তাঁদের সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব: জায়েদ খান
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান থাকবেন কি থাকবেন না, এ নিয়ে আপিল বোর্ড আজ শনিবার সিদ্ধান্ত নেবে। তবে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে কাল। এদিকে জায়েদ সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, আপিল বোর্ডের সভায় তিনি থাকছেন না। উল্টো আপিল বোর্ডের সদস্যসহ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পাঁচজনের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন জায়েদ খান। এসব নিয়েই গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কথা বলেন তিনি।
প্রশ্ন :
শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে যা হচ্ছে, এ নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
আপিল বোর্ডের সবকিছু আমরা মেনে নিয়ে, হাত মিলিয়ে চলে গেলাম। ঘটনা কিন্তু শেষ। রাত সাড়ে আটটার দিকে আমার পিয়ন জামান যাচ্ছে এফডিসির দিকে, তাকে একটি চিঠি ধরিয়ে দেয়।
প্রশ্ন :
জামান শিল্পী সমিতির পিয়ন, নাকি আপনার পিয়ন?
শিল্পী সমিতির পিয়ন। তাকে একটা চিঠি ধরিয়ে দিল। ওই চিঠি ধরিয়ে দেওয়ার একটা ভিডিও আছে আমার কাছে। তখন জামান বলছিল, ‘আমার কাছে কোনো সিলটিল নেই, পাঁচটার পর আমি কোনো চিঠি রাখতে পারব না।’ তারপরও যে চিঠি এনেছে, সে বলল, ‘হাতে রাখো, পরে কথা বলব।’
প্রশ্ন :
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠির প্রসঙ্গে যদি বলতেন।
সংশোধনী ফলাফলসহ ৩০ জানুয়ারি বিকেল পাঁচটার মধ্যে চূড়ান্ত ফলাফল হয়ে গেল। কোথা থেকে সোহান ভাই ১ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিল, এটা আমার প্রশ্ন। তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চিঠিটা পাঠিয়েছেন। এরপর কাল (আজ শনিবার) মিটিংয়ে ডাকছেন, এটা আসলে কিসের ভিত্তিতে? সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো অধিকার নেই আমাদের চিঠি দেওয়ার। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাসূত্রই নেই, তাদের কোনো অধিকারই নেই। বড়জোর মন্ত্রণালয় আমাদের সমিতির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে পারে। নির্বাচন উপলক্ষে আমরা একটা আপিল বোর্ড করে দিয়েছি। ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আপিল বোর্ডের মেয়াদ। ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনও শেষ। সেখানে সোহান ভাই কীভাবে এমন একটি কাজ করলেন! কোনো দিন একটা মিটিংয়েও আসেননি, দূরে দূরে থাকেন। কোথা থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটা চিঠি পাঠান! বলেন, ‘মিটিং আছে, আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটা মিটিং আছে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি, আপনাকে উপস্থিতি থাকতে হবে।’ এটা তিনি কিসের ক্ষমতায় করেন!
প্রশ্ন :
তফসিলে তো এসব নিয়ে পরিষ্কার কিছুই লেখা নেই।
সবকিছু তো আর ওভাবে লেখার কিছু নেই।
প্রশ্ন :
আপনাকে নিয়েই কেন এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন?
একদমই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার সঙ্গে এসব করা হচ্ছে। সোহান ভাই (সোহানুর রহমান সোহান) ও হোসেন ভাই (মোহাম্মদ হোসেন) এসবের পেছনে জড়িত। আপিল বোর্ডের আরেকজন সদস্য জেমী ভাই এখন আমেরিকায়, তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আপিল বোর্ডের দুই সদ্যসের এমন আচরণে তিনি অবাক হয়েছেন। আমার কথা হচ্ছে, এরপরও যদি শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে কারও কোনো বক্তব্য থাকে, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এখানে চিঠি–চালাচালি হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক, অনিয়মতান্ত্রিক, অগণতান্ত্রিক ও আইনের বাইরে।
প্রশ্ন :
এখন আপনি কি মিটিংয়ে থাকবেন?
