শুভ জন্মদিন। জন্মদিনে কী করছেন?
আজমেরী হক বাঁধন : ধন্যবাদ। জন্মদিনে কোনো পরিকল্পনা নেই।
প্রথম আলো :
জন্মদিন এলেই বয়স নিয়ে অনেকে চিন্তিত হন। আবার কেউ বলেন, বয়স হচ্ছে শুধু একটা সংখ্যা। আপনার কাছে কোনটা?
আজমেরী হক বাঁধন : বয়সটা আমার কাছে শুধুই বয়স। তাই আলাদাভাবে কিছু চিন্তা করি না। প্রতিটি বয়স পার করে এখন ৪১ বছরে আছি। আশা করি, সামনে অনেক বছর বেঁচে থাকব। তত দিন নানা রকম অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাব। আমার কাছে মনে হয়, ৪০ বছর পার হওয়ার পরে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছি, গত বছর। আর সেটি আমার খুব চমৎকার লেগেছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, নতুন করে জন্ম হয়েছে—চিন্তায়, মননে, জীবনযাত্রায়, সবকিছুতে। আমার স্বপ্ন, আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস, সম্মান, সবই বেড়েছে। তাই আমার কাছে মনে হয়েছে, ৪০ বছরে ঢুকে পড়ার মধ্য দিয়ে নতুন জীবনের সূচনা হয়েছে।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনে প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলেন।
আজমেরী হক বাঁধন : এখন কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছি। আশা করি, অস্বস্তিটা কিছুদিনের মধ্যে কাটিয়ে উঠতে পারব। বর্তমান পরিস্থিতিই আসলে আমাদের অস্বস্তির কারণ। আমরা একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে আছি। আসলে এমন একটা শাসনব্যবস্থায় ছিলাম, সেখান থেকে নতুন সরকার এসে, সুন্দর করে অ্যাকিউমুলেট করা কষ্টসাধ্য হচ্ছে। আমরা জনগণ যারা আছি, তারাও ভীষণ অস্থির। নানা রকমের ঘটনা ঘটছে, সেগুলোতে অস্বস্তি হওয়াটাও স্বাভাবিক। একটা নষ্ট রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সঠিক করার কঠিন চ্যালেঞ্জ তো আমাদের এই সরকারের এবং জনগণের। সেই জায়গা থেকে মনে হয়, যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আশপাশে অস্থিরতা কাজ করছে, সেটিতে অস্বস্তিবোধ হচ্ছে।
প্রথম আলো :
অভিনয় থেকেও অনেক দিন দূরে আছেন।
আজমেরী হক বাঁধন : এ বছরে আমার দুটো সিনেমার কাজ শুরুর কথা ছিল। একটা ছিল সেপ্টেম্বরে, আরেকটার শুটিং পরিকল্পনা আমরা ডিসেম্বরে করেছিলাম। এর মধ্যে একটা কাজ সম্ভবত বাতিলই হয়ে গেছে। আরেকটা কাজ পিছিয়েছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে। সামনের নভেম্বরে এশা মার্ডার ছবির বাকি অংশের শুটিং করব। রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘মাস্টার’ ছবিটি করেছি। আর ওভাবে আসলে কাজের কথা হয়নি। আসলে গত ৫ বছরে আমি যেভাবে আমার জীবনযাপন ঠিক করেছি, এর মধ্যে খুব বেশি কাজ করা হয়নি। ‘রেহানা মরিয়ম নুর’ যখন করেছি, প্রায় তিন বছরের বিরতি নিয়েছি। তারপর ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেনি’ করেছি, ‘খুফিয়া’ করেছি, এরপর ‘এশা মার্ডার’ করলাম, ‘মাস্টার’ করলাম। খুবই অল্প কাজ করেছি। চেষ্টা করেছি, যে ধরনের কাজ করতে চাই, সেটিই যেন করতে পারি। এ জন্য গত পাঁচ বছরে খুব বেশি কাজ আমার ছিল না। এটা নিয়ে আমি হতাশও নই।
সার্বিকভাবে চলচ্চিত্র মন্থর, নতুন সিনেমা সেভাবে মুক্তি পাচ্ছে না, শুটিংও সেভাবে হচ্ছে না।
আজমেরী হক বাঁধন : কাজ হবে। দেশের অবস্থা, সবার অবস্থা—একরকম অস্বস্তির মধ্যে আছে। আমি তো আসলে দেখছি, অনেকে শুটিং করছে। বিজ্ঞাপন হচ্ছে, অনেক পরিচালক সিনেমা বানাচ্ছেন, পরিকল্পনাও করছেন। আমার কাছে মনে হয় না, খুব একটা ঝামেলা হবে।
প্রথম আলো :
আপনি তো মুম্বাই, কলকাতায় কাজ করেছেন। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে আরও পেশাদারি আনার জন্য আর কী করা যেতে পারে?
