রুচির দুর্ভিক্ষ তো আমরাই তৈরি করেছি:শহীদুজ্জামান সেলিম

শিহাব শাহীনের ‘বাবা, সামওয়ানস ফলোয়িং মি’ ওয়েব ফিল্মে অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ‘সোনার চর’, ‘ওমর’, ‘রেড সিগন্যাল’সহ ৮টি সিনেমা। অভিনয়–ক্যারিয়ারসহ নানা প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন।

প্রথম আলো:

অভিনয়ের মাধ্যমে কখনো নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন?

নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা অনেকের কাছ থেকেই শুনি। কিন্তু আমি শুধু অভিনয়ের জন্য যা করার, সেটাই করি। নিজেকে যে ছাড়িয়ে যেতে হবে, সেটা কখনোই ভাবি না। আসলে ভালো বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্র পেলে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রশ্নটা থাকে না। তখন চরিত্রের প্রতি সৎ থেকে কাজ করলে ফলটা আসে।

প্রথম আলো:

সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ওয়েবফিল্মটির চরিত্রায়ণে বাড়তি কোনো প্রস্তুতি নিতে হয়েছে?

ব্যক্তিজীবনে তো আমি শহীদুজ্জামান সেলিম। কিন্তু চরিত্র যখন করতে যাই, তখন সেই চরিত্রের কিছু রং থাকে, কিছু ছায়া থাকে সেগুলো ধরার চেষ্টা করতে হয়। চরিত্রটি কোথায় নিয়ে যাব, এর টার্নিং পয়েন্ট কোথায়, কোথায় রং বদলাচ্ছে এগুলো মাথায় রাখতে হয়।

শহীদুজ্জামান সেলিম
ফাইল ছবি
প্রথম আলো:

এই যে চরিত্রকে নিজের মতো করে আবিষ্কার করা, এটা কীভাবে আয়ত্ত করেন?

এটা নিজস্ব চর্চা ও ভাবনার বিষয়। চর্চা থেকেই ভেতরের প্রবৃত্তিগুলো বের হয়। গানের রেওয়াজের মতো এই চর্চা অপরিহার্য। আবার কেউ মনে করেন, কারও অভিনয় দেখে শেখা যায়। এটা আমার কাছে মনে হয় না। দেশ-বিদেশের অনেকের অভিনয় দেখে ভালো লাগে। হলিউডের আল পাচিনো, রবার্ট ডি নিরো, ভারতের কমল হাসান এমন আরও অনেকেই আছেন। তাঁদের অভিনয়ে আমি মুগ্ধ হই। কিন্তু অভিনয় নিজের মতো করি।

প্রথম আলো:

আপনার স্ত্রী অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকী আপনার অভিনয় দেখে একটি মন্তব্য করেছেন...

মন্তব্যটি আমি অনলাইন নিউজে দেখেছি। তিনি বলেছেন, আমার অভিনয় দেখে স্ত্রী হিসেবে গর্বিত। সবচেয়ে কাছের যে মানুষ, সব সময় পাশে থাকে, সে শহীদুজ্জামান সেলিম ও অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমকে সবচেয়ে বেশি পার্থক্য করতে পারে। আমার স্ত্রী আমার অভিনয় দেখে বিমোহিত হয়েছেন। এটা আমার কাছে প্রেরণার জায়গা।

প্রথম আলো:

এ ওয়েবফিল্মে আপনি বাবা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু এ ধরনের গল্প আমাদের দেশে কম হয়। এটা নিয়ে কোনো আফসোস আছে?

দেশের বাইরে একজন অমিভাত বচ্চন, রজনীকান্ত, কমল হাসান; তাঁদের মতো করে চরিত্র লেখা হচ্ছে। আমাদের এখানে সে অর্থে শুরু হয়নি। তবে জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের প্রাধান্য দিলে আরও ভালো ভালো কাজ হবে। আমাদের দক্ষ অনেক অভিনেতা আছেন। গল্প চরিত্রের বৈচিত্র্যের জন্য তাঁদের কাজে লাগানো উচিত।

প্রথম আলো:

একটা সময় অভিনয়শিল্পীরা মঞ্চ বা কোনো স্কুলিংয়ের মধ্য দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখন অনেকে সে অর্থে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই অভিনয়ে আসছেন। এটা দীর্ঘ মেয়াদে কোনো সমস্যা তৈরি করবে কি না?

অভিনয়টা যাঁর যাঁর ভেতরের বিষয়। আমি এখনো থিয়েটার করি। অন্যরা করছেন কি না, ধারণা নেই। কিন্তু এখন স্কুলিংয়ের সুযোগ অনেক বেশি। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। কেউ অভিনয় না জেনেই আসছে। এসব অভিনেতা জনপ্রিয়ও হন। আবার কালের স্রোতে হারিয়েও যান। টিকে থাকার জন্য সার্বক্ষণিক চর্চাটা জরুরি।

প্রথম আলো:

‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। শিল্পীরা ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’ দূর করার ক্ষেত্রে কী দায়িত্ব পালন করতে পারেন?

রুচির দুর্ভিক্ষ তো আমরাই তৈরি করেছি। রুচির দুর্ভিক্ষ তৈরির দায়ভার আমাদের সবার। দর্শককে তৈরি করেন একজন পরিচালক তাঁর কনটেন্ট দিয়ে। অভিনয়শিল্পী যতটা পারেন বাস্তব করে চরিত্রটি উপস্থাপন করবেন, সেটাই কথা। কিন্তু সেটা না করে হালের স্রোতে গা ভাসিয়ে, অতি অল্প সময়ে জনপ্রিয়তার জন্য নানা রকম অঙ্গভঙ্গি, কখনো অতিরঞ্জিত করে চরিত্রকে নষ্ট করছেন। ক্যামোফ্লেক্স করে আসল চরিত্র না বুঝে চরিত্রকে নষ্ট করছেন। এ জায়গা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।