‘একজন অভিনয়শিল্পীর একজীবনে সব জানার সুযোগও নাই’

একটা সময় শুধু টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করতেন ফারজানা ছবি। মাঝে বেশ কয়েক বছর কম কাজ করেছেন। এখন তিনি ওটিটি মাধ্যমেও কাজ করছেন। তাঁর কাজগুলো বেশ আলোচিতও। ‘টান’ দিয়ে অভিনয়ের নতুন মাধ্যম ওটিটিতে অভিষিক্ত হওয়া এই অভিনেত্রী সর্বশেষ ওয়েব ফিল্ম ‘ফ্রাইডে’ মুক্তির পরও আলোচনায়। এরই মধ্যে কাজ করেছেন চলচ্চিত্রেও। ঈদের একটি ধারাবাহিক নাটকেও অভিনয় করেছেন। এসব নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন

প্রশ্ন :

কেমন আছেন?

আমি বেশ ভালো আছি। আজ বাসায়।

ফারজানা ছবি
সংগৃহীত

প্রশ্ন :

শুটিংয়ের কী খবর?

ঈদের জন্য সাত পর্বের একটা নাটকের শুটিং করলাম। ‘বকুলপুর’ নামের একটি ধারাবাহিকের কাজ করি, ওই নাটকের পরিচালক কায়সার আহমেদ একই নামে ওই নাটকের ঈদ স্পেশাল করে বানিয়েছেন। দীপ্ত টেলিভিশনে এটি দেখানো হবে।

প্রশ্ন :

ঈদের আর কী কাজ করলেন?

উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো কাজ করিনি। তবে এর আগে ওটিটির জন্য কয়েকটি কাজ করলাম। দুটি চলচ্চিত্রের শুটিংও করলাম। একটি ‘মা’ অন্যটি ‘ময়ূরাক্ষী’।

প্রশ্ন :

আপনার অভিনীত সর্বশেষ ওয়েব ফিল্ম ‘ফ্রাইডে’ আপনাকে আলোচনায় এনেছে...

‘ফ্রাইডে’ আমার জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি। এটাতে আমার চরিত্রের তিনটা শেডস আছে। এটাতে কাজ করার জন্য আমাকে মানসিকভাবে খুব স্ট্রং হতে হয়েছে। অভিনয়ের সময় প্রতিটা দৃশ্যকে আমার একেকটা চ্যালেঞ্জ মনে হয়েছে। দিন শেষে তিনটা বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার চরিত্রটা চমৎকার বেরিয়ে এসেছে। দর্শকেরাও আমার চরিত্রের স্ট্রাগল দেখেছে। আমি আমার চরিত্রের সংগ্রাম দেখেছি। চরিত্রের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা ও সততা ছিল বলে মনে হয়েছে। যখন ছবিটির প্রিমিয়ার হয়েছে, সবার কাছে যে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি—তাতে তেমনটাই মনে হয়েছে।

প্রশ্ন :

বলছিলেন, ‘ফ্রাইডে’ আপনার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহসটা কীভাবে করলেন?

ওটিটিতে আমার প্রথম কাজ চরকির ‘টান’। এরপর একই প্ল্যাটফর্মে ‘নিঃশ্বাস’ করেছি। মনে হলো নিজেকে নতুন করে এক্সপ্লোর করছি। চরকির সঙ্গে কাজ করার সময় মনে হলো, একজন অভিনয়শিল্পীর জন্য তার অভিনয় জানাটাই শুধু যথেষ্ট নয়। অভিনয়টাকে যাঁরা উপস্থাপন করেন, তাঁদের উপস্থাপনের ভঙ্গি এবং উদ্যোগটাও অনেক জরুরি। আমাদের অনেক মেধাবী শিল্পী ও পরিচালক আছেন—কিন্তু তাঁদের সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট যদি যুগপৎভাবে অভিনয়ের সঙ্গে কাজ না করে, তাহলে অভিনয়শিল্পীর তার অভিনয়টা দর্শকের সামনে তুলে ধরা কঠিন। আমরা অনেক অভিনয়শিল্পী আছি, যারা নিজেকেই নিজেরা জানি না, চিনিও না। আমার মেধা কতটুকু, মননের বিস্তার কতটুকু বা আমি আসলেই নিজেকে অভিনয়ে কতটা বৈচিত্র্যময়ভাবে উপস্থাপন করতে পারি—এটাই জানি না। একজন অভিনয়শিল্পীর একজীবনে সব জানার সুযোগও নাই। হঠাৎ করে একটি বা দুটি চরিত্রে যে সুযোগটা আসে, সেটা সৌভাগ্যের। চরকির ‘টান’–এ আমার চরিত্রের বিস্তার অতটা ছিল না, কিন্তু চরিত্রের গুরুত্ব দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এনে দিয়েছে। সত্যিকার অর্থে চরিত্রের মানুষটা হয়ে ওঠার জন্য চরিত্রটা বিশ্বাস করা আমার জরুরি ছিল, আমি বিশ্বাস করতে পেরেছিলাম, এরপর দর্শকের কাছ থেকে সেই ফলাফলও পেয়েছি। এরপর ডাক পেলাম, ‘নিঃশ্বাস’–এ, সেখানেও চরিত্রের ব্যাপ্তি অতটা ছিল না। তারপরও আলোচনায় এসেছি। একজন অভিনয়শিল্পীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, একটা সাধারণ কম বিস্তারের চরিত্রে নিজেকে প্রমাণ করা। আমি সেই চেষ্টা করেছি। ‘নিঃশ্বাস’–এ চরিত্রটা ট্রাম্পকার্ড হিসেবে কাজ করেছে। গল্পের মূল যে ঘটনাটা, তা ঘুরিয়ে দেয় আমার চরিত্র। দর্শক চরিত্রটাকে মনে রেখেছে। মনে রাখার কারণেই ‘ফ্রাইডে’ চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম।

ফারজানা ছবি
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

ওটিটি মাধ্যমের নতুন কাজ হাতে নিয়েছেন?

