আর্বোভাইরাস আমার প্রথম ও শেষ ব্যান্ড

আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আর্বোভাইরাস’-এর সঙ্গে দেড় যুগের যাত্রায় ইতি টানলেন ব্যান্ডের মূল গায়ক সূফী ম্যাভরিক। ব্যান্ড ছাড়ার কারণ, আগামী পরিকল্পনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
প্রশ্ন:

আর্বোভাইরাস ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?

আর্বোভাইরাসের বেশির ভাগ গানের গীতিকার রঞ্জন। ২০১৮ সালের দিকে ও যুক্তরাজ্যে চলে যায়। ও চলে যাওয়ার পর গান করা খুব দুরূহ হয়ে উঠেছিল। মেসেঞ্জার কিংবা ই–মেইলে রেকর্ডিং করে গান পাঠিয়ে কাজ চালাতে বেশ সময় লাগছে। ব্যান্ডের শো আসবে, শো করা যাবে। তবে ব্যান্ডের মূল কাজ হলো, নতুন গান করা। দুই দশকে আর্বোভাইরাসের ৪৫টির মতো গান বের হয়েছে। এটার সুফল হিসেবে মূলত শোগুলো পাওয়া যায়। করোনাভাইরাসের মধ্যে প্রায় দুই বছর কোনো শো করা হয়নি। বিষয়টিও আমাদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। পরে নাফিস আল আমিন (ড্রামার) যখন দেশের বাইরে চলে গেল, এর মধ্যে আদনানও (গিটারিস্ট) দেশের বাইরে চলে গেছে। ফলে মনে হলো ব্যান্ডের মূল সদস্যরাই তো থাকছেন না।

প্রশ্ন:

কাজগুলো কি বিকল্প উপায়ে চালিয়ে নেওয়া যেত না?

ইন্টারনেটের যুগে জুমে কথা বলে গান রেকর্ডিং করা গেলেও মিউজিক ভিডিও নির্মাণের জন্য তিনজনকে তিন দেশ থেকে উড়ে আসতে হবে। রঞ্জনের ওখানে যখন সকাল ছয়টা, আদনানের ওখানে হয়তো বিকেল পাঁচটা বাজে। নাফিসের কথা তো বাদই দিলাম। তিনজনের সময় মিলিয়ে একসঙ্গে গান করা দুরূহ। (গিটারিস্ট) সুহার্তো ব্যান্ডের সঙ্গে শুরু থেকেই ছিল, আর্বোভাইরাসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মাঝে ব্যক্তিগত কারণে সুহার্তো অনিয়মিত হয়ে পড়লে আমরাই ব্যান্ডের কাজ চালিয়ে নিয়েছি। ব্যান্ডের প্রতি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিবেদন ছিল রঞ্জনের। ও বাইরে চলে যাওয়ার পর ভাঙন বলব না, আর্বোভাইরাসের পরিবর্তন শুরু হয়েছিল। সুহার্তো যত দিন আছে, তত দিন আর্বোভাইরাস ভাঙবে না।

প্রশ্ন:

মূল সদস্যই তো নেই, তাহলে আর্বোভাইরাসের ভবিষ্যৎ কী?

পুরোটাই সুহার্তোর ওপর নির্ভর করবে। আমরা সবার আগে বন্ধু ছিলাম, তারপর ব্যান্ডের সদস্য। আমাদের কখনো মনোমালিন্য হয়নি, সমমনা ও কাছাকাছি আদর্শের মানুষ ছিলাম আমরা। রঞ্জন যা লিখেছে, ওটার সঙ্গে আমাদের কখনো দ্বিমত হয়নি। যারাই আসুক না কেন, ছাড় দেওয়ার ব্যাপারটা থাকতে হবে। কোনো কিছুই আমরা চাপিয়ে দিইনি।

প্রশ্ন :

আর্বোভাইরাসের সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?

প্রথম গায়ক ছিল শোভন, আমাদের বন্ধু। ও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড ছেড়ে দেওয়ার পর আমি ব্যান্ডে আসি। রঞ্জন আর্টসেলের সেজান ভাইকে বলে রেখেছিল, নতুন কাউকে পেলে যেন তাকে জানায়। ২০০২ সালে সেজান ভাইয়ের সুপারিশে আর্বোভাইরাসে যুক্ত হই।

প্রশ্ন :

১৮ বছরের যাত্রা কেমন ছিল?

ভালো, মন্দ, সংগ্রাম, পাগলামি—সবকিছু মিলিয়ে বহু স্মৃতি আছে। দারুণ একটা জার্নি। রেকর্ডিংয়ের সময় একটা টেক হচ্ছে না, আরেকটা টেক নিচ্ছি। একটা সুর হচ্ছে না, আরেকটা সুর নিচ্ছি। আমাদের অফিস ছিল উত্তরায়। ওখানে রঞ্জনের বাসা ছিল। অফিস শেষ করে ওখানে কাজ করেছি। আমি এই জার্নিগুলো মিস করব। শুক্র, শনিবার রঞ্জনের বাসায় চলে যেতাম। গান শুনতাম। শুধু রেকর্ডিং নিয়েই থাকতাম, এমন নয়। এই অভিজ্ঞতাগুলো আমি মিস করব।

প্রশ্ন :

আর্বোভাইরাস ছাড়ছেন, গানও কি ছাড়ছেন?

অবশ্যই গান ছাড়ছি না। গান ছাড়লে আর কী থাকে। আর হয়তো ব্যান্ড করব না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সমমনা বন্ধু আসলে পাওয়া যায় না। খুব ভাগ্যগুণে পাওয়া যায়। আমি খুব সৌভাগ্যবান। আমরা একসঙ্গে আড্ডা দিতে পারতাম। ওইখানে রসায়নটা ছিল। এখন কাছাকাছি বয়সের সমমনা মানুষ পাওয়াটা দুষ্কর। সে কারণেই আমি কোনো ব্যান্ড করব না। আর্বোভাইরাস আমার প্রথম ও শেষ ব্যান্ড।

প্রশ্ন :

একক ক্যারিয়ার গড়ার কোনো পরিকল্পনা আছে?

কখনোই একক ক্যারিয়ার গড়ার কথা চিন্তা করিনি। সবার আগে আর্বোভাইরাসের চিন্তা করতাম। ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। আমার মাথার ওপর আর্বোভাইরাসের সাইনবোর্ড ছিল। এখন যেহেতু আর্বোভাইরাস থেকে বের হয়ে গেছি, ফলে মাথার ওপর সাইনবোর্ড নেই। একক ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে শুরু থেকেই শুরু করতে হবে। আমার কখনোই সলো বের করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। পরিকল্পনা করে, চিন্তাভাবনা করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।