অ্যানটেনার ওপর বুস্টার লাগিয়ে বাংলাদেশের নাটক দেখতাম

জীবনে প্রথমবার ঢাকায় এসেছেন ভারতীয় অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়; ‘গুলমোহর’ দিয়ে ঢাকায় অভিষেক ঘটছে তাঁর। চরকির জন্য সিরিজটি নির্মাণ করছেন নির্মাতা সৈয়দ আহমেদ শাওকী। গত বৃহস্পতিবার চরকির কার্যালয়ে ‘গুলমোহর’, সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত তেলেগু সিনেমা ‘কল্কি’সহ নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিলেন মকফুল হোসেন

প্রথম আলো:

কলকাতা আর ঢাকার একই ভাষা; সংস্কৃতিও প্রায় অভিন্ন। প্রথমবার ঢাকায় এসে কেমন লাগছে?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: অনেকে তো বিশ্বাস করছেন না, এবারই প্রথম আমি বাংলাদেশ এসেছি। এত বছরে একবারও আসা হয়নি। বিমানবন্দরে পদার্পণের পর থেকে কী যে আপ্যায়নটা পাচ্ছি! এয়ারপোর্টে নেমে ইমিগ্রেশনে যিনি চেক করেছেন, তিনি আমাকে দেখে একটা হাসি দিলেন।

এরপর আর্মড ফোর্সের (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) সদস্যদের আবদার ছিল, কফি খেতেই হবে; কফি খেয়ে ছবি না তুলে বের হওয়া যাবে না! এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে গেলাম, যিনি গেট খুলছেন, তাঁর থেকে অদ্ভুত ভালোবাসা পাচ্ছি। এতটা ভালোবাসা প্রত্যাশা করিনি। যতটা প্রত্যাশা করেছি, তার চেয়ে দশ গুণ বেশি ভালোবাসা পাচ্ছি।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে আপনার এত ভক্ত আছেন, কখনো টের পেয়েছিলেন?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আমি টের পাইনি। আমি যত দূর জানি, টেলিভিশন ছাড়া এখানকার দর্শকেরা ওখানকার সিনেমা খুব একটা দেখেন না। ওটিটির দৌলতে এখন হয়তো দেখছেন, তবে এতটা দেখেন, সেটা জানতাম না। তারিন, জয়া আহসানরা কিছুটা ধারণা দিয়েছিল; ওরা বলেছিল, ‘ওখানে একটু সাবধানে নেবো (নেমো)। মাস্ক ও টুপি পরে থেকো।’ কিন্তু এতটা ভালোবাসা প্রত্যাশা করিনি।

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
চরকির সৌজন্যে
প্রথম আলো:

আপনার সমসাময়িকদের অনেকে বহু আগে থেকেই ঢাকায় কাজ করছেন, ঢাকার শিল্পীরাও কলকাতায় কাজ করছেন। আপনি এত দিন পর কেন?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আমি আসলে জানি না, কোনো না কোনো কারণে আমার ঢাকায় কাজ করা হয়নি। দুয়েকবার প্রস্তাব পেয়েছিলাম, খুব সম্ভবত ভিসা কিংবা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় গন্ডগোল হয়েছিল। ফলে কাজটা হয়নি। এবারও খানিকটা জটিলতার মুখে পড়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছি।

প্রথম আলো:

‘গুলমোহর’ সিরিজটি কেন বাছলেন?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: প্রথমে আমাকে গল্পটা শোনানো হয়েছিল। গল্পটা ভীষণ ইন্টারেস্টিং লেগেছিল; গল্পে আবেগ আছে। আজকাল মানুষের আবেগ কমে যাচ্ছে। আমরা খুব বেশি হিসাব-নিকাশ করি, ফলে আবেগটা মারা গেছে। আমাকে কাজটার প্রস্তাব দিয়েছে অনিন্দ্য ব্যানার্জি (চরকির হেড অব কনটেন্ট)। অনিন্দ্য আমার অনেক দিনের বন্ধু, আমরা প্রায় একসঙ্গে ক্যারিয়ার শুরু করেছি। ওর ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। ও আমায় কোনো বাজে কাজে বলবে না। তারপর চিত্রনাট্য পেলাম, শুনলাম। এর বাইরে আরেকটা কারণ ছিল, বাংলাদেশে আসব।

