জন্মদিনে আপনার পরিকল্পনা কী?
এবারের জন্মদিনটা আলাদা। বইটা আজ প্রকাশিত হবে। প্রতিবছরই জন্মদিন নিয়ে আলাদা পরিকল্পনার সুযোগ হয়, তবে এবার সেই সময় ও সুযোগ পাচ্ছি না। বইটা নিয়েই ব্যস্ত আছি। বুধবার দুপুরে বইমেলায় ‘ছাপাখানার ভূত’-এর স্টলে যাব; বইটা সেখানে পাওয়া যাবে। বিকেলের দিকে বনানীর একটি ক্যাফেতে বইটির মোড়ক উন্মোচন হবে। বইটা নিয়ে আলোচনা হবে, সঙ্গে গানও করব। তারপর কী হবে, সেটা নিয়ে এখনো পরিকল্পনা করিনি।
কোন ভাবনা থেকে বইয়ের নাম ‘পথিকার’ রেখেছেন?
‘পথিকার’ শব্দের অর্থ জীবনযাত্রা। যারা বইটা পড়বে, তারা এই শব্দটা অন্যভাবে খুঁজে পাবে। আমার জীবনের সঙ্গে এই নামের সম্পৃক্ততা রয়েছে; সেটা বইয়ের কোনো একটা অধ্যায়ে পাওয়া যাবে। তিন বছর আগে বইটার কথা ভেবেছিলাম। তখন মনে হয়েছিল, এবার হয়তো আমার আত্মজীবনী প্রকাশের সময় এসেছে। এরই মধ্যে সাজ্জাদ হুসাইনের সঙ্গে কথা হয়েছে; বইটা করতে রাজি হই। আমরা কয়েক দফায় বসি; আমার জীবনের গল্প শুনে শুনে সাজ্জাদ লিখেছে।
আপনার ঘটনাবহুল জীবনকে একমলাটে আঁটানো গেল?
অনেকটাই সম্ভব হয়েছে। আত্মজীবনী লিখতে গেলে সৎ হতে হয়। আমি অনেক কিছু বলেছি। আমার ব্যক্তিগত জীবন, সম্পর্ক নিয়ে কারও কোনো ধারণা ছিল না। এসব আমি কখনো প্রকাশও করিনি। আমার সংগীতজীবনকে মানুষ জানে; ব্যক্তি শাফিন আহমেদকে ততটা জানে না। আমার জীবনে কী কী ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো প্রথমবারের মতো এই বইয়ে থাকছে।
ভালো-মন্দ মিলিয়েই মানুষের জীবন। তবে অনেক জীবনীগ্রন্থে জীবনের ইতিবাচক ঘটনাগুলোই তুলে আনা হয়। এই বইয়ে আপনার জীবনের ভালো-মন্দ সব দিকই থাকছে?
প্রত্যেক মানুষের জীবনের উত্থান-পতন, ইতিবাচক-নেচিবাচক দিক থাকে—এসব নিয়েই আমাদের জীবন। এই বইয়ে মানুষ অনেক কিছু খুঁজে পাবে। এই গল্পটা বলব, এটা বলব না—ওই ধরনের বাছবিচার করিনি। সেভাবে লিখলে আত্মজীবনী পাঠকদের কাছে খুব একটা উপভোগ্যও হয় না। সেভাবে বই করার চেয়ে না করাই ভালো। কারণ, ইন্টারনেটে আমাদের নিয়ে অনেক তথ্য পাওয়া যায়, সেসব তথ্য চাইলেই মানুষ পড়ে নিতে পারে। বইয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু দেওয়া উচিত। তা না হলে মানুষ বই কিনে পড়বে কেন? আমি আত্মজীবনী লেখার ব্যাপারে যথেষ্ট সৎ থেকেছি। এই বইয়ে মানুষ আমাকে নতুন করে চিনবে, জানবে।
‘ভয়েস অব মাইলস’ ব্যান্ড নিয়ে আপনি নিয়মিত কনসার্ট করছেন। এই ব্যান্ডের প্রেক্ষাপট কী?
৪০ বছর ধরে ‘মাইলস’ ব্যান্ডের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। তিন বছর আগে আমাকে ‘মাইলস’ থেকে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সেটার সঠিক সমাধান আমি এখনো খুঁজে পাইনি। পরে আমি শাফিন আহমেদ নামেই যাত্রা করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম, ‘মাইলস’ নামটা যেন আর ব্যবহৃত না হয়। একটি ব্যান্ড সম্মানিত জায়গায় পৌঁছার পর সেটি আর সমালোচনার মুখে না পড়ুক। সেই জায়গা থেকেই আমার চাওয়া ছিল, আমরা যেন কেউই ‘মাইলস’ নামটা ব্যবহার না করি। ৪০ বছর অনেক সময়, যে যার মতো করে ভিন্ন নামেও গান করা যায়। সে কারণেই শুরুতে শাফিন আহমেদ নামেই গান করছিলাম; সেভাবেই চলছিল। পরে দেখলাম, অন্য জায়গায় ‘মাইলস’ নাম ব্যবহৃত হচ্ছে। আমার অনুরোধ কেউ আমলে নেয়নি। অন্যদের পথচলার জন্য ‘মাইলস’ নামটার খুব প্রয়োজন। অপরপক্ষ নামটাকেও ছাড়ল না। আমিও ‘মাইলস’ নামটা টেনে নিয়ে আসতে পারতাম।
এতে শ্রোতারাও বিভ্রান্ত হতে পারেন...
এটা বাজে ব্যাপার। আমি ওই দিকে যেতেই চাইনি। যেভাবে চার দশক ধরে মানুষ মাইলসকে চিনে এসেছে, যেভাবে মানুষ আমাকে দেখেছে। অনেকে বলেছে, ‘ভয়েস অব মাইলস’ বলতে শাফিন আহমেদকে চিনি। শাফিন আহমেদ ও মাইলস সমার্থক হয়েছে। ’ এই নামের পেছনে আমার পরিশ্রম, সাধনা রয়েছে; সেটা যদি কেউ ব্যবহারের যোগ্যতা রাখে, সেটা হওয়া উচিত আমার। আমি বিবাদ সৃষ্টির উদ্দেশে বলছি না; আমি বলছি, নামটার পেছনে আমারও অধিকার রয়েছে। সেই অধিকারের জায়গা থেকে আমি এটাকে পুরোপুরি ‘মাইলস’ বললাম না। আমি চাচ্ছি না, নিজেকে ‘মাইলস’ বলে সংশয় তৈরি করতে চাইছি না। কিন্তু ‘ভয়েস অব মাইলস’ বলতেই পারি; এইটুকু অধিকার আমার রয়েছে। ওই জায়গা থেকেই ‘ভয়েস অব মাইলস’ নামটা এসেছে।
‘ভয়েস অব মাইলস’ ব্যান্ড থেকে নতুন কী আসছে?
ডাবল বেজ প্রোডাকশন থেকে নিয়মিত গান করছি। আমার পুরোনো গানগুলো রিমাস্টার করে ইউটিউবে প্রকাশ করছি। মার্চে আমার নতুন একটি গান আসবে। নতুন শিল্পীদের দিয়ে নিয়মিত কাজ করছি।