প্রথম আলো :
বিরতির পরে নিয়মিত শুটিংয়ে ফিরেই ছাত্র আন্দোলনের মুখে পড়লেন। একের পর এক স্থগিত হচ্ছিল শুটিং। তখন কী মনে হচ্ছিল?
তাসনুভা তিশা: এবার ফেরার পরে খুবই চিন্তা হচ্ছিল। কেউ আমাকে নিয়ে নাটক বানাবে কি না, কেউ প্রযোজনা করবে কি না, বলা যায় অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়েই একধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। কারণ, আমাকে নিয়ে কাজ না হলে তো দর্শকের কাছে যেতেও পারব না। কিছু কাজ হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একের পর এক নাটকের শুটিং বাতিল হচ্ছিল। আবার দেখা গেল, আন্দোলন শেষ। ইউটিউবে নাটকের দর্শক নেই। তার মধ্যে নাটক মুক্তি পাচ্ছিল আর আমি ভয়ে দিন পার করছিলাম। পরে তো দর্শকদের কাছে যেতে পেরেছি।
প্রথম আলো :
আগেও ব্যক্তিগত কারণে বিরতি নিয়েছেন, প্রতিবার নতুন করে আবার দর্শকের কাছে আসতে হয়েছে।
তাসনুভা তিশা: বিরতির পরে একেবারে নতুন করেই শুরু করতে হয়। দেখা যায় আমি ফর্মে ছিলাম, নিয়মিত কাজ করছি, সেখানে থেকে ব্যক্তিগত কারণে বিরতি নিয়েছি। কিন্তু সময় তো কারও জন্য অপেক্ষা করে না। মা হওয়ার আগে ও পরে দীর্ঘ একটি বিরতি দিয়েছি। যে কারণে দর্শকের আগ্রহ নিয়েই বেশি ভেবেছি, দর্শক আমাকে কতটা নেবে...আমি কি আর ফর্মে ফিরে যেতে পারব। এই জন্য ঠিক পরীক্ষার সময়ের মতো সচেতন হয়ে নিয়মিত ডায়েট, জিম করে শরীর ঠিক করেছি। সেখানে বাধাবিপত্তি পেরিয়ে দুঃসময়েও পাস করে গেছি।
প্রথম আলো :
কীভাবে বুঝলেন পাস করে গেছেন?
তাসনুভা তিশা: এই সময়ে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারত। সেখানে দর্শক আমার নাটক দেখছেন, নিয়মিত অভিনয় করতে পারছি, ওটিটির কাজ করলাম। পরিচালকেরা আমাকে ভাবছেন। এটাই আমার কাছে পাস করার মতো। আবার আগস্ট ১৪ ওয়েব সিরিজের মতো চিত্রনাট্য এখন আর পাচ্ছি না, এটা আমার ব্যর্থতা। এর মধ্যে ব্যাচ ২০২৩, বকুলফুল, নেটওয়ার্কের বাইরেসহ কিছু কাজ করেছি। কিন্তু আমার চরিত্রগুলো সেভাবে দর্শকের কাছে পৌঁছায়নি। এটা বুঝেছি, আমার কাছে দর্শকের প্রত্যাশা অনেক বেশি। চার দিন আগে মুক্তি পাওয়া সেকশন ৩০২ নিয়েও একই কথা বলব।
প্রথম আলো :
পুলিশের চরিত্র কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
