সত্যি বলতে ভয় পেয়ে নায়িকা হইনি : জেনি
ওটিটিতে অভিষেক হতে যাচ্ছে নওরিন হাসান জেনির। গোলাম সোহরাব দোদুল পরিচালিত ‘মোবারকনামা’ সিরিজে শিগগিরই দেখা যাবে তাঁকে। এদিকে প্রথমবার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। ‘শ্যামা কাব্য’ নামের সেই ছবির পরিচালক বদরুল আনাম সৌদ। এসব নানা প্রসঙ্গে গতকাল দুপুরে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হয়, তখন সিরিজের ডাবিংয়ে বের হচ্ছিলেন।
প্রথম আলো :
কিসের ডাবিংয়ে যাচ্ছেন?
‘মোবারকনামা’ নামে একটি সিরিজ করেছি, ওটারই ডাবিং করতে যাচ্ছি। এটি আমার প্রথম ওটিটির কাজ। ঢাকার বেরাইদের একটি স্টুডিওতে সেট বানিয়ে কাজটা করা হয়েছে। ছয় দিন শুটিং করেছি।
প্রথম আলো :
দেশে ওটিটির যাত্রা তো কয়েক বছর হলো। আপনার সমসাময়িক অনেকর এই মাধ্যমে কাজ করেছেন। আপনার অভিষেক কি দেরিতে হলো মনে করছেন?
আমি জানি না এত দেরি কেন হলো। এরপরও আমি হ্যাপি, দেরিতে হলেও একটা চমৎকার কাজ দিয়ে শুরু হয়েছে। এই সিরিজে আমার চরিত্র, গল্প এবং স্ক্রিপ্ট নিয়ে ওই রকম কোনো অভিযোগ নেই। আমার মনে হয়েছে, সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা হয়েছে। এ–ও বিশ্বাস, সঠিক সময়েই সঠিক কাজটা হয়। তার আগে এসব নিয়ে কোনো আক্ষেপ করে লাভ নেই। এমনিতে আমার কোনো কিছু নিয়ে আক্ষেপ কাজও করে না।
প্রথম আলো :
দীর্ঘদিন টেলিভিশন মাধ্যমে কাজ করলেও ওটিটিতে আপনার প্রথম কাজ। দুই মাধ্যমের পার্থক্যটা কেমন মনে হয়েছে?
মূল পার্থক্যটা হচ্ছে—নাটক, টেলিছবি যা–ই করতাম, সেসবের প্রি–প্রোডাকশনের অংশ আমরা হতাম না। ডিরেক্টর, স্ক্রিপ্ট রাইটার বা তাদের অ্যাসিস্ট্যান্টরাই এসবের অংশ হতেন। আমরা একটু অভিনয় নিয়ে আলোচনা করব, এমন সুযোগ ছিল না। সময়ও থাকত না। কিন্তু এখানে সবাইকে প্রি–প্রোডাকশনের অংশ হতে হয়েছে। একটা পর্যায়ে আমরা নিজেদের তৈরির সময় পেয়েছি। আরও একটা পার্থক্য, বেশির ভাগ সময় আমরা নাটকের শুটিং করতাম দুই দিন। এই দুই দিনে ২২ বা ৩০টির মতো দৃশ্যধারণ করা হতো। এখানে এ রকম না, ধরে ধরে কাজ হয়। সময় পাওয়া যায়। সময় পাওয়া গেলে পারফর্ম্যান্স ভালো থাকে। শুটিংয়ের আগে মহড়াও করা যায়। অনেক বেশি গোছানো। আমাকে শুধু অভিনয় নিয়েই ভাবতে হচ্ছে। অন্য কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। খুবই অর্গানাইজড কাজ হয়, তবে একটা সময় টেলিভিশন নাটকও অনেক বেশি অর্গানাইজড ছিল।
প্রথম আলো :
প্রথম আলোকে দেওয়া সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন চরিত্রে আবিষ্কার করতে চান। এই কাজের ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছে কি?