ওয়েবের জন্য নতুন কয়েকটা কাজের প্রস্তাব আসছে। কিন্তু আমি আমার উপযোগী চরিত্র বা যে চরিত্রটি আমি করে একটু স্যাটিসফায়েড হব, সেই ধরনের চরিত্রের খোঁজে আছি। অপেক্ষায় আছি।

ফারজানা ছবি
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

নতুন কাজের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা প্রাধান্য থাকে?

গল্প বাছাইয়ে নেতিবাচক ও ইতিবাচক কোনোভাবে দেখি না। ইতিবাচক ও নেতিবাচক শব্দ দুটি আপেক্ষিক। আমি দেখি, চরিত্রের মধ্যে কতগুলো শেডস আছে। একজন ফারজানা ছবি তাঁর অভিনীত চরিত্র দিয়ে কতগুলো মানুষের বৈশিষ্ট্যকে মেলে ধরতে পারে, সেটাই দেখি। আমি নিজেকে কতটা ভাঙা গড়ার খেলায় দেখতে চাই। এই ভাঙা গড়ার খেলাটা একটা চরিত্রে যত বেশি থাকে, আমার কাছে সেই চরিত্রটা অভিনয় করার জন্য আনন্দের। দেখা গেছে, একই নাটকে আমি ষোলো বছরের মেয়ে বা আশি বছরের বৃদ্ধাও হয়েছি। এই যে নিজেকে নানানভাবে দেখার প্রক্রিয়া, আমি আমার অভিনয়জীবনে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দেখতে চেয়েছি। আমি করি, চরিত্রের গ্ল্যামার হচ্ছে সেটাই, সেই চরিত্রের মানুষটা হতে পারা। এটা একান্তই আমার মত।

ফারজানা ছবি
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

‘টান’, ‘নিঃশ্বাস’ ও ‘ফ্রাইডে’ তিনটি ওয়েব ফিল্মে আপনার অভিনীত চরিত্র প্রশংসিত হয়েছে। ওয়েব সিরিজে কাজ করা হয়নি। এই মাধ্যমে আগ্রহ কতটা?

আমি সেই মাধ্যমেও কাজ করতে চাই। আমাদের অনেক মেধাবী পরিচালক আছেন, তাঁদের তো আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়, আমি এই এই চরিত্রে কাজ করতে চাই। আমি চাই, মেধাবী পরিচালক যাঁরাই আছেন, তাঁরাই আমাকে নিয়ে ভাবুক— এটা আমার প্রত্যাশা। মেধা, মনন ও মূল্যবোধ থেকে নির্মাতারা আরও কিছু চরিত্র তৈরি করুক। আমরাও যাতে অভিনয়শিল্পীদের নানাভাবে পর্দায় দেখাতে পারি। এখন পর্যন্ত প্রতিটা ওয়েব ফিল্মে দারুণ সাড়া পেয়েছি। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও মতাদর্শের মানুষ ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া ‘ফ্রাইডে’ নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউই নেতিবাচক কথা বলেননি, এটা আমার জন্য আনন্দের। অভিনয়জীবনের বড় প্রাপ্তিও।

প্রশ্ন :

এই প্রাপ্তি উপজীব্য করে ভবিষ্যতে কী করার স্বপ্ন দেখেন?

আমি শুধু ভালো কাজ করতে চাই। ভালো গল্প, ভালো চরিত্র। ভালো চরিত্র বলতে একজন নির্মাতা আমাকে বিশ্বাস করাতে পারবে, আমার  আশপাশে, আমার সমাজে বা বাইরে এ রকম চরিত্র আছে। হুট করে কোনো অবাস্তব বা অ্যালিয়েন টাইপ কিছু করতে চাই না, যা আমার কাছে বিশ্বাস হয় না। এ রকম চরিত্র এখন আর করতে ইচ্ছে হয় না।

প্রশ্ন :

তার মানে এ ধরনের কাজ করেছেন?

করেছি তো অবশ্যই। পেশাদার অভিনয়শিল্পী হওয়ার কারণে এমন কাজ করতে হয়েছে। পেশাদার অভিনয়শিল্পী যারা আমাদের কাছে দেখি, এক–দুই বছর পর একটা ভালো চরিত্র আসে। আর্থিক স্বাবলম্বিতা অভিনয়ের ওপর নির্ভর করার কারণে তখন বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে আপস করতে হয়েছে। সেই জায়গা থেকে এখন বের হয়ে আসতে চাই। অপেক্ষা করতে চাই ভালো কাজের জন্য। চরিত্রের ও গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা চাই।