নতুন ছবির শুটিং কবে শুরু করলেন?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: আজ (সোমবার) রাত থেকেই শুটিং। তবে সিনেমার ব্যাপারে আপাতত বলা নিষেধ। আগে কাজটা শেষ করতে চাইছি।
প্রথম আলো :
নতুন ছবির সহশিল্পী বা পরিচালক কে?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: সহশিল্পীরা সবাই সিনিয়র, আমি একাই তাঁদের চেয়ে বয়সে ছোট মনে হয়। এই ছবির পরিচালক বেশ ভালো, আমার সঙ্গে প্রথম কাজ হচ্ছে। তবে এটাও বলা যায়, অভিনয়শিল্পী সবার সঙ্গেও প্রথম কাজ হতে যাচ্ছে। যত দূর শুনেছি, ঈদুল আজহার জন্য ছবিটি বানানো হচ্ছে। এই ছবিতে কাজ করার পেছনে কিছু বিষয় কাজ করেছে, এর মধ্যে অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কাজের ইচ্ছা। গল্প সুন্দর। সিনেমাটাও ভিন্নধর্মী। সব মিলিয়ে না করার কোনো কারণ মনে হয়নি। পর্দায় উপস্থিতি যদিও কম, তবে চরিত্রটি প্রভাব বিস্তার করবে। তাৎপর্যপূর্ণ বলা চলে। টানা শুটিং করে ছবিটির কাজ শেষ করতে চাই।
প্রথম আলো :
প্রথমবারের মতো ঈদে সিনেমা আসছে, কতটা রোমাঞ্চিত?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: আমি আসলে যখন কোনো কাজ করি, আমার চরিত্রটা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠুক, তা–ই শতভাগ চেষ্টা করি। তারপর আর আশা রাখি না। তবে ‘দাগি’ সিনেমাটা ভালো হবে, এটা বলতে পারি। আশা করছি, দর্শক আমার অংশটুকু পছন্দ করবেন, বাকিটা দর্শকের মর্জির ওপর নির্ভর করবে। তাই মনে হয়, বেশি প্রত্যাশা করলে মন খারাপের আশঙ্কা থাকে বেশি। ভালো হলে ভালো লাগবেই, যদি দর্শকের পছন্দ না হয়, পরবর্তী সময়ে ভালো করার চেষ্টা করব—এ রকম মানসিকতা নিয়ে আছি।
আপনি বলছিলেন, ছবিটা ভালো হবে। কিসের ভিত্তিতে বলছেন?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: আমার কাছে গল্প খুব ভালো লেগেছে। নির্মাণও ভালো লেগেছে, প্রত্যেকটা শিল্পীর অভিনয়ও ভালো। পরিচালকের পরিচালনাও ভালো। সবাই যার যার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছে তাদের সর্বোচ্চ দেওয়ার। একটা টিমের সবাই যখন সেরাটা দেয়, সেই সিনেমা খারাপ হওয়ার চান্স খুবই কম।
প্রথম আলো :
‘দাগি’তে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: বেশ ভালো। কারণ, পরিচালক ভালো, সহশিল্পী ভালো—সবাই তো আমার চেয়ে বয়সেও বেশ বড়। তাদের সবার সঙ্গে কাজ করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। অনেক কিছু শিখেছি। আমি তো সেই হিসেবে নতুন একজন আর্টিস্ট, অনেক কিছু জানি যে তা–ও নয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি, যে চরিত্রটাই করি, তা সিনেমা বা নাটকের হোক—পুরো গল্প পড়ার চেষ্টা করি। কারণ, পুরো গল্প পড়লে নাটক বা সিনেমাটা চোখে দেখা যায়। তারপর আমার চরিত্রটা কী প্রত্যাশা করে, সেভাবেই ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করি। নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করলে নতুন অনেক কিছু শেখা যায়। সিনিয়র আর্টিস্টের সঙ্গে কাজ করলে ভয়টাও কাটে। যেমন ‘দাগি’তে আমি কিন্তু নিশো ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করিনি, নিশান চরিত্রের সঙ্গে কাজ করেছি। আমার যে চরিত্র, সে চরিত্র অন্য আরেকটি চরিত্রের সঙ্গে কাজ করেছে। প্রতিটা কাজ করে একটু একটু করে শিখছি।