একদমই তাই। এই প্রথম একজন আইনজীবী চরিত্রে অভিনয় করেছি। এটা একটা কোর্টরুম ড্রামা। এর আগে কোনো দিন আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করিনি, যেখানে আদালতে ফাইট করতে হয়। এটা প্রথম, যা করতে হচ্ছে। সিরিজে আমি মোশাররফ ভাইয়ের প্রতিপক্ষ। আমার অংশটুকু পুরোটাই আদালতে। সবকিছু মিলিয়ে এটা ভীষণ ইন্টারেস্টিং।
প্রথম আলো :
আইন বিষয়ে আপনার কি আগে কোনো ধারণা ছিল?
আমার নিজের পড়াশোর বিষয়বস্তু আইন ছিল না (হাসি)। তবে আমি কোর্টরুম ড্রামা খুব উপভোগ করি। তাই এই ধরনের কোনো কনটেন্ট এলে, যে দেশেরই হোক না, আমি দেখার চেষ্টা করি। ওসব দেখতাম বলে একটা লেভেলে আইডিয়াও তৈরি হয়েছে। আদালতে প্রতিপক্ষকে কী বলে সম্বোধন করতে হয়, এ ছাড়া আরও যা যা টার্ম আছে, সাক্ষীর সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়, এসব জানতে পেরেছি। আমাদের সেটে কিন্তু একজন আইনজীবী ছিলেন, তিনি ঠিকঠাকমতো সংলাপ বলছি কি না দেখতেন। কোন শব্দ ব্যবহার করতে হবে, তা–ও বলে দিতেন। আমাদের স্ক্রিপ্টটা যিনি লিখেছেন, তিনিও জেনেবুঝেই লিখেছেন। এর বাইরে নিজে যেমন দেখেছি এবং পড়াশোনা করেছি। অনলাইনে গবেষণাও করেছি।
প্রথম আলো :
কোর্টরুম ড্রামার ক্ষেত্রে নাকি চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। আপনার কাছেও কি তাই মনে হয়েছে?
আমিও এটা বিশ্বাস করি। করার সময় যেমন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি, তেমনি করার আগেও পেয়েছি। এটা মোটেও সহজ না। ইটস অল অ্যাবাউট টাইমিং। কমেডি যেমন টাইমিংয়ে হতে হয়, তেমনি কোর্টরুম ড্রামায় টাইমিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোথায় বিরতি নিচ্ছি, কোথায় কথা বলছি। কোন সংলাপ জোরে বলছি, কোনটা স্লো টোনে বলছি। এখানে ড্রামা তৈরি করার বিষয় আছে। ওই ড্রামা তৈরি না হলে এটা কোনোভাবেই ওয়ার্ক করে না।
প্রথম আলো :
নতুন কী কাজ করছেন?
কথা হয়েছে। চূড়ান্ত কিছুই করিনি।
প্রথম আলো :
কাজ যেহেতু কম করছেন, সময় কাটে কীভাবে?
আমি ভালো কাজ দেখতে পছন্দ করি। তাই পরিকল্পনা করি, কোন কাজটা করলে ভালো হবে। যেহেতু কথাবার্তাও হচ্ছে। এর বাইরে পরিবার নিয়েও সময় কাটে।
প্রথম আলো :
সর্বশেষ কোন কাজ দেখে আপনার ভালো লেগেছে?
