এটা আমার কাছে অবাক করার মতো ঘটনা: তানভীর ইভান
২০১৩ সালে নিজের লেখা ও সুরে চট্টগ্রামের তরুণ তানভীর ইভান ‘ম্যায়নে রোয়া’ নামে প্রথম হিন্দি গান রেকর্ড করেন। ২০২০ সালে গানটি নতুন করে ইউটিউবে আপলোড করা হয়। গতকাল পর্যন্ত গানটি ইউটিউবে সাড়ে সাত কোটি ভিউ হয়েছে। ২০১৬ সালে, ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ নাটকে ‘অভিযোগ’ গান গেয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। ২০২০ সালে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড ৩’ নাটকের ‘অভিমান’ গানটি এই তরুণ শিল্পীর জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দেয়। এই গান দিয়েই তিনি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের এবারের আসরে তারকা জরিপে সেরা গায়কের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। তাহসান, ইমরানকে পেছনে ফেলে ইভানের পুরস্কার জেতার ঘটনা চমকে দেয় সবাইকে। ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ শিল্পীর ৯ বছরের সংগীতজীবনে প্রকাশিত গানের সংখ্যা মাত্র ১৫। অধিকাংশ গান ইউটিউবে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। গান নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানালেন ইভান।
প্রশ্ন :
২৭ মে সেরা গায়কের পুরস্কার জিতলেন। এরপর এক সপ্তাহ কাটল। কেমন যাচ্ছে সময়?
অনেক চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি। যেহেতু একটা পুরস্কার পেলাম, নিজেকে দায়িত্ববানও লাগছে। জীবনের অন্য রকম সময় পার হচ্ছে। নতুন গান রেকর্ডিং নিয়ে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে আরকি। তাই চাপটা বেশি।
প্রশ্ন :
এ সপ্তাহে কয়টি গান রেকর্ড করা হয়েছে?
তিনটি গানের পরিকল্পনা আছে। একটি গান রেকর্ড করেছি। আমার কথা ও সুরে। দ্বৈত এই গান ঈদের সময় মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। বাংলা ও হিন্দি দুই ভাষায় গানটি তৈরি হবে। আমার সঙ্গে আছেন মুম্বাইয়ের আনশিখা। এটি রোমান্টিক গান। কম্পোজিশন করছেন পিরান খান।
প্রশ্ন :
এর মধ্যে দেশের কোনো সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কি?
এ রকম কোনো যোগাযোগ এখনো আসেনি। আমার আগের কাজগুলোর দিকে বেশি ফোকাসড এখন।
প্রশ্ন :
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সেরা গায়ক হিসেবে জয়ী হবেন, কখনো ভেবেছিলেন?
এটা কখনোই ভাবিনি। এটা আমার কাছে অবাক করার মতো। ঘোষণার আগমুহূর্ত পর্যন্তও জানতাম না, পুরস্কার পাব, জিততে পারব। যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ভীষণ প্রতিভাবান এবং অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু, আমার এটাই ভালো লাগল যে তাঁদের ভেতর আমি পুরস্কার জিততে পেরেছি।
প্রশ্ন :
গানের প্রতি ভালো লাগা তৈরি হয় কবে?
আমি যখন ষষ্ঠ বা শ্রেণিতে পড়ি, তখন থেকে। বাবাকে ছোটবেলা থেকে গান করতে দেখেছি। গানের প্রতি ভালো লাগার তিনি অন্যতম কারণ।
প্রশ্ন :
আপনার অনুপ্রেরণা কে?
কারও কাছ থেকে আমার গানের তালিম নেওয়া হয়নি। আমি ছোটবেলা থেকে আতিফ আসলামের দ্বারা বেশি অনুপ্রাণিত ছিলাম। তাঁর গান শুনে শুনে বড় হয়েছি। তাঁর গান শুনে শুনে ঠিক ওই রকম গান গাওয়ার আগ্রহ হতো। আমার ইচ্ছা ছিল, গান গাইলে এ রকমই গাইব। চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজে আমি পড়েছি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ওখানে শেষ করেছি। আমার বন্ধুরাও গানের ব্যাপারে ভীষণ উৎসাহ জোগাত। বন্ধুদের মধ্যে থাকলে ওরা না বললেও আমি নিজে থেকে গান গাইতে থাকি।
প্রশ্ন :
গান নিয়ে কী স্বপ্ন দেখছেন?