শুটিংয়ের পুরো ব্যাপারটাকে অনেকটা নীরবে নিয়ন্ত্রণ করে। সেটে ওর খুব একটা গলাও পাওয়া যায় না। ওর (শাওকী) মাথা ঠান্ডা। আমার ধারণা, যেকোনো ঠান্ডা মাথার লোক ভালো কাজ করেন।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়

প্রথম আলো :

এই সিরিজের নির্মাতা শাওকী এই সময়ে ঢাকার প্রতিশ্রুতিশীল ওয়েব সিরিজ নির্মাতাদের একজন। শাওকীর কাজ নিয়ে আপনার কোনো ধারণা ছিল?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আমার ধারণা ছিল না। কিন্তু দু-একজন বলেছেন, ও খুব ভালো নির্মাতা। জয়া আহসান কিংবা তারিনের মধ্যে কেউ একজন আমাকে বলেছেন, ও বাংলাদেশে ভালো কাজ করছে। ওর (শাওকী) সঙ্গে কাজ করেও দেখলাম, ও কোনটা চায়, কোনটা চায় না, সেটা জানে। শুটিংয়ের পুরো ব্যাপারটাকে অনেকটা নীরবে নিয়ন্ত্রণ করে। সেটে ওর খুব একটা গলাও পাওয়া যায় না। ওর মাথা ঠান্ডা। আমার ধারণা, যেকোনো ঠান্ডা মাথার লোক ভালো কাজ করেন। মাথা গরম লোকের পক্ষে ভালো কাজ করা মুশকিল।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

ঢাকার সিনেমা দেখেন?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: একসময় টেলিভিশনে প্রচুর বাংলাদেশি সিনেমা দেখেছি। ছোটবেলায় অ্যানটেনার ওপর বুস্টার লাগিয়ে বাংলাদেশের চ্যানেলে ধরে নাটক দেখতাম। এখন বাংলাদেশের সিনেমা অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। ভালোর দিকেই যাচ্ছে বলে আমার ধারণা।

একসময় টেলিভিশনে প্রচুর বাংলাদেশি সিনেমা দেখেছি। ছোটবেলায় অ্যানটেনার ওপর বুস্টার লাগিয়ে বাংলাদেশের চ্যানেলে ধরে নাটক দেখতাম।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়

প্রথম আলো :

এখন তো ওটিটির যুগ, ঢাকায় ভালো ভালো সিরিজ হচ্ছে। সিরিজ দেখেন?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: ইদানীং ওটিটি দেখার প্র্যাকটিস করেছি। তবে বেশ কয়েক দিন সময় হাতে না থাকলে সচরাচর সিরিজ ধরি না। সিনেমা দুই-আড়াই ঘণ্টার মধ্যে টুক করে দেখে নেওয়া যায়; কিন্তু সিরিজ সময় নিয়ে দেখতে হয়। পাঁচ দিনে আর সময় পাব কি না, চিন্তায় থাকতে হয়। ফলে একবারে দেখে শেষ করার চেষ্টা করি।

‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’ সিনেমার পোস্টার
ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রথম আলো:

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত বিগ বাজেটের তেলেগু সিনেমা ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’তে খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই সিনেমায় কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: শিল্পীরা আর বন্দুক, নৌকাসহ কিছু প্রপস ছাড়া পুরো সিনেমাই কল্পনার ওপর নির্মিত হয়েছে। একটা ব্লু স্ক্রিনের সামনে কল্পনার আশ্রয় নিয়ে আমাদের শুটিং করতে হয়েছে। এটা আমার কাছে নতুন একধরনের অভিজ্ঞতা ছিল। শুটিংয়ের সময় আমাকে বলা হচ্ছিল, ওইখান থেকে একটা গোলা ছুটে আসছে; আপনাকে বসার অভিনয়ে করে সেটা এড়াতে হবে। নৌকাটা একটু দুলে উঠল, এইবার ডান দিকে একটু হেলে যেতে হবে। আর সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা ছিল, তেলেগু ভাষা বলা। সত্যি বলতে, এই লেবেলের স্টার কাস্ট আর শুধু টাকা থাকলেই তো হয় না, ভাবনটা ভাবতে হয়, ভিজ্যুয়ালি সেটাতে তুলে ধরতে হয়। এই সিনেমায় দারুণভাবে সেটা করা হয়েছে।