‘দ্য রেলওয়ে ম্যান’ খুব ভালো লেগেছে। এটার প্রোডাকশন ভ্যালু বেশ ভালো। অভিনয়ও ভালো। সবচেয়ে ভালো যে ব্যাপারটা লেগেছে, সত্যি ঘটনা অবলম্বনে এটি তৈরি হয়েছে, এটার মধ্যে দমবন্ধ বা শ্বাসরুদ্ধকর ব্যাপার ছিল। সত্যি ঘটনা অবলম্বনে কোনো কাজে এই পরিবেশ তৈরি করা সত্যিই খুবই কঠিন। আমার কাছে মনে হয়েছে, প্রযোজক, পরিচালক বিষয়টা ভালোভাবে সামলে নিয়েছেন। কে কে মেনন, বাবিল খানসহ সবাই দুর্দান্ত অভিনয় করেছে। মিউজিকও দারুণ। একটা ভালো কাজ হতে হলে প্রতিটা বিভাগ ভালো করতে হয়, এটা দেখে আবারও উপলব্ধি হলো।
প্রথম আলো :
‘শ্যামা কাব্য’ দিয়ে তো সিনেমায় অভিষেক হচ্ছে।
এই সিনেমায় পুরোটায় নেই আমি, ছোট্ট একটা চরিত্র। সৌদ (বদরুল আনাম) ভাই একদিন ফোন করে বললেন, ‘আমি আপনাকে একটা স্ক্রিপ্ট পাঠাতে চাই, আপনার যদি ভালো লাগে, তাহলে আপনি কইরেন।’ তখন বলেছি, আমি এমনিই করব। এরপর তিনি বললেন, ‘না না আপনি আগে পড়েন। ছোট একটা চরিত্র। আপনি যদি না করেন, আমি একদম মাইন্ড করব না।’ পড়ার পর মনে হয়েছে, আমি গল্পটার অংশ হতে চাই। কারণ, চিত্রনাট্যটা আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। মনে হয়েছে, চরিত্রের দৈর্ঘ্য কত, সেটার চেয়ে চরিত্রটা পছন্দ করি কি না, গল্পটাই বড় বিষয়।
প্রথম আলো :
পুরো সিনেমায় কবে দেখা যেতে পারে?
যেদিন আমাকে কোনো পরিচালক গল্প দেবেন আর বলবেন আপনি পুরোটায় আছেন, সেদিনই (হাসি)।
প্রথম আলো :
নিশ্চয় সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন?
পেয়েছি তো। সত্যি বলতে অনেক পেয়েছি।
প্রথম আলো :
প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব কবে পান?
১৩ বছর বয়সে যখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি, তখন প্রথম সিনেমার প্রস্তাব পাই। মতিন রহমান আংকেলের কাছ থেকে পেয়েছিলাম, নায়িকা হিসেবে আমাকে সবার সামনে পরিচয় করাতে চেয়েছিলেন। আমার বাসায় এসে তিনি কথা বলেছিলেন। নাম মনে না থাকলেও এটুকু মনে আছে, দক্ষিণ ভারতের কোন একটা সিনেমার রিমেক করতে চেয়েছিলেন। গল্পটাও কিন্তু ভালো ছিল।
প্রথম আলো :
কেন করলেন না?
সত্যি বলতে ভয় পেয়ে নায়িকা হইনি। ভয় পেয়েছি এ কারণে, আমার মনে হয়েছে, যদি ভালো কিছু করতে না পারি, তখন উনার কী হবে। একটা ছবি মানে তো অনেক মানুষের জীবিকা।
প্রথম আলো :
ওই বয়সে এসবও ভাবতেন?
আমার সব সময় এসব বিষয়ে সচেতনতা ছিল। অন্যান্য দিক দিয়ে ম্যাচিউরিটি কম থাকলেও এসব আমাকে ভাবাত।
প্রথম আলো :
ভয়টা ভাঙল কবে?
নাটকে অভিনয় করার দুই–তিন বছরের মধ্যে ভয়টা কেটে যায়।
প্রথম আলো :
তখন ছবিতে অভিনয় করেননি কেন?
সত্যি বলতে, ওসব সিনেমায় অভিনয়ে মন টানেনি। আমি ছবিটা করতে চাই, এমনটা মনে হয়নি। তখন যদি মনের মতো সিনেমা পেতাম, তাহলে অবশ্যই করতে ভালো লাগত। আমার তখন মনে হয়েছে, নাটকের গল্প আরও বেশি ইন্টারেস্টিং। আমি এনজয়ও করছিলাম। তবে এখনকার চিত্রটা পাল্টেছে।