তাসনুভা তিশা: মহানগর–এর কথা সব সময়ই আমার মাথায় ছিল। সেখানে তো মোশাররফ করিম ভাই সেরা অভিনয় করেছেন। তবে আমি চেয়েছিলাম নারী পুলিশ হিসেবে কোনো চরিত্রকে মাথায় না নিতে। ভালো–মন্দ মিলিয়েই চরিত্রটা। প্রথমবার পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে দেখলাম কাজটা অনেক কঠিন। কারও সঙ্গে যেন মিলে না যায়, একটা স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। তবে নিজের কাছেই মনে হয়েছে, আমি হয়তো সফল হতে পারিনি।
প্রথম আলো :
নাটকের নতুন জুটি তাসনুভা তিশা–আরশ খান
তাসনুভা তিশা: কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই জুটি হয়ে গেছে। আমার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনোই জুটি হয়ে কাজ করিনি। আমি সবার সঙ্গে কাজ করেছি। কারণ, জুটিপ্রথার মধ্যে নেই। সেখানে হঠাৎ করেই আরশ খানের সঙ্গে জুটি হয়ে গেল। ভক্তরা যে গ্রহণ করেছেন, এটাকে আশীর্বাদ বলব। কারণ, আরশ আর তানিয়ার ভালো একটি জুটি ছিল। তারা যখন সিদ্ধান্ত নিল একসঙ্গে অভিনয় করবে না। পরে একসঙ্গে কাজ করতে শুরু করলাম। তখন নতুন জুটি হওয়া নিয়ে আতঙ্কিত হয়েছিলাম। তানিয়া বৃষ্টিকে তাঁর সঙ্গে আগে ভালো মানাত, তাদের হিউজ দর্শক ছিল। এখান আমাকে দর্শক কীভাবে নেবে, আমাদের মানাবে কি না, এগুলো ভাবিয়েছে।
প্রথম আলো :
হঠাৎ তুমি এলে, তবুও জীবন, আই কুইটসহ একসঙ্গে বেশ কিছু কাজ নিয়ে ভক্তরা কী বলছেন?
তাসনুভা তিশা: প্রথম দিকে দু–একটি নাটকের মন্তব্য নিয়ে ভয়ে ছিলাম। তখন দর্শক মন্তব্য করছিলেন আরশের সঙ্গে আমাকে মানায়নি, তানিয়া বৃষ্টিই ভালো ছিল, ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন চিন্তায় পড়ে যাই। একসঙ্গে বেশ কিছু কাজ দেখার পরে দর্শক পছন্দ করতে থাকেন।
প্রথম আলো :
এখন তাঁরা আমাদের নিয়ে পজিটিভ কথা বলেন। কেউ কেউ গুজবও ছড়ান।
কী গুজব?
তাসনুভা তিশা: অনেকেই মন্তব্যে বা বিভিন্ন গ্রুপে লেখেন আমরা প্রেম করছি। কেউ কেউ লেখেন আমাদের বিয়ে করা উচিত। আমি হাসব নাকি কাঁদব (হাসি)। আমি যে বিয়ে করেছি, সেটাই অনেকে জানে না। শুধু আমাকে নিয়েই কিন্তু গুজব না। কয় দিন আগে আরশের সঙ্গে সুনেরাহ অভিনয় করেছেন। এ নিয়ে আরশকে দেখলাম এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়েছে, তাঁরা প্রেম করছেন কি না। একসঙ্গে অভিনয় করতে গেলে গুজব ছড়াবেই। এ জন্য তো কাজ বাদ দিয়ে বসে থাকা যাবে না। জুটি নিয়ে দর্শকদের কানাঘুষা সব সময়ই ছিল, এখনো আছে। শৈশবে মনে করতাম আলমগীর-শাবানা বিয়ে করেছেন। আবার সালমান শাহকে এত পরিমাণ শাবনূরের সঙ্গে দেখেছি, মনে করতাম তারা প্রেম করে, বিয়েও করবে। সালমান শাহ মারা যাওয়ার পরে জেনেছি, সে বিয়ে করেছিল।
প্রথম আলো :
একসঙ্গে শুটিং করতে গিয়ে কখনো কারও প্রেমে পড়েছেন?