কমল হাসানের সঙ্গে ‘কল্কি’ সিনেমার সেটে শাশ্বত
ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রথম আলো:

এই সিনেমায় অমিতাভ বচ্চন, কমল হাসানের মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের যেমন সান্নিধ্য পেয়েছেন; আবার প্রভাস, দীপিকা পাড়ুকোনের মতো বড় তারকাকে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছেন।  

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: কমল হাসান স্যারের সঙ্গে প্রথমবার শুটিংয়ের দিন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি তাঁর সঙ্গে কাজ করছি। মিস্টার অমিতাভ বচ্চন কিংবা কমল হাসানকে দেখেই আমি সিনেমায় এসেছি। প্রথম দিন অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ওনার (কমল হাসান) পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। হাত দুটি ধরে হালকা করে কী যেন একটা বললেন, ঠিকমতো শুনতে পাইনি। পরে বুঝলাম, উনি বলেছেন, ‘অ্যায়সা মাত করো।’ সারাক্ষণ উনি (কমল হাসান) সেটের চেয়ারে নিজের মতো বসে আছেন, ধারেকাছে কেউ বেশি ঘাঁটাচ্ছেন না। যখন শট দেওয়ার দরকার, শট দিয়ে আবার নীরবে এসে চেয়ারে বসছেন। যাঁরা ‘কল্কি’ দেখেছেন, তাঁরা জানেন, কমল হাসানের লুকটা কী? ভয়ংকর। সেটা কখনোই সেটে আন্দাজ করা যায়নি।
প্রভাস, দীপিকা পাড়ুকোন নিজেদের যোগ্যতায় এত বড় তারকা হয়েছেন। তাঁরা ভীষণ খোলামনের মানুষ। শুটিং শেষ করে ফেরার সময় প্রভাস আমাকে বললেন, ‘দাদা, আপনি খুব ভালো অভিনয় করেছেন।’ ক্যামেরার সামনে দীপিকা যতক্ষণ থাকছেন, চরিত্রের মধ্যে থাকছেন। ক্যামেরার বাইরে সব সময় দীপিকার মুখে হাসি লেগে আছে। তাঁদের সঙ্গে কাজ করলে অনেক কিছু শেখা যায়।

‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’তে খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রথম আলো:

টালিগঞ্জের বাইরে বলিউডে, দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায়ও কাজ করেছেন। বলা হচ্ছে, কলকাতার সিনেমা আগের তুলনায় পেছাচ্ছে; আপনারও কী তা-ই মনে হয়?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: একটা সময় টালিগঞ্জে স্বর্ণযুগ ছিল। এমনি এমনি তো আর স্বর্ণযুগ বলা হতো না। সেরা সাহিত্য, সেরা গল্প নিয়ে সেরা পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রীরা কাজ করেছেন। তখনকার সিনেমা কারিগরিভাবে হয়তো খুব একটা উন্নত ছিল না, তবে সিনেমায় আবেগ ছিল।
নব্বইয়ের দশকে ওখানে (টালিগঞ্জ) বাংলাদেশি ছবির নকল বানানো শুরু হয়েছিল। তখন সাউথ ইন্ডিয়ার ছবি নকল করা হতো। মাঝে বাংলা সাহিত্য কোথায় যেন হারিয়ে গেল, এখন আবার ফিরছে (সাহিত্য) বলে আমার ধারণা। এপার ও ওপার—দুই বাংলার ক্ষেত্রেই ফিরছে। হয়তো এটাই ট্রেন্ড। একটা সময় ভালো হবে, পরে আবার বদলাবে। খারাপ না হলে তো আর ভালোর দিকে ওঠার সুযোগ থাকে না। সব সময় উঠতে থাকলে তো পড়ে যেতে পারি। (হা হা)