আজমেরী হক বাঁধন : জাতি হিসেবে প্রথমে আমাদের বিচক্ষণ হতে হবে। আমার কাছে মনে হয়, পেশাদারির সঙ্গে আমরা একেবারে অপরিচিত। পেশাদারি বলতে আমরা কী বুঝি, নিজেরাও জানি না। সত্যি সত্যি আমাদের দেশে যদি পেশাদারি শুরু হয়, তাহলে আমাদের এখানে কাজের গুণগত মান আরও ভালো হবে। মানুষ আরও আরাম করে কাজ করতে পারবে।
এই আন্দোলন শিল্পী হিসেবে আপনার ওপর কী প্রভাব ফেলেছে?
আজমেরী হক বাঁধন : শিল্পী হিসেবে আলাদা কী প্রভাব ফেলেছে, সেটি আলাদা করতে পারছি না। তবে একজন মানুষ হিসেবে কী কী প্রভাব ফেলেছে, তা বলতে পারি। আসলে এ রকম একটা শাসনব্যবস্থা ছিল, যেটাতে আমরা সবাই স্টকহোম সিনড্রোমে ছিলাম। এ রকম একটা শাসনব্যবস্থায়ও আমরা নিজেদের মানিয়ে নিয়েছিলাম। একধরনের মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেই স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার পতন ঘটেছে, সেটি তো নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আনন্দের। ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন, সেখানে ছাত্রদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারাই আমাদের পথ দেখিয়েছে। তাদের ভূমিকা দেখে বাংলাদেশ নিয়ে আমি আশাবাদী। ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময় আমাদের জন্য কঠিন ছিল। কোনো সন্দেহ নেই, আমরা খুব কঠিন সময় পার করেছি। এখনো করছি। কারণ, দেশের প্রতিটি সেক্টর আসলে বিধ্বস্ত, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, নষ্ট হয়ে গেছে, পচে গেছে। প্রতিটি সেক্টরে আবার নতুন করে সংস্কার এবং সচল করা নিঃসন্দেহে খুব কঠিন একটা কাজ। সে কাজটা এখন যাঁরা সরকারে আছেন তাঁরা করছেন। ছাত্র-জনতার সবাই সমর্থন করছে, সেটি দেখে ভালো লাগছে। অবশ্যই আশা করি, ভোটের মাধ্যমে যে সরকার আসবে, তারা সচেতনভাবে দেশ পরিচালনা করবে। তাদের মধ্যে এ ধরনের স্বৈরাচারী মনোভাব যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেটি আশা করব।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বলছেন, বাঁধন হঠাৎ চুপ হয়ে গেছেন। কারণ কী?
আজমেরী হক বাঁধন : আমি কখন কথা বলব, কোন বিষয়ে কথা বলব, কী কথা বলব—সেটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনারা যদি আমার লাইফের ট্র্যাকটা দেখে থাকেন, তাহলে দেখতে পারবেন, যখন যেখানে মনে করেছি, আমি বলেছি। যেখানে মনে করেছি যে আমি বলতে চাই না, আমি বলি নাই। এ রকম না যে হঠাৎ করে এমন কিছু হয়েছে। জীবনের এই বাঁকবদল আমার আছে। যখন আমার মনে হয় চুপ হওয়া দরকার, আমি চুপ হই। যখন মনে হয় কথা বলা দরকার, কথা বলি। এটা একান্তই আমার নিজস্ব, বাঁধনের ব্যাপার।