‘এ বছর আমার একটি ভুল ধারণা ভেঙে গেছে'

নতুন স্বাভাবিক নিয়ম মেনে শুটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন তানজিন তিশা। তাঁর অভিনয়জীবনে নতুন বাঁক হিসেবে যুক্ত হলো ওয়েব সিরিজ ‘শিকল’। দীর্ঘ কয়েক মাসের বিরতি দিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করায় অনেক নতুন অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি হচ্ছে তিশার। সেই সব কথাই অকপটে বলে গেলেন তিশা।

তানজিন তিশা
সুমন ইউসুফ
প্রশ্ন:

করোনার সঙ্গনিরোধকাল শেষ করে কাজ শুরু করলেন কবে থেকে?

গত মাস থেকে। ঈদুল আজহার পরপরই নিয়মিত শুটিং শুরু করেছি। তবে একটানা কাজ করছি না। একটু করে বিরতি নিয়ে কাজ করছি। চেষ্টা করছি করোনার মধ্যে কাজ করলেও নিজেকে ও পরিবারকে নিরাপদ রাখতে।

প্রশ্ন:

এত সময় নিলেন কেন?

ঈদুল আজহার আগে আগে আমার সহশিল্পীদের প্রায় সবাই শুটিং শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাসায় আমার বাবার শরীর একটু খারাপ ছিল। তাই তাঁর ও পরিবারের বাকিদের কথা ভেবে আমি তখন আর কাজে যোগ দিইনি। ঈদের কাছাকাছি সময়ে দেখলাম বাসায় থেকে উৎসবের কোনো আমেজ পাচ্ছি না। খুব ইচ্ছা করছিল ঈদের দু–একটা কাজ করি। তাই সব ধরনের সতর্কতা মেনে তখন দুটো কাজ করি— ‘ভুল এই শহরের মধ্যবিত্তদেরই ছিল’ আর ‘ফোরটিন ডেজ’। এই দুটো কাজ থেকে যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি, তাতে আগের বছরগুলোর মতো ঈদে বেশি বেশি নাটক বা টেলিছবি না করার আফসোস কেটে গেছে। তা ছাড়া বেশ আগে শুটিং করা ‘পলিটিকস’ নাটকটিও এই ঈদে প্রচারিত হয়। সেটা থেকেও ভীষণ ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছি।

তানজিন তিশা
প্রথম আলো
প্রশ্ন:

কাজের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আপনার ভক্তরা হতাশ হচ্ছেন না?

মনে হয় না। এ বছর আমার একটি ভুল ধারণা ভেঙে গেছে। আমি ‘ভুল এই শহরের মধ্যবিত্তদেরই ছিল’ নাটকে অভিনয় করায় অনেক দর্শকের ফোন আর বার্তা পেয়েছি। তাঁরা প্রশংসা করেছেন, সোশাল মিডিয়াতে এসব নিয়ে লিখেছেন। মাত্র দুটি নাটকে কাজ করে এত দর্শকের কাছে পৌঁছে যাওয়ার ব্যাপারটা আমাকে নতুন করে ভাবিয়েছে। এখন বুঝতে পারছি, অনেক অনেক নাটকে অভিনয় করলেই যে দর্শকের কাছে পৌঁছানো যায়, তা ঠিক নয়। ভালো নাটক একটি বা দুটিই যথেষ্ট, সেটাই শিল্পীকে দর্শকের কাছে নিয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন:

আপনি প্রথমবার ওয়েব সিরিজে কাজ করলেন। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

‘শিকল’ নামের ওয়েব সিরিজটির গল্প নারীকেন্দ্রিক। এর কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম ‘নন্দিনী’। আমি এ চরিত্রেই অভিনয় করেছি। স্ক্রিপ্ট পড়ামাত্র মনে হয়েছে নন্দিনী একজন অভিনেত্রীর জীবনের স্বপ্নের চরিত্র। তাই সুযোগটা পেয়েই রাজি হয়ে যাই। এই এক নন্দিনীর ভেতর ছয়-সাতটি রূপ, যা অল্প সময়ের মধ্যে নিজের ভেতর ধারণ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমার তিন বছরের অভিনয়জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল এটি। নন্দিনী হয়ে ওঠার জন্য আমাকে একই সঙ্গে অনেকগুলো চরিত্রের ভেতর ঢুকতে হয়েছে। এতগুলো রূপ ফুটিয়ে তোলা সহজ কথা নয়। শুটিংয়ের দুদিনের মাথায় আমি পুরো নন্দিনী হয়ে গিয়েছিলাম। সিরিজটি শেষ করে অন্য কাজে ঢুকতে গিয়ে বিপদেই পড়ে গেলাম। কারণ, আমি নতুন চরিত্রে ঢুকতে পারছিলাম না, তখনো নন্দিনীতেই আটকে ছিলাম।

তানজিন তিশা
প্রথম আলো
প্রশ্ন:

এখন থেকে কি নিয়মিত ওয়েবে কাজ করবেন?

সামনে বেশির ভাগ প্রযোজনাই ওয়েবকেন্দ্রিক হয়ে যাবে। সুতরাং ভালো গল্প ও ভালো পরিচালকের কাছ থেকে প্রস্তাব পেলে নিয়মিতই ওয়েবে কাজ করব। সব ঠিকঠাক থাকলে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে একটি ওয়েব ফিল্মের শুটিংও শুরু করছি।

প্রশ্ন:

চিত্রনায়ক শাকিব খানের বিপরীতে এবং প্রথম সারির পরিচালকের সঙ্গে কাজের প্রস্তাব ছিল, করলেন না কেন?

সবই ঠিক ছিল। শুধু গল্পটাই ভালো পাইনি। এ কারণে কাজটি করা হয়নি। সত্যি বলতে, আমি যে কাজ করব, সেটায় অভিনয়ের জায়গা থাকতে হবে। ছবিতে নাচ–গান থাকল কিন্তু অভিনয়টাই থাকল না, এমন হলে চলচ্চিত্রে কাজ করব না। তবে একসময় ওয়েব সিরিজ করতে চাইনি, এখন করছি, ওয়েব ফিল্মও করব। এভাবে একদিন ব্যাটে–বলে মিলে গেলে চলচ্চিত্রেও কাজ শুরু করে দেব।

তানজিন তিশা
প্রথম আলো
প্রশ্ন:

আপনার ব্যক্তিজীবনে কী চলছে? প্রেম–বিয়ে এসব নিয়ে ভাবছেন না?

যদি বলি আমি সিঙ্গেল, তাহলে একেক সময় একেক ঘটনায় কোনো কারণ ছাড়াই নানা মানুষের সঙ্গে আমাকে মেলানো হবে। আমি দেখেছি, এসব বিষয় নিয়ে কিছু মানুষ মজা পায়, মজা নেয়। আবার যদি বলি প্রেম করছি, তাহলেও একদল লোক উল্টাপাল্টা কথা বলবে। তখন মনে হয়, তারকাদের প্রেম-ভালোবাসা অপরাধ। তাই ব্যক্তিজীবনের গল্প ব্যক্তিগতই থাক। কিছু না বলি। বিনোদন অঙ্গনের তারকাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো কিছু মানুষ ভালোভাবে নিতে চায় না।