বহু বছর ধরে গান করছেন শিল্পী বাদশা বুলবুল। সম্প্রতি ‘বুক পকেটে রোদ্দুর’ শিরোনামে একটি সংগীতচিত্র প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। আজ রাত সাড়ে ১০টায় প্রথম আলোর লাইভ ঘরে বসে শোনাব গান অনুষ্ঠানে গাইবেন তিনি। সংগীতের নানা বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন এই শিল্পী।
প্রশ্ন :
কেমন আছেন? কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন?
ভালো আছি। ঘরে বসে টেলিভিশন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য লাইভ প্রোগ্রাম করছি। ঘরেই স্টুডিও আছে, সেখানে বসে নতুন গানও রেকর্ড করছি। মিউজিক ভিডিও করেছি। সম্প্রতি ‘বুক পকেটে রোদ্দুর’ শিরোনামে একটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন :
বহু বছর অক্লান্ত গান শুনিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু প্রতিযোগিতার মনোভাব দেখি না আপনার। এতটা চুপচাপ থাকার কারণ কী?
প্রতিযোগিতায় প্রথম হতে হবে, এ রকম মনোভাব কোনো শিল্পীর থাকা উচিত নয়। প্রতিযোগিতা যদিওবা থাকে, সেটা মনের ভেতরে থাকবে। প্রকাশ্য প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে থাকার চেষ্টা শিল্পীদের মানায় না। যিনি গান করেন, তাঁকে গানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, গানের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। কেবল অর্থ ও খ্যাতির পেছনে ছুটলে চলবে না। আমি সব সময় গানটাই করে যেতে চেয়েছি। সব সময় মনে হয়েছে, টেলিভিশনে ভিন্ন ভিন্ন বয়সের মানুষ গান শুনতে বসবে, তাঁরা কেমন গান পছন্দ করবে, তাঁদের কী ধরনের গান গেয়ে আনন্দ দিতে পারি।
প্রশ্ন :
সংগীতাঙ্গন অনেক বদলে গেছে। আপনি কি বদলাতে পেরেছেন?
চেষ্টা করেছি। সফলভাবে বদলাতে পেরেছি কি না, জানি না। সম্প্রতি প্রকাশিত আমার গানগুলো শুনলে শ্রোতারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন।
প্রশ্ন :
এখনকার তরুণ শিল্পীরা আপনাদের মতো দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারবেন বলে মনে করেন?
অনেকের ভেতরে বিপুল সম্ভাবনা দেখেছি। এ রকম সম্ভাবনাময় অনেকে আবার হারিয়েও গেছে। খুব ভালো গাইছে, তিন-চার বছর পর দেখি সে নেই। এখনো অনেকে ভালো করছে। কত দিন ভালোটুকু ধরে রাখতে পারবে, সেটাই দেখার বিষয়।
প্রশ্ন :
ভালোটুকু ধরে রাখতে না পারার কারণ কী?
সংগীত অন্য রকম একটা চর্চার বিষয়। তরুণ শিল্পীরা একটু পরিচিতি পেয়ে গেলে ভাবে অনেক কিছু পেয়ে গেলাম, শিল্পী হয়েই গেলাম, আর চর্চা না করলেই কী! শিল্পী হওয়া অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। শিল্পী হওয়ার চেষ্টা সারা জীবন করে যেতে হয়। আমাদের অনেক গুণী শিল্পী আছেন, যাঁরা নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন, যাঁদের সামনে আমরা কিছুই না, যাঁদের ধারেকাছেও আমরা যেতে পারিনি। আসলে গানটাকে ভালোবাসতে হবে, চর্চা করতে হবে, বুকের ভেতর রাখতে হবে। একে বুকের ভেতর থেকে বের করে দেখানোর কিছু নেই।
প্রশ্ন :
সংগীতাঙ্গন নিয়ে আক্ষেপ আছে আপনার?
আক্ষেপের সীমা নেই। আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো শিল্পী আছেন, যাঁদের কোনো প্রচার নেই, তাঁরা চানও না। তাঁরা সংগীত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অনেকে এমনও বলেন, এ দেশে গান-বাজনা করে কিছু হবে না। একজন শিল্পী বড় হতে হতে কত বড় হবে? শেষ পর্যন্ত তাঁকে তো অনুদানের জন্য হাত পাততে হয়। আজ যদি আমি বিপদে পড়ি, কতজন শিল্পী আসবে আমাকে সাহায্য করতে? শিল্পীদের শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাহায্য চাইতে হয়। যদিও তিনি সব সময় শিল্পীদের সহযোগিতা করেন। আমার নিজের ঘরে অসুস্থ মানুষ আছে। আমি কারও কাছে হাত পাততে পারছি না। নিজের যা ছিল সব খরচ করে প্রায় নিঃস্ব হয়ে বসে আছি। শিল্পীদের জীবন কি তাহলে এভাবেই চলবে? সারা জীবন তিনি মানুষকে গান শুনিয়ে যাবেন, সবাই মিলে তাঁকে বঞ্চিত করবে আর শিল্পীরা দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাবেন?
প্রশ্ন :
শিল্পীদের জন্য আমাদের কী করা প্রয়োজন ছিল?
আমাদের দেশে রয়্যালটি সিস্টেম নেই, কপিরাইট নেই। যেখানে-সেখানে আমাদের গান বেজেই চলেছে, আমরা রয়্যালটি পাই না। একবার গান করি, অনেকবার চালায়, প্রতিবার চালানোর জন্য স্পনসরও পায়। আমাদের প্রাপ্য কি আমাদের দেওয়া হচ্ছে? শিল্পীদের দুরবস্থা হয় এ কারণেই। আমাদের পাশের দেশ ভারতে লতা মঙ্গেশকর রয়্যালটি হিসেবে যে অর্থ পান, সেসব তিনি জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন তহবিলে দান করছেন। আর আমরা নিজেরাই চলতে পারি না। এমনকি আমাদের দেশে এমন কোনো জায়গাও নেই, যেখানে গিয়ে আমরা মনের এই আক্ষেপগুলো প্রকাশ করতে পারি। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার কেউ নেই। যাঁদের করার কথা, এ রকম কিছু লোক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্তা হয়ে বসে আছেন, নাম উচ্চারণ করতে চাই না। তাঁরা যেটুকু করছেন, নিজের জন্য করছেন। অথচ সংগীতাঙ্গনের জন্য তাঁদের কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। আমার মতো অনেক শিল্পী আছেন, যাঁরা এত বছর গান করে কিছুই করতে পারেননি। কিছু লোক অল্প দিনের জন্য এই অঙ্গনে এসে গাড়ি-বাড়ি করে গানবাজনা ছেড়ে এখন অন্য কাজ করছে।
প্রশ্ন :
‘ঘরে বসে শোনাব গান’ অনুষ্ঠানে কোন গানগুলো শোনাবেন?
আলাউদ্দীন আলীর সুরে আমার নিজের গান ‘তোমাকে ছেড়ে এসে প্রতি সন্ধ্যায়’, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি ফুলকে যেদিন ধরে-বেঁধে’, রবিন ঘোষের ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভালো’, মোসলেহ উদ্দীনের সুরে ‘তারা ভরা রাতে’ এবং নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর সুরে ‘তোমার যাবার সময় বুঝি’ গানগুলো।