‘তখন আমি এত বেশি পাকনামি করে ফেলেছি, মানুষ আমাকে ভুল বুঝেছে’
গত শুক্রবার দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে চলচ্চিত্র ‘অসম্ভব’। অরুণা বিশ্বাস পরিচালিত ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহানা সাবা। দীর্ঘ বিরতির পর ছবিটিসহ অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলল বিনোদন
প্রশ্ন :
প্রায় ছয় বছর পর নতুন ছবি মুক্তি পেল। কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মুভিটি যাঁরাই দেখছেন, সবাই প্রশংসা করছেন। মধ্যবয়সী নারীরা দেখে খুব বেশি পছন্দ করছেন। ব্যাপারটা এ রকম, তাঁদের অনেকে আমাকে ছুঁয়েও দেখতে চান। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ছবিটি যেভাবে দর্শক দেখছেন, তা আনন্দের। শুনেছি, ঢাকার বাইরেও রিপোর্ট নাকি খুব ভালো।
প্রশ্ন :
মধ্যবয়সী নারীদের পছন্দের কারণ কী?
বলতে গেলে তো গল্পটাই বলা হয়ে যাবে। তাই চরিত্রটা নিয়েও কিছু বলতে চাই না। আমি চাই, সবাই প্রেক্ষাগৃহে এসে দেখুক। সত্যি বলতে, চরিত্রটাই এমন, নারীদের বেশি ভালো লাগবেই।
প্রশ্ন :
চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সিনেমায় নিয়মিত হলেন না। এর জন্য কি আপনি দায়ী?
‘আয়না’ আগে শুটিং করলেও ‘খেলাঘর’ (২০০৬) আগে মুক্তি পায়। এরপর অভিনয় করেছি ‘চন্দ্রগ্রহণ’, ‘প্রিয়তমেষু’, ‘বৃহন্নলা’–তে। ভারতে কাজ করেছি ‘ষড়রিপু’, ‘এপার ওপার’ এবং আরেকটা নাম ঠিক না হওয়া সিনেমা। কাজ করেছি ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’ সিনেমারও।
প্রশ্ন :
কিন্তু ছবির সংখ্যা কি আরও বাড়তে পারত না?
তা পারত। কিন্তু বিষয়গুলো আসলে অদ্ভুতভাবে ঘটেছে। হঠাৎ ব্যক্তিগত জীবন ও অন্যান্য কিছু বিষয় মিলে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি। অথচ ভালো কাজ বলতে ওই সময় অনেকে ভাবতেন, আমি একমাত্র অপশন। আলটিমেট পছন্দ অলটারনেটিভ ফিল্মের ক্ষেত্রে। তখন আমি এত বেশি পাকনামি করে ফেলেছি, মানুষ আমাকে ভুল বুঝেছেন। কিন্তু আমাকে নিয়ে কাজ করা যে সহজ, আমি যে শুটিং ফ্রেন্ডলি মানুষ, সঠিক সময়ে সেটে আসি, ঠিকঠাক অভিনয়ের চেষ্টা করি, পরিচালকের কথা শোনার চেষ্টা করি—এসব চাপা পড়ে যায়। সবকিছু মিলিয়ে যাঁরা আমাকে নিয়ে কাজ করতে চাইতেন, তাঁদের মধ্যে আমাকে নিয়ে আতঙ্ক কাজ করেছে।
প্রশ্ন :
এমনটা কেন হয়েছে মনে করছেন?
যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন অনেক কিছু বুঝতে পারি। ওই সময়ে আমাকে নিয়ে অনেকে কাজ করতে চাইতেন। তাঁরা আবার মনে করতেন, আমি আগ্রহ দেখাইনি। আমার মনে হতো, যদি প্রয়োজন হয়, তাঁরা তো নক করবেনই। পরে দেখেছি, আরেকজনকে নিয়ে তিনি কাজ করছেন। সম্ভবত আমি তাঁর পছন্দেই ছিলাম না। তিনি আবার ভেবেছেন, আমি অহংকার দেখিয়েছি। তবে যখন একটা কাজ হয়, তখন তো নানা অপশন থাকেই। তা ছাড়া ওই সময়ে আমার পারসোনাল লাইফেও বাজে অবস্থায় পড়ি। কোভিডের আগে আমি আফজাল ভাইয়ের ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’ শুরু করলাম। নিজেকে নতুন করে শুরু করলাম। হঠাৎ আমি খেয়াল করলাম, আমার চেহারা, স্কিন—সবকিছু মিলিয়ে বাজে অবস্থা যাচ্ছে। বুঝতে পেরে লাইফটা নতুন করে শুরু করলাম।
প্রশ্ন :
নতুন শুরু করতে কী করলেন?
২০১৬ সালের শুরুতে আমার ডিভোর্স হয়। ডিভোর্স–পরবর্তী সময়ে মাথার মধ্যে কাজ করেছিল, বিয়ের কারণে বুঝি অনেক কিছু করতে পারিনি। এসব ভেবে ভেবে অস্থির জীবন যাপন করেছি। একদিন মনে হলো, আমি কী করছি! জীবনটাকে সুন্দর করব বলেই তো সেপারেশন নিয়েছি। আমি যদি আমাকেই সামলাতে না পারি! ছেলের দায়িত্বও আমার ওপরে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, অগোছালো হয়ে যাই। বিবাহিত জীবনে আমি গুহার মধ্যে ছিলাম। কারণ, আমার স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। আবার সেপারেশনে এলাম, তখন হঠাৎ অগোছালো হয়ে গেলাম।
প্রশ্ন :
নিজেকে সঠিক পথে ফেরানোর উপলব্ধি হলো কীভাবে?
একটা রাতে হঠাৎ মনে হলো যে দিস ইজ নট মি। এগুলো আমার সঙ্গে যায় না। আমি, আমার ছেলে, বাবা, আমার পরিবার—সবার ওপর তো আমার অনেক দায়িত্ব। আমি একজন অভিনেত্রী, নায়িকা হওয়ার জন্যই আমার জন্ম। তারকা হওয়ার জন্যই আমার জন্ম। এই আমি এসব কী করছি! উপলব্ধি হলো। এরপর লাইফটা ঢেলে সাজালাম।