারেও সাড়া দেন না?
কিছুটা সত্যি। অনেক দিন হলো আমি ফেসবুক থেকে কিছুটা দূরে আছি। বেশির ভাগ সময়ই আমি আমার কাজের রুমে বসে কম্পিউটারে কাজ করি। ফোনটা ঘুমানোর রুমে থাকে। এ জন্য এমন সমস্যা হয়েছে। কিছুটা অসামাজিক হয়ে পড়েছি (হাসি)। এখন থেকে সামাজিক হতে যাচ্ছি। ফেসবুকে সরব হচ্ছি। আমাকে ফোনেও সবাই পাবেন।