মানুষ ফেসবুকে একটা মন্তব্য করাকে বিরাট সফলতা ভাবে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে গেল দুই মাস সংস্কৃতি অঙ্গনে কাজকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন কেউ কেউ কাজ শুরু করেছেন। শুটিং করেছেন অভিনয়শিল্পী খায়রুল বাসার। গতকাল সোমবার দুপুরে তাঁর সঙ্গে কথা বলল ‘বিনোদন’

প্রথম আলো:

শুটিং শুরু হলেও এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক গতি পায়নি। কবে নাগাদ স্বাভাবিক হতে পারে বলে মনে করছেন?

খায়রুল বাসার: আমার তো মনে হয় আরও মাস দেড়–দুই লাগবে। রাজনৈতিক একটা পরিবর্তন গেল, ভয়াবহ বন্যাও গেল—সব মিলিয়ে এখনো আমরা স্বাভাবিক হতে পারছি না। একধরনের অস্বস্তি, অনিশ্চয়তা আছে।

প্রথম আলো:

কী ধরনের অনিশ্চয়তা?

খায়রুল বাসার: আমি ছাত্র–জনতার আন্দোলনে ছিলাম। আন্দোলন চলাকালীন একটা হুমকি–ধমকি তো ছিল। ফেসবুক ইনবক্সে এসে যারা এসব হুমকি–ধমকি দিত, তারা পরিচিত কেউ ছিল না। দেখতাম, বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরাই এসব করত। আমিও তাই খুব একটা গুরুত্ব দিতাম না। তারা এটাও বলত, টার্গেট করে রাখছি, দেখে নেব। এই–সেই আরও কত কী। আমি তো আসলে সব সময় শিল্পী হিসেবে যে অন্যায় হচ্ছে সেই জায়গা থেকে কথা বলতাম। প্রতিদিন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, আমাদের দেশটা স্বাধীন দেশ, সরকারপ্রধান আমাদের অভিভাবক। স্বাধীন দেশে এভাবে মানুষ হত্যা হবে, তা তো কল্পনাতীত। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই হুমকি–ধমকি দিতেন। তবে এই সময়ে আমাদের অঙ্গনের অনেকেই খবর নিয়েছেন, কেমন আছি জানতেও চেয়েছেন, ঠিক আছি কি না। তবে সবকিছুর পরও আমার মনে হয় না, বাইরে এসব নিয়ে ঝামেলা হবে। খুব বেশি ঝামেলা হবে বলে মনে হয় না।

প্রথম আলো:

অনেকে বলেন ফেসবুকে শিল্পীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে...

খায়রুল বাসার: আমাদের তো নানাজনের নানা মত। একটা কথা নানাজন নানাভাবে বলেন। আমার বা আমার বন্ধুর ভাবনা যা বা আমরা যে পথ দিয়ে এসেছি, আমাদের শিক্ষা হচ্ছে—কিছু একটা বলার আগে দশটা বিষয় ভাবতে হয়, সহনশীল থাকা লাগে। ধৈর্য ধরা লাগে। ফেসবুকের ওসব মন্তব্যকারীরা এসব ভাবে না। ফেসবুকে একটা মন্তব্য করাকে বিরাট সফলতা ভাবে। এখানে আরেকটা কথা বলতে চাই।

খায়রুল বাসার
সংগৃহীত

প্রথম আলো :

কী কথা?

খায়রুল বাসার: আমাদের আসলে কাজের ভ্যালু কমে গেছে। ঠিকঠাক গল্প বলি না। ঠিকঠাক কাজও করি না। একধরনের দর্শক বা মানুষকে খাওয়ানোর জন্য কাজ করি। মানুষই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে, কী করব আর করব না! কোনটা হলে ভিউ হবে, কোনটা হলে হবে না, এমন ভেবে কাজ করছি। এটা ভেবেই একজন পরিচালক যখন একটা প্রজেক্ট করেন, তা তো দুঃখজনক।

প্রথম আলো:

কয়েক বছর ধরে এ কথাটা বেশ শোনা যাচ্ছে, দর্শক চাহিদার কথা মাথায় রেখে কাজ করেছি। এটাকে কতটা সমর্থন করেন?

খায়রুল বাসার: ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী আপনি ফসল উৎপাদন করতে পারেন, শিল্পচর্চা নয়। দর্শক চাহিদা ও বাড়তি লাভের আশায় আমরা বিপথে চলে গিয়েছি। দর্শক যদি উদ্ভট নাচ চায়, তাই বলে উদ্ভট নাচতে হবে! একজন পরিচালক, লেখক তো তাঁদের ভাবনাচিন্তা, দর্শন মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেবেন, মানুষ যা চাইবে তা নয়। আর সেই ভাবনা দিয়ে আমি ও আমরা প্রভাবিত হব।

নাটকের শুটিংয়ে খায়রুল বাসার ও তানজিম সাইয়ারা তটিনী

প্রথম আলো :

আপনি তো এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণে গিয়েছিলেন?

খায়রুল বাসার: আমরা কয়েকজন লক্ষীপুরে গিয়েছিলাম। দেখে বুঝেছি, কী কষ্টে তারা আছেন। তবে এত কষ্টের মাঝেও আমাদের দেখে তাঁরা খুশি হয়েছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ হয়েছে, এ কারণে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এত কষ্টের মধ্যে তাঁরা যখন ভাত ও শাক রান্না করেছেন, আমাদের খাওয়াতে চেয়েছেন, মনে হয়েছে, কী সরল আমাদের জীবন। সবকিছু কত সহজ ও সুন্দরভাবে দেখেন তাঁরা।

প্রথম আলো :

কাজের খবর বলুন?

খায়রুল বাসার: টুকটাক কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে ভিকি জাহেদের সঙ্গে একটা কাজ করেছি। নাম ঠিক হয়নি। কাজটা অবশ্য গেল ঈদের আগে করার কথা ছিল। এটাতে আমার সহশিল্পী পারসা ইভানা। এরপর তটিনী আর আমি একটা কাজ করলাম, নাম চোখ যে মায়ের কথা বলে। আরেকটা কাজ করব এ মাসের মাঝামাঝি।

খায়রুল বাসার
ছবি: প্রথম আলো