খুব হইচইয়ের মধ্যে আছেন মনে হয়?
নিরব : আমি পুরাই দৌড়ের ওপর। মেয়েদের স্কুলে আনা–নেওয়ার কাজ। পারিবারিক কাজও ছিল। সব সেরে এখন একটা মিটিংয়ে যাচ্ছি।
প্রথম আলো :
মেয়েদের দৃষ্টিতে তাদের বাবা কেমন?
নিরব : বাবা তো ওদের কাছে সুপারম্যান। তাদের মতে, ওর বাবার পক্ষে পৃথিবীর সবকিছু করা সম্ভব। বাসায় দেখা গেল, ওদের মা–ও যদি কোনো বিষয়ে আমাকে প্রটেস্ট করে, সেই বিষয়ে আমার কোনো কথাই বলতে হয় না। মেয়েরাই আমার হয়ে কথা বলে। ওদের মতে, ‘বাবা ইজ দ্য বসেস অব অল বস।’
বাসায় বাবা কী এমন করে যে মেয়েদের বস হয়ে গেল?
নিরব : সাধারণত মেয়েরা বাবা-ঘেঁষা হয়। মায়েরা তো একটু শাসন করে। সেখানে আমি প্রশ্রয় দিই। এটা করো, ওইটা করো—এসব বলি। স্বভাবতই মেয়েদের তাই আমাকে ভালো লাগে। ছোটবেলা থেকে ঘুম পাড়ানো নিয়েও একটা অ্যাটাচমেন্ট তৈরি হয়। কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর কথা খুব মনে থাকে। অথচ এটা মেয়েদের মা–ও করে। কিন্তু কেন জানি মনে হয়েছে, মেয়েদের বাবারটাই বেশি মনে থাকে।
প্রথম আলো :
তখন তো নিজের মা–বাবার কথাও মনে পড়ে?
নিরব : নিঃসন্দেহে। আমার বাবা মারা গেছেন ২৩ বছর আগে। ছোটবেলায় দেখতাম, আমার বাবা অফিস বা বাইরে থেকে বাসায় ফিরে উপুড় হয়ে ঘুমাতেন। বাবার মতো এটা আমিও চেষ্টা করেছি। দেখা গেছে, আমি কখনো ডান পাশে আবার কখনো বাঁ পাশে কাত হয়ে যাই। বাবার মতো ঘুমানোটা আর হয় না। আমার দুই মেয়ের ছোটবেলা থেকেই উপুড় হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস। পুরাই আমার বাবার অভ্যাস পেয়েছে। ছোট মেয়ে তো হুবহু আমার মায়ের মতো দেখতে। এখন তো বিভিন্ন অ্যাপ আছে, সেখানে দাড়ি রাখলে কেমন লাগে, বার্বি হলে কেমন দেখাবে, বিভিন্ন বয়সে দেখতে কেমন—এসবের ধারণা নেওয়া হয়। এসবে যখন ছোট মেয়ের ছবি বসিয়ে একদম বয়স্ক চেহারা দেখা হয়, তখন দেখতে হুবহু আমার মায়ের মতো লাগে।
এসব কি বড় মেয়ে বানায়?
নিরব : না, আমার বউ বানায়। আমার বড় মেয়ে সেদিন বেশ ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা ঘটিয়েছে।
প্রথম আলো :
কী সেই ঘটনা?
নিরব : সেদিন বাসায় মোবাইল স্ক্রল করতে করতে বড় মেয়ে ভিডিও ক্লিপ দেখছিল। দেখতে দেখতে আমার আর দীঘির একটা ভিডিও দেখে। তখন গাজীপুরে অপারেশন জ্যাকপট ছবির শুটিং করছি। সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও কল দিয়ে বলতেছে, বাবা, তোমাকে দেখলাম, মোবাইল স্ক্রল করতে করতে দেখলাম, তুমি একটা মেয়ের সঙ্গে নাচতেছ। তোমার না বউ আছে? তুমি আজ বাসায় আসো, তোমার খবর আছে (হাসি)।
প্রথম আলো :
দুই মেয়ের বয়স কত?