প্রথম আলো:

টালিগঞ্জে আপনি দশকের পর দশক ধরে কাজ করেছেন। তবে সেভাবে স্বীকৃতি মেলেনি; তবে বলিউডে গিয়ে ‘কাহানি’ সিনেমা করার পর হইচই পড়েছিল। এর পর থেকেই মূলত টালিগঞ্জে গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে। বাইরের কেউ স্বীকৃতি দেওয়ার আগে স্বীকৃতি না দেওয়াটা বাঙালির সহজাত প্রবৃত্তি কি না?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: এটা তো সত্যজিৎ রায়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছে; আমি কে? প্রথম ছবিটা করতে গিয়ে তাঁকে পয়সার জন্য আটকে যেতে হয়েছিল। সিনেমাটা শেষ করার পর যখন বিদেশ থেকে পুরস্কার বা সম্মান পেলেন, তখন বাঙালি ঘুরে তাকাল। সেটা স্বাভাবিক; বাংলায় কথা আছে না, ‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না’, এটা হয়তো ওঁদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।

‘কাহানি’ সিনেমায় বব বিশ্বাস চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
প্রথম আলো:

ভক্তদের উন্মাদনার ভিড়ে তারকার ব্যক্তিগত নির্জনতায় কখনো কখনো ব্যাঘাতও ঘটে। আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: একা থাকতে চাইলে আমরা বেড়াতে চলে যাই। বেড়াতে গেলে আমি অক্সিজেন পাই। আবার এগুলো (ভক্তদের উন্মাদনা) তো উপভোগ করাই উচিত। না হলে আমি তো বিফল অভিনেতা হতাম।

চরকি কার্যালয়ে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
চরকির সৌজন্যে
প্রথম আলো:

আপনি অভিনেতা কেন হলেন?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: এটা আমি নিজেও জানি না। আমি কিছুই হতে চাইনি; আমার জীবনের কোনো লক্ষ্য ছিল না। আর পাঁচটা ছেলের মতো পাড়ার রকে আড্ডা দিতাম। বাবা (অভিনেতা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়) তো আছেন মাথার ওপর; চিন্তা করব কেন? একদিন বাবা বললেন, ‘একটু ভাবনাচিন্তা কর। বাবা-মা তো সারা জীবন থাকব না। তুই কী হবি?’ বললাম, ‘অভিনয় করব।’ বাবা বললেন, ‘অভিনয় করবি মানে?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ। অভিনয় ভালো পেশা। অভিনয়ের দৌলতে বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানো যায়। সকাল থেকে রাত অব্দি শুটিংয়ে যা খাবে, যা করবে—সবই প্রডিউসারের দায়িত্ব।’ আমার কথা শুনে বাবা বললেন, ‘আমরা বেড়াতে যাই?’ বললাম, ‘নাহ। তবে বেড়ানোটা তো হয়ে যায়।’

বাবা আমাকে একটা চার্বাক গ্রুপ থিয়েটারে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে সব্যসাচী চক্রবর্তীরাও অভিনয় করতেন। প্রথম দেড় বছর আমার কাজ ছিল, রিহার্সাল রুম ঝাড়পোঁছ করা, সেটের লাইট বয়ে আনা আর অন্যদের প্রক্সি দেওয়া। শোর দিন সেট বাঁধা, লাইট বাঁধা—এসব করেছি। তারপর অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি।

বাবা অভিনেতা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শাশ্বত
ইনস্টাগ্রাম থেকে
প্রথম আলো:

প্রথম সুযোগ হলো কীভাবে?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: পাঁচ এপিসোডের মধ্যে শেষ ভাগে ১০ সেকেন্ডের একটা চরিত্র পেয়েছিলাম; যেটার একটা সংলাপ আছে। সেই রকম একটা চরিত্র দিয়েই শুরু।

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
ফেসবুক থেকে
প্রথম আলো:

স্মৃতিতে সেই সব দিনে ফিরলে কী মনে হয়, সিদ্ধান্তটা কতটা জুতসই ছিল?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আমি একদমই পেছনে ফিরি না। কাল যখন অন্য কোনো সিনেমা সাইন করব, সেটা পছন্দ করে করব। আমি এভাবেই জীবনটাকে দেখি। কোনো হিসাব করি না, আগামী পাঁচ বছর আমি কী করব। কারণ, আমি কী ছবি পাব, সেটা আমার হাতে নেই। কোন ছবিটা করব না, সেটা আমার হাতে আছে। কাজ এলে বেছে বেছে করে এগিয়ে যাব। কাল কী করব, আমি জানি না। আমার নীতি হলো, আজকের দিনটা ভালো করে বাঁচব।

প্রথম আলো:

অনেক আগে এক সাক্ষাৎকারে জেনেছিলাম, আপনি পরিমিতভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তরিকাটা কী?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: আজ সারা দিন আমাকে মোবাইল ব্যবহার করতে কেউ দেখেনি। আমার একটা নিয়ম আছে, সকালবেলা একবার ফোনটা চেক করি। কাজের জায়গায় ঢুকে গেলে ফ্লাইট মোডে রাখি। এরপর একদম হোটেলে গিয়ে অন করে পরিবারে সঙ্গে কথা বলি। এর মধ্যে কে কী পাঠিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপে সেটা একটু চেক করে নেব। প্রয়োজনে রিপ্লাই করব। আর সারা রাত ফোন বন্ধ।

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
প্রথম আলো:

মানে, আপনি ফোন ব্যবহার করেন, ফোন আপনাকে ব্যবহার করে না।

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: এই পাঁচ বছর হলো স্মার্টফোন নিয়েছি। আগেও ল্যান্ডফোন ব্যবহার করেছি, এখনো করি। এটা সত্য, ফোন জিনিসটা এখন প্রয়োজন পড়েছে; কিন্তু বেশির ভাগ ব্যবহার হয় অপ্রয়োজনে। মোবাইল ফোনের নেশাটা মারাত্মক নেশা। অন্য নেশা ছাড়ানোর জন্য নিরাময় কেন্দ্র আছে, ফোনের নেশা ছাড়ানোর নিরাময় কেন্দ্র নেই।
না হলে সিনেমা হলে ফোনে কথা বলে, তবু মেনেছিলাম; কিন্তু থিয়েটার দেখতে দেখতে কেউ ফোনে কথা বলে? অনেকে তো ছবি তোলে। ছবি তোলার সময় তো দৃশ্যের কথা মাথায় থাকছে না। একজন অভিনেতা খেটেখুটে একটা এক্সপ্রেশন দিলেন, সেটা দেখতেই পেলাম না। ঘাড় ঘুড়িয়ে জিজ্ঞাসা করব, কী হলো? মোবাইল ফোন মানুষের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়, সারাক্ষণ ফোন চালানো খুবই খারাপ অভ্যাস।

ফোন জিনিসটা এখন প্রয়োজন পড়েছে; কিন্তু বেশির ভাগ ব্যবহার হয় অপ্রয়োজনে। মোবাইল ফোনের নেশাটা মারাত্মক নেশা। অন্য নেশা ছাড়ানোর জন্য নিরাময় কেন্দ্র আছে, ফোনের নেশা ছাড়ানোর নিরাময় কেন্দ্র নেই।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
প্রথম আলো:

সামনে আপনার কী কাজ আসবে?

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: ‘এটা আমাদের গল্প’ নামে একটা বাংলা সিনেমা চলছে। কল্কি তো সারা দুনিয়া কাঁপাচ্ছে। এখন চরকির কাজটার শুটিং করছি। হিন্দি সিরিজ খাকি ২-এর শুটিং করছি। অনুরাগ বসুর মেট্রো ইন দিনো ছবির কাজ করেছি।

‘এটা আমাদের গল্প’ সিনেমায় অভিনয়ে করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়
ইনস্টাগ্রাম থেকে
আরও পড়ুন