প্রথম আলো :
শুটিংয়ের ব্যস্ততা কেমন?
শাহেদ আলী: গত চার মাস দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কাজ অনেকটাই কম ছিল। চারটি ধারাবাহিক নাটক করি—সেখানেও প্রভাব পড়েছিল। এমনও হয়েছে, প্রচার বন্ধ হয়েছিল। আগের লগ্নিকারীরা অনেকে নেই। নতুন অনেকে আসায় এখন কাজ বাড়ছে। পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে। এভাবে পেশাদারত্ব তৈরি হয় না। এভাবে ইন্ডাস্ট্রি এগোবে না। বরং আমরা সাফারার হই। আমাদের অবস্থা এমন হয়ে গেছে, পেশার প্রতি সম্মান না থাকায় নাটক শব্দটাই নেগেটিভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পেশাগত জায়গা গড়ে ওঠেনি। এখানে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এর পেছনে সাংগঠনিক ব্যর্থতাও রয়েছে। এখন দিন দিন নাটকের পেশাগত জায়গা আরও নষ্ট হচ্ছে।
প্রথম আলো :
ওয়েব সিরিজ ‘চক্র’ ও ‘ফ্রেঞ্জি’তে আপনার চরিত্র নিয়ে ভক্তরা ফেসবুক গ্রুপগুলোতে আলোচনা করছেন। কেন চরিত্রটি বিশেষ হয়ে উঠল?
শাহেদ আলী: চক্র সিরিজে খুন হওয়া পরিবারের বড় ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছি। অনেক দিন পরে আলাদা চরিত্র ও ব্যতিক্রম গল্প দর্শক দেখলেন। এ ছাড়া গল্প বলার ধরন ভালো। অভিনয়ের সর্বোচ্চ সুযোগ পেয়েছি। আর ফ্রেঞ্জিতে ফ্যাশন ডিজাইনার চরিত্রে অভিনয় করেছি, যে রোমান্টিক একটা মানুষ। এটা মাত্র মুক্তি পেয়েছে, এখনই এটা নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না।
প্রথম আলো :
কেন মনে হয় সর্বোচ্চ সুযোগ পেয়েছেন?
শাহেদ আলী: এখন প্রধান চরিত্র নিয়েই লগ্নির জায়গায় কিংবা অভিনয়ের জায়গায় কথা হয় বেশি। কিন্তু দর্শক, সমালোচকেরা সব সময় অভিনয়টাই খোঁজেন। সেটা ভুলে গেলে চলবে না। জীবন থেকে নেয়া সিনেমায় নায়ক কে কেউ বলতে পারবে? আমাদের আলোচিত নাটক বহুব্রীহি, অয়োময়, আজ রবিবার–এর কে নায়ক? ফরীদি ভাই, আফজাল ভাই কেউ নায়ক ছিলেন? সেই জায়গা থেকে আমরা সরে গেছি। মার্কেটিং পলিসি পরিবর্তন হয়েছে। যে কারণে কেউ চরিত্রাভিনেতা হতে চান না। সবার মধ্যে নায়ক হওয়ার প্রচেষ্টাই বেশি চলছে।
প্রথম আলো :
কেউ চরিত্রাভিনেতা বললে কী বলেন?
শাহেদ আলী: সবাই তো চরিত্রাভিনেতা, বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন। কেউ তো চরিত্রহীন না। পঙ্কজ ত্রিপাঠী, নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী, ইরফান খান—সবাই চরিত্রাভিনেতা ছিলেন। সেভাবেই তাঁদের বেড়ে ওঠা। তাঁদের একজন অনুরাগ কশ্যপ, সুধীর মিশ্র, বিশাল ভরদ্বাজদের মতো নির্মাতারা ছিলেন। তাঁরা চরিত্র নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। নায়ক-নায়িকাদের চেয়ে সবাই ভর করেছেন চরিত্রে। এমন সুযোগ আমরা কম পাই।
প্রথম আলো :
এখানে চরিত্রাভিনেতাদের নিয়ে ভাববার কেউ নেই?
শাহেদ আলী: এখান চরিত্রাভিনেতাদের নিয়ে ভাবার লোক কম। ভালো চরিত্র না এলে চ্যালেঞ্জটা নেব কীভাবে? এরপরও জীবন চালানোর জন্য পেশাগত কাজই করে যাব। কিন্তু একটা শিল্পীর কাজ, দায়বদ্ধতার জায়গায় মাঝেমধ্যে প্রশ্ন তৈরি করে। হয়তো অনেক কাজ শুধু টাকার জন্য করি। আমি অন্তর থেকে চাই আমার পায়ের চিহ্ন রেখে যেতে। যেভাবে একজন আলী যাকের, আবুল খায়ের, হুমায়ুন ফরীদি, খালেদ খান, আহমেদ রুবেল এখনো দর্শকদের মনে অভিনেতা হয়েই বেঁচে রয়েছেন। এটা আমার আত্মিক চাওয়া, এভাবেই থেকে যেতে চাই।
প্রথম আলো :
কয়েক বছর ধরে তারকাদের যে হারে পারিশ্রমিক বাড়ছে, সেখানে কোনো অভিমান রয়েছে?
শাহেদ আলী: আমার প্রশ্ন, কতজনের বাড়ছে? সংখ্যায় ২০ জনের বেশি পাবেন না। খুবই স্বল্পসংখ্যক। একসেপশন কিন্তু উদাহরণ হতে পারে না। আগেও অনেক তারকা অনেক পারিশ্রমিক নিতেন, এখন আর তাঁরা নেই। তাঁরা অনেকেই অন্যভাবে চলছেন। কিন্তু তাঁদের কেউ কেউ ইন্ডাস্ট্রি বা বাজার নষ্ট করে গিয়েছেন। সুতরাং এখানে অভিমানের জায়গা নেই। আমি অভিমানী না। নিজের মতো করেই নিজের কাজটুকু করি। নিজেকে সংস্কার করতে চাই। এটাই মুক্তির পথ। সবার আগে নিজেকে ঠিক করতে হবে। কারণ, অন্যকে নিয়ে আঙুল তোলা সোজা। নিজেকে বদলানো কঠিন।
প্রথম আলো :
দীর্ঘদিন পরে স্ত্রী অভিনেত্রী দীপা খন্দকারের সঙ্গে অভিনয় করলেন? একসঙ্গে দেখা যায় না কেন?
শাহেদ আলী: প্রায় ৮–১০ বছর পরে আমরা একসঙ্গে ফ্রেঞ্জি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করলাম। এটা মূলত সিরিজটির পরিচালক জাহিদ প্রীতম চেয়েছেন। একসঙ্গে অভিনয় করা কঠিন। এটা আমার দিক থেকে বলছি। স্বামী–স্ত্রী হিসেবেই তো রিয়েল লাইফে আছি। এখানে আলাদা করে অভিনয় করার কিছু নেই। এখানে আলাদা করে বাস্তবমুখী করার কিছু নেই।
প্রথম আলো :
‘অর্পিতা’র পরে আর কোনো সিনেমায় কাজ করেননি?
শাহেদ আলী: এর মধ্যে বেশ কিছু সিনেমায় কাজ করেছি। জ্বলে জ্বলে তারা, নীলচক্র, পায়েলসহ বেশ কিছু সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আমি আসলে অনেক সিনেমারই প্রস্তাব পাই। যেখানে চরিত্র প্লে করার সুযোগ পাই, সেখানে কাজ করি। সিনেমায় দর্শক নতুনভাবেই দেখেন আমাকে।