নিরব : বড় মেয়ের সাত বছর, ছোট মেয়ের পাঁচ বছর। দুজনই ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ছে।
মেয়েদের স্কুলে আনা-নেওয়ার ব্যাপারটা আপনি করছেন?
নিরব : শুটিং ও অন্যান্য ব্যস্ততা না থাকলে আমিই করি। তবে প্রায় সময় ওদের মা-ই করে। ঘর ও বাহির—দুটোই বাচ্চাদের মা সুন্দরভাবে সামলায়।
প্রথম আলো :
এবার ‘ছায়াবৃক্ষ’ প্রসঙ্গ। ছবিটি নিয়ে কেমন প্রত্যাশা ছিল, প্রাপ্তি কেমন হয়েছে?
নিরব : সাধারণত যে ছবিগুলো সরকারি অনুদানের, সেগুলো ঠিকঠাকভাবে বানাতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনুদানের ছবির সঠিক ব্যবহার হয় না। গল্পনির্ভর ছবিগুলোর ক্ষেত্রে তো অনেক বেশি প্রচারণা চালিয়ে দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে আসার আমন্ত্রণ জানাতে হয়।
প্রথম আলো :
কিন্তু আপনার অন্য ছবির ক্ষেত্রে তো প্রচারণা ঠিকই হয়েছে?
নিরব : এটাতেও হয়েছে। কিন্তু তুলনামূলক অনেক কম। ছায়াবৃক্ষ যেহেতু গল্পনির্ভর এবং নতুন ভাবনার, চা–বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে গল্পের একটা ছবি, তাই এটা নিয়ে প্রচারণাটা অনেক বেশি দরকার ছিল। মানুষদের চা–বাগান নিয়েই–বা আগ্রহটা কত? জীবনে এমন মানুষও আছে, তারা কোনো দিন চা–বাগানই দেখেনি। তাই নতুন বিষয়টাকে আগ্রহী করে তুলতে হলে প্রচারণাটা বেশি দরকার। তবে যারা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখছে, খুবই পছন্দ করছে। নতুন একটা চরিত্র। সবচেয়ে বেশি ফিডব্যক পেয়েছি গানের। ‘ল সই তুলি তুলি’ তাদের কাছে একেবারে ব্যতিক্রম লেগেছে। ‘চা–বাগানের কোলেতে’ গানটি নিয়েও ভালো লাগার কথা বলেছে। এই দুটি গান আমি আর অপু বিশ্বাস বিভিন্ন স্টেজ শোতে পারফর্মও করেছি। আমার কিছু দূরের সার্কেল আছে, তারা ছবি দেখেনি। কিন্তু গান দেখে যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে, এমনটা সাধারণত ছবি দেখে অনেকে জানায়। মনে হয়েছে, গান দেখে পুরো ছবি দেখে ফেলছে।
‘অপারেশন জ্যাকপট’ ছবির শুটিং কেমন চলছে?
নিরব : বেশ বড় আয়োজনে ছবিটির শুটিং চলছে। সমমনা অনেকে যেমন আছে, তেমনি আমাদের সিনিয়র কয়েকজন তারকাও এই ছবিতে অভিনয় করছেন। মানের ক্ষেত্রে একবিন্দু আপস করা হচ্ছে না। বাহুবলী সিনেমার কোরিওগ্রাফার আমাদের এই ছবিতে কাজ করছেন। সত্যি বলতে, ইতিহাসনির্ভর এই ছবির কাজ করে নতুন করে অনেক কিছু জানতে পারছি।
প্রথম আলো :
নতুন ছবির কাজ শুরু করবেন কবে?
নিরব : ‘কয়লা’ ছবির কাজ চলছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি ছবির ব্যাপারে আলোচনা চূড়ান্ত। কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি আছে। এরপরই সবাইকে জানাব।