আমি কেন মিটিংয়ে থাকব। মিটিংয়ে থাকলে তো অন্যায়টা স্বীকার করে নিলাম। এখানে তো আপিল বোর্ডই নেই। আমি মিটিংয়ে যাওয়া মানে তো আপিল বোর্ডকেই স্বীকার করে নিলাম।
প্রশ্ন :
তাহলে আপনার উকিল নোটিশ পাঠানোর কারণ কী?
আমি তাঁদের সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। তার আগে উকিল নোটিশ দিলাম। আমি তিন–তিনবারের সাধারণ সম্পাদক, তাঁদের বলতে চেয়েছি, আপনারা কোনোভাবে অগণতান্ত্রিক উপায়ে মিটিংয়ে আমাকে ডাকতে পারেন না।
প্রশ্ন :
আইনগত কী ব্যবস্থা নেবেন?
আমি মামলা করব।
প্রশ্ন :
কার বিরুদ্ধে?
অনৈতিকভাবে চিঠি–চালাচালি করে যাঁরা সমিতির সম্মান নষ্ট করছেন, সবার বিরুদ্ধে মামলা করব। একটা নির্বাচনী তফসিলকে অসম্মান করছেন। তাঁরা কেউই তো তফসিল মানছেন না। আমি নোটিশ করেছি পাঁচজনকে। আপিল বোর্ড ও মন্ত্রণালয় মিলিয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করব।
প্রশ্ন :
আপনি কিন্তু এর আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে একাধিকবার বলেছিলেন মামলা করার কথা। সর্বশেষ বলেছিলেন, নিপুণকে প্রধান আসামি করে মামলা করবেন। কিন্তু পরে আর সেসবের আপডেট পাওয়া যায়নি।
করিনি, সেটারও একটা কারণ আছে। দিন শেষে আমার যখন মনে হয়েছে, আমি সেক্রেটারি, আমার ৫০০ শিল্পী এখন সমান। আমি যেহেতু তিন-তিনবারের সেক্রেটারি, আমি চাইনি আমাকে দেখে আরও ৫০০ শিল্পী শিখুক, মামলা–মোকাদ্দমা করুক। এরপরও যদি তাঁদের শুভবুদ্ধির উদয় হয় আরকি। রাগে তো রাগ বাড়ায়, ভালোবাসায় ভালোবাসা বাড়ায়। আমি কেন এসব ঝামেলায় জড়াব। আর আমরা তো মারামারি করার জন্য আসিনি।
প্রশ্ন :
নাকি নিপুণের ১০০ মামলার ঘোষণায় আপনি ভয় পেয়েছেন?
নিপুণের মামলার কথা তো আমি মাথায়ই নিইনি। এগুলো যার করার সে করবেই। আমার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে, কেউ মামলা করবে। বরাবরই আমি নরমসরম করে কথা বলছি। আজ আমি নির্বাচিত না হলে তো এত কথা বলতাম না, মাথা নিচু করে তাকে ফুল দিতাম।
প্রশ্ন :
আপনি বলছিলেন, শিল্পীদের কথা ভেবে মামলা থেকে সরে এসেছেন। কিন্তু এখন যদি মামলা করেন, তাহলে কি চলচ্চিত্রের মানুষদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে না?
আপনি তো আমাকে সব সময় নেগেটিভ প্রশ্ন করছেন। পজিটিভ প্রশ্ন করেন। মামলার বিষয়টায় কখন যাব, যদি লিগ্যাল নোটিশ না মানে। আমি চাই লিগ্যাল নোটিশের পর থেমে যাক, তাহলে তো মামলা করার প্রশ্নই আসে না।
প্রশ্ন :
সর্বশেষ প্রশ্ন, শোনা যাচ্ছে, শিল্পী সমিতিতে প্রশাসক নিয়োগের সম্ভাবনা আছে।
প্রশাসক নিয়োগ বললেই তো হয় না। আগে অনিয়মের তদন্ত করুক। নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে কি না, এসব দেখুক। তারপর নাহয় দেখা যাবে।