আমার অনেক ভালো কাজ করার ইচ্ছা। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছা। যেহেতু ভারতের সঙ্গে কাজ চলছে, অন্য দেশের সঙ্গেও কাজ করব। ভালো গায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।
প্রশ্ন :
গানে কখনো তালিম নেওয়া যেহেতু হয়নি, এখন কি শেখার কোনো তাগিদ অনুভব করছেন?
সত্যি বলতে, শেখা সবারই দরকার। সবারই জ্ঞান নেওয়া দরকার। পরিকল্পনা আছে সামনে সংগীত নির্মাণ নিয়ে কিছু শেখার। সামনে নিজের সংগীত নিজেই করার ইচ্ছা। পুরস্কারের আগে থেকেই এই পরিকল্পনা ছিল।
প্রশ্ন :
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার আপনার স্বপ্নকে কতটা এগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন?
এই পুরস্কার শুধু আমার স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে নয়, আমার জন্য বিরাট অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। যেহেতু সেরা সংগীতশিল্পী পুরস্কার, সবার কাছ থেকে ভালোবাসা, সম্মানও অনেক বেশি পাচ্ছি। এ কারণে একটা প্রেরণা আসছে আরকি, যা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে অনেক।
প্রশ্ন :
আপনার গানগুলোর কথায় না পাওয়ার বেদনা বেশি। এই বয়সে এত হাহাকার কেন?
(হাসি)। আমার গানের কথাগুলো বাস্তবতা থেকে নেওয়া। তবে বিষয়টা এমন নয় যে এসব আমারই জীবনের গল্প। এ রকম কিন্তু অহরহ চারপাশে হচ্ছে। সবাই ভালোবাসার মানুষ পান না। পরিবার থেকেও অনেকেই ভালোবাসা পান না। আমি জীবন থেকে কষ্ট নিয়ে গান তৈরি করার চেষ্টা করি। তবে আমার পরবর্তী যে গান আসবে, সেটা পুরোপুরি রোমান্টিক। তবে একটা বিষয় আমার মনে হয়, না পাওয়ার বেদনা, হাহাকারের কথা নিয়ে তৈরি গান মানুষের মনকে দ্রুত স্পর্শ করতে পারে। আমার ফেসবুক ইনবক্সে ঢুকলেই তা বুঝতে পারি। ইউটিউবে মন্তব্যের ঘরেও তা দেখি।
প্রশ্ন :
গান লেখা ও সুর তৈরির কাজ সাধারণত করেন কখন?
আমি দিনে ঘুমাই, রাতে কাজ করি। রাতে অনুভূতি প্রকাশ করতে অনেক সহজ হয় বলে মনে করি। তবে আমার এই নিয়ম অন্য কাউকে অনুসরণ করতে হবে, এমনটা নয়।
প্রশ্ন :
রাতে কাজ করতে গিয়ে মা–বাবার বকুনি খেতে হয়েছে কি?
কখনোই না। আমরা থাকি চট্টগ্রামের খুলশীতে। তবে একটা কথা বলি, আশপাশের মানুষের যেন অসুবিধা না হয়। আমি গান করি, এটাতে আমার মা–বাবা ভীষণ খুশি। সত্যি বলতে বাবা বেশি খুশি, মা একটু চিন্তায় থাকেন, কিন্তু খুশি। আর দুই বোন তো ভীষণ ভীষণ সমর্থন করেন। বোনেরা আমাকে বলেন, তাঁদের বন্ধুরাও আমার গানের প্রশংসা করেন।
প্রশ্ন :
শুনেছি আপনার সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছা। কেন?
সম্প্রতি আমার এই ইচ্ছা হয়েছে, আমি যে সিনেমায় গাইব, হয়তো সেই সিনেমায় আমি অভিনয়ও করব। (হাসি)। অভিনয়ের ইচ্ছাটা কেন হয়েছে জানি না। তবে ইচ্ছা করছে আরকি। অভিনয় যদি শুরু করি, নিয়মিতই করতে চাই।