‘বেদনার কান্না’ গানটি প্রসঙ্গে বলুন?
তরুন মুন্সী: দুই বছর পর আমার সুর ও কণ্ঠে নতুন গান প্রকাশিত হয়েছে। এটা কষ্টের গান। কথা ভালো লাগবে। মাশু (গোলাম মোর্শেদ) ভাইয়ের লিরিক তো সুন্দর। আমি নিজে গাইছি, তাই বলিনি। সবাই ওনার লেখা পছন্দ করে। সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল।
প্রথম আলো :
এই বৃষ্টি দিনে কষ্টের এই গান...
তরুন মুন্সী: দিন শেষে সবাই কষ্টের গানই বেশি শোনে। আনন্দের গান শুধু শোনে গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে।
কেন এমনটা মনে হলো আপনার?
তরুন মুন্সী: আমি মনে করি, বিটলসের সেরা গান ‘লেট ইট বি’ কষ্টের। মেটালিকার সেরা গান ‘নাথিং এলস মেটার’, সেটাও কষ্টের। জেমস ভাইয়ের সেরা সব গানও দুঃখের। আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়েরও তা–ই। আমার কাছে মনে হয়, দিন শেষে মানুষ একা। আর একা হলে কষ্টের গানই বেশি উপভোগ করে। ছেলে হোক আর মেয়ে হোক, অনেক ভাইবোন থাকুক আর না থাকুক, মা–বাবা মারা যাওয়ার পর সে হচ্ছে বিশ্ব এতিম। পৃথিবীর সবচেয়ে সামর্থ্যবান ও অসচ্ছল কেউই বলতে পারবে না, দিন শেষে তারা একা নয়।
প্রথম আলো :
আপনার এই উপলব্ধি কীভাবে হলো?
তরুন মুন্সী: আমি মনে করি, মানুষের আসাও একা, যাওয়াও একা। দুনিয়াটা হচ্ছে বেড়ানোর জায়গা। এই সময়ে আমরা কেউ ভালো ব্যবহার করে স্মরণীয়–বরণীয় হই, কেউবা খারাপ আচরণ করেও মানুষের মনে থাকি।
প্রথম আলো :
বেড়ানোর এই দুনিয়ায় আপনার জীবনে এখন পর্যন্ত কী পেলেন?
তরুন মুন্সী: মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, কষ্টও পেয়েছি। ঠকেছিও, জিতছিও। মানুষ চিনে ফেলছি কমবেশি। মানুষ চিনে ফেলাটাই একজন মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা মনে করি। মানুষকে যত বেশি চিনে ফেলা যাবে, তত বেশি সৃষ্টিকর্তার নিকটবর্তীও হয়ে যায় মানুষ।
কষ্ট পেয়ে কি হতাশ হতেন?
তরুন মুন্সী: কষ্ট পেয়ে গান লিখেছি, সুর করেছি আর তা মানুষের কাছে বেচে দিয়েছি। এই যেমন ‘কষ্ট বেচে খাই’ শিরোনামে গান করেছি। যