প্রথম আলো :
শুটিং শুরু করেছেন?
খায়রুল বাসার: এখনো শুটিং শুরু করিনি। দেশের যে অবস্থা, যে অস্থিরতা; এর মধ্যে কাজ করার মনমানসিকতা ছিল না। এর মধ্যে শুটিং করাটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। কারণ, দেশ ভালো ছিল না। যেখানে শিক্ষার্থীরা অধিকার আদায়ের জন্য জীবন দিচ্ছিলেন, সেখানে শুটিং করার পরিবেশ থাকার কথাও নয়।
প্রথম আলো :
এখন কি শুটিং করার মনমানসিকতায় রয়েছেন?
খায়রুল বাসার: সব পেশার লোক স্বাভাবিকভাবে ফিরছেন। আমাদেরও তো ফিরতে হবে। কত দিন আর ঘরে বসে থাকব। ১৫ আগস্ট থেকে ভিকি জাহেদ ভাইয়ের একটি নাটকের কাজ রয়েছে। সেটা দিয়ে শুটিং শুরু করছি।
প্রথম আলো :
শিডিউল নিয়ে কোনো জটিলতা তৈরি হবে?
খায়রুল বাসার: জটিলতা তৈরি হবে। কারণ, অনেককেই এই সময়ে শুটিংয়ের শিডিউল দেওয়া ছিল। এখন সবার সঙ্গে কথা বলে অ্যাডজাস্ট করেই শিডিউল পুনরায় দেওয়া শুরু করেছি।
প্রথম আলো :
আপনি শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলেছিলেন। এটা নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়েছিলেন?
খায়রুল বাসার: শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলার কারণে অনেক অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এসেছে। ফেসবুক মেসেঞ্জারে অনেকেই হুমকি দিয়েছেন। সেগুলো আমলে নিইনি। কারণ, আমি কোনো দলের নই। এই যে মানুষ মারা হচ্ছিল, আমি তার জন্য কথা বলেছি। আমি অন্যায়কে অন্যায় বলেছি। কথা বলার স্বাধীনতা আমার থাকতে হবে। আপনি লক্ষ করবেন, আমি শুধু এখন নয়, সব সময়ই ন্যায়কে ন্যায় বলেছি। আমি অন্যায় নিয়ে লিখেছি। যাঁরা সমালোচনা করেছেন, তাঁদের গঠনমূলক জবার দিয়েছি।
প্রথম আলো :
একটা সময় শিল্পী হিসেবে অনেকেই স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেননি...
খায়রুল বাসার: দেখুন, শিল্পী হিসেবে আমাদের দেশের জন্য কতটুকুই–বা করার আছে। কিন্তু সেখানে ন্যায়কে ন্যায় বলতে পারব না? এই যে মানুষ হত্যা করা হলো, সেখানে আমার ভাই, বোন, পরিবারের লোক থাকতে পারত, সেটা নিয়ে আমি কেন আমার মত প্রকাশ করতে পারব না?
প্রথম আলো :
কিন্তু আগে তো অনেক শিল্পীকেই কথা বলতে দেখা যায়নি...
খায়রুল বাসার: একজন শিল্পী হিসেবে আমি মনে করি, অন্যায়ের বিরুদ্ধ কথা বলা নৈতিক দায়িত্ব। এটা মানসিক দায়। দেশের অন্যায় নিয়ে মত প্রকাশ করি জরুরি। প্রতিবাদ করলেই পরিবর্তনটা আসবে। আমাদের সাহস নিয়েই অন্যায়কে অন্যায় বলতে হবে।
প্রথম আলো :
শিল্পীরা কি কথা বলার জন্য ঐক্যবদ্ধ হবেন?
খায়রুল বাসার: আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অরাজকতা, অসহিংসতা নিয়ে কথা বলতে হবে। একটা সময় ছিল, কিছু বললেই একটা পক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হতো। সেই চর্চার বিরুদ্ধে কথা বললে হয়তো আরও আগেই অরাজকতা বন্ধ হতো। শিল্পীদের কথা বলতে হবে। শিক্ষার্থীদের এই সফল আন্দোলনের পর বিভিন্ন স্থানে নৈরাজ্য হচ্ছে। দেশের শান্তির জন্য এগুলো নিয়ে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। কারণ, এখানে ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
প্রথম আলো :
শিল্পীর জায়গা থেকে কী ধরনের পরিবর্তন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন?
খায়রুল বাসার: অবশ্যই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সবার ন্যায্য অধিকার সমান হতে হবে। যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাক্স্বাধীনতায় আর কখনোই যেন বাধা না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তাহলে শিক্ষাঙ্গনে এমনিতেই সুস্থ পরিবেশ বজায় থাকবে। শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন নির্বাচন দেবে, সেটা হতে হবে স্বচ্ছ। দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিহিংসা ও সহিংসতামূলক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এ জন্য আলাদিনের চেরাগ হলেও এটা বন্ধ করতে হবে। তাহলেই স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে।
প্রথম আলো :
গত মাসে আন্দোলনের মধ্যেই সর্বশেষ ‘সাড়ে তিন হাত ভূমি’ সিনেমার শুটিং করেছিলেন। সেটির কী অবস্থা?
খায়রুল বাসার: আমাদের শুটিং ছিল একদমই শেষের দিকে। যে কারণে ঝুঁকি নিয়েই শুটিং শেষ করেছি। ১৯ তারিখের পর আর শুটিং করিনি। সেই থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। মাঝের সময়ে পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও শুটিংয়ের মতো পরিবেশে ছিল না।
প্রথম আলো :
আপনার অভিনীত আরেক সিনেমা ‘বনলতা সেন’-এর খবর কী?
সিনেমাটির শুটিং ও ডাবিং শেষ করেছি। এটা আমাদের অনেক পছন্দের সিনেমা। এ বছর মুক্তির কথা ছিল। কিন্তু দেশের এ অবস্থায় সিনেমাটি হয়তো শেষ মুহূর্তে মুক্তি না–ও পেতে পারে। সিনেমা মুক্তির জন্য ভালো একটা সময় দরকার। সবকিছুর মধ্য দিয়ে আমাদের সিনেমা, নাটক, তথা সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে এগিয়ে নিতে হবে।
প্রথম আলো :
এক মাস পর মুক্তি পেল নাটক ‘মেঘদল’...
খায়রুল বাসার: দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নাটকটি আগে মুক্তি পায়নি। পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় দুই দিন আগে মুক্তি পেয়েছে। ৯৫ শতাংশ দর্শকই নাটকটি নিয়ে পজিটিভ মন্তব্য করেছেন। দর্শকদের কোনো কাজ ভালো লাগলেই সার্থকতা।