প্রথম আলো :
দর্শক এই সিনেমা কেন দেখবেন?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: যেকোনো মানুষ এমন গল্পের ছবি পছন্দ করবে। মানুষ নিজেকে গল্পের সঙ্গে একাত্ম করতে পারবে। অনুভব করতে পারবে। দর্শক হিসেবে আমারও মনে হয়েছে, এমন একটা গল্পই দর্শক এখন চাইছে।
‘অন্তর্জাল’-এ পুরোপুরি বাণিজ্যিক সিনেমার মসলা ছিল, এটা একটা ভিন্ন ধরনের চরিত্রে। আপনি কোন ধরনের চরিত্রে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: ‘দাগি’তে যে ধরনের চরিত্র করেছি, তেমনটাই করতে ভালো লাগে। বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করতে মজা লাগে, এক্সাইটমেন্ট কাজ করে, কিন্তু এ ধরনের গল্পপ্রধান ছবিতে চরিত্রকে বেশি অনুভব করতে পারি বা আমার টাইপ কাজ মনে হয়। সিনেমাটা দেখলে মানুষ বুঝতে পারবে, মায়ার জায়গা আছে। চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। কেন এসব বলছি, ছবিটি দেখার পর মানুষ বুঝতে পারবেন।
প্রথম আলো :
শোনা যায়, আপনার সঙ্গে এই সময়ের বেশ কয়েকজন নির্মাতার বন্ধুত্ব, কিন্তু পর্দায় কাজ এত কম কেন?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: বন্ধুত্বের সঙ্গে কাজের কোনো সম্পর্ক নেই। আমার মনে হয়, একটা গল্পে একটা চরিত্রের দরকার হয়, সেই চরিত্রে যাকে ডিমান্ড করে, তাকেই আসলে দরকার। হয়তো তারা যে ধরনের চরিত্র বা গল্প নিয়ে কাজ করছে, ওখানে হয়তো আমাকে প্রয়োজন মনে করে না বলে কাস্ট করে না বা হয়তো অনেক সময় আমাকে ডাকলেও ব্যাটে–বলে মেলে না। একটা কাজে সম্মানী, শিডিউল, স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়ও থাকে। একটা সিনেমা একটা নাটকের মতো না—গেলাম, করলাম, চলে এলাম। এখানে লম্বা সময় দিতে হয়। মানিয়ে নেওয়ার বিষয়ও আছে। তাই বলব, এটা ভাগ্যের ব্যাপারও। ‘ন ডরাই’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর দেশে কোভিড গেল, ওই সময়ে কয়েকটি সিনেমা করার কথা ছিল, কিন্তু হয়নি। তখন যদি হতো, তাহলে পরিচালক বন্ধুদের সঙ্গেও অনেকগুলো কাজ পাওয়া যেত। তবে এখন আমি আবার শুরু করছি। আশা করছি, সামনে আরও ভালো ভালো কাজ উপহার দিতে পারব।
প্রথম আলো :
ঈদ এলেই প্রতিদ্বন্দ্বী সিনেমার শিল্পীদের বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়। আপনি এটা উপভোগ করেন, নাকি নিজেকে এ ‘লড়াই’ থেকে দূরে রাখবেন?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: আমি এসবের মধ্যে একেবারেই নেই। আমি কাজ করি, বাসায় ফিরে আম্মুকে কাজে হেল্প করি। ঘুমাই, খাই, সিনেমা দেখি, বই পড়ি। আমি আসলে কারও কাজ দেখার পর ভালো লাগলে অ্যাপ্রিশিয়েট করি। কিন্তু আমি প্রতিযোগিতার বিষয়টা বিশ্বাসই করি না। আমার কাজটা ভালো হলে প্রশংসিত হবে। অন্যের কাজ ভালো হলে সে–ও প্রশংসিত হবে।
হঠাৎ ছোট পর্দায় কাজ শুরু করতে গেলেন কেন?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: কয়েকটা ভাবনাচিন্তা থেকে কাজ করেছি। একটা কারণ ছিল, কাজ করতে ইচ্ছা করছিল। হাতে সিনেমা ছিল না। কাজ না করতে করতে হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। পরে আবার এটাও ভাবছিলাম, আমি যেসব অভিনয়শিল্পীকে দেখি, তারা অভিনয়ের চর্চার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে। ভিন্ন ভিন্ন গল্পে কাজ, সেটাও একটা চর্চার বিষয়, অনেক কিছু শেখা যায়। আর অল্প সময়ের মধ্যে একটা চরিত্র নিজের মধ্যে ধারণ করে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা আলাদা একটা মজা—এই মজাও নিতে চাইছিলাম। তা ছাড়া অর্থনৈতিক নিরাপত্তার একটা ব্যাপারও আছে। সবকিছু মিলিয়ে মনে হয়েছে, ছোট পর্দায় কয়েকটা কাজ করি। অভিজ্ঞতাও বাড়ল। আমি তো আগে সিনেমা ও নাটকের পার্থক্যটা বুঝতাম না, এখন কিন্তু বুঝি। অনেকটাই শিখেছি। যেহেতু নাটক বেশি বেশি করেছি। বেশি চরিত্র প্লে করেছি—ওখান থেকে টুকটাক শিখেছি এবং এটা করায় সিনেমার প্রতি ভালোবাসাও বেড়েছে। আমি তো সবাইকে এখন এ–ও বলি, আমাদের সিনেমা এভাবে হয়, ওভাবে হয়।
প্রায়ই আপনাকে সমুদ্রে ঘুরতে যেতে দেখা যায়। প্রথম সিনেমা ‘ন ডরাই’ ছিল সমুদ্রকেন্দ্রিক। সাগরপ্রীতি কি সেখান থেকেই তৈরি হয়েছে?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: আগে থেকে ছিল কিন্তু ‘ন ডরাই’ করার পর সাগরের প্রতি একটা অদ্ভুত টান কাজ করে। কাউকে এটা বোঝাতে পারব না। টানা কয়েক দিন বাসায় থাকলে মনে হয়, ইশ্, আমি যদি একটু সমুদ্রে গিয়ে পানিতে পা ভিজিয়ে বসে থাকতে পারতাম! ওটা আলাদা একটা মেডিটেশন। সাগরের সঙ্গে আলাদা একটা রিলেশনশিপ হয়ে গেছে। এটা ভাঙতে পারি না। সম্পর্কটা মরার আগপর্যন্ত থাকবে মনে হয়।
ঈদে কোন কোন কাজ দেখতে বেশি আগ্রহী?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: ঈদে সব কাজই দেখব। সুন্দর সুন্দর সব কাজ দেখার ইচ্ছা। ভালো ভালো গল্পের সিনেমা আসছে, কনটেন্ট আসবে—সবই দেখব। কারণ, ঈদে আমার বাসা থেকে বের হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। অনেক কাজ করছি। এখন আমার পরিকল্পনা হচ্ছে ঈদের সময় বাসায় বসে সব কাজ দেখব। এরপর যদি সময় পাই, তাহলে একা একা ঘুরতে যাব।
প্রথম আলো :
একা একাই ঘুরতে যাবেন?
সুনেরাহ বিনতে কামাল: একা একা ঘুরতে যাওয়ার বিষয়টা এমন, আমি কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত আমার মতো করে নিয়ে নিই। এরপর সবাইকে জানাই। কেউ যদি তখন আগ্রহী হয়, আমাকে বলবে, নইলে আমি একাই ছুটব। সবার সঙ্গে পরিকল্পনা করতে গেলে তা আর হয় না। আমি কারও জন্য বসে থাকতে চাইও না। একা ঘুরতে আমার ভালোই লাগে, সঙ্গে থাকে আমি আর আমার ট্রাইপড। আমার একটা ট্রাইপড আছে, ফোনের রিমোট আছে, যেখানে যেখানে মনে হয়, শুটিং করি। বাকি সময় পকেটে রেখে গান শুনি। নতুন নতুন খাবারের স্বাদ নিই। সময় কেটে যায়।