তাসনুভা তিশা: আমার কত বছরের ক্যারিয়ার, এক যুগ তো হবেই। এই সময় তো কারও কারও প্রেমে পড়তেই পারি। প্রেমে পড়া কি খারাপ? শুটিংয়ে গিয়ে একবার একজনকে পছন্দ হয়েছিল। সেটা বেশি দূর এগোয়নি। নিজেই সেখান থেকে বের হয়ে আসছি। তখন হয়তো প্রেমের বয়স ছিল। কিন্তু এখন নিজের কাছেই মনে হয় প্রেমের বয়স নেই। এখন কাজের সঙ্গে প্রেম করার বয়স। সত্যি বলতে, আমি অনেক দিন ভালো গল্প পাচ্ছি না। ভালো গল্প, চরিত্রের জন্য অধীর হয়ে বসে আছি। এই ভালোবাসার কথা আমি কাউকেই বলতে পারছি না। আমি একটু চুপচাপ স্বভাব। কোনো পরিচালক, প্রযোজকের কাছে কখনোই গল্প, চরিত্র চাইতে পারি না। লবিং না কী বলে, এগুলো আমি পারি না।
প্রথম আলো :
বরিশালে দুই নাটকের শুটিংয়ে নতুন অভিজ্ঞতা কী হলো?
তাসনুভা তিশা: গতকাল শুটিং শেষে ফিরেছি। আমি আর আরশ ছিলাম। শুটিং করতে গিয়ে এত দর্শক যে শেষ করতে বেগ পেতে হয়েছে। তরুণ ছেলেমেয়েরা ব্যাপক ক্রেজি। কেউ কেউ আরশের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য দুই দিন অপেক্ষা করেছে। যেখানে শুটিং করেছি, সেই স্কুলেও ছুটি দেওয়া হয়েছিল। মানুষের চাপে শুটিং করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এমন অবস্থা যে বাইকেও শুটিং লোকেশনে যেতে পারিনি। পারলে মানুষ টেনে নামিয়ে ছবি তোলে। এক মহিলা তো টেনে আমাকে প্রায় ফেলেই দিয়েছিলেন। একসময় ভক্তদের চাপ সামলাতে সামান্য পথ অনেক ঘুরে যেতে হয়েছে। আমাদের নাটক এত বেশি পছন্দ করেন যে আমাদের সঙ্গে ছবি তুলতেই হবে। ভক্তদের এই অভিজ্ঞতা ভালো লাগায়।
প্রথম আলো :
অভিনয়, ক্যারিয়ার কখনো দুশ্চিন্তায় ফেলে?
তাসনুভা তিশা: এবার ফেরার পরে ভয় হচ্ছিল। কারণ, অভিনয় ছাড়া আর কিছুই পারি না। দর্শক যদি গ্রহণ না করে, তাহলে তো অভিনয় ক্যারিয়ার শেষ। তখন অবশ্য এটাও ভেবেছিলাম, দর্শক গ্রহণ না করলে পরিচালনায় নামব। আমার অনেক আগে থেকে ইচ্ছা নাটক পরিচালনা করা। তবে দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞতা। আরেকটা বিষয় ভাবায়, জুটি। জুটি হওয়ার কারণে আমাকে যদি অন্যরা না ডাকে। আমি সবার সঙ্গেই অভিনয় করে যেতে চাই।
প্রথম আলো :
শুটিংয়ে থাকলে আপনার সন্তানকে কে দেখাশোনা করে?
তাসনুভা তিশা: আমার আর মায়ের বাসা পাশাপাশি। শুটিং থাকলে বাচ্চাদের মায়ের কাছে রেখে যাই। তখন আর আলাদা করে চিন্তা করতে হয় না। তবে শিশুদের ছেড়ে থাকতে খারাপ লাগে। কিছু করার নেই। শুটিং না থাকলে পুরো সময় পরিবারেই দিই।
প্রথম আলো :
বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?
তাসনুভা তিশা: এখন নাটক বেশি করছি। টানা শুটিং রয়েছে। আর ওটিটি নিয়ে কথা হচ্ছে। আমি চাই যে ওটিটির কাজটায় আমি নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারব সেখানে নাম লেখাতে। ব্যাটে–বলে মিলে গেলেই শিগগির ওটিটির কাজে নাম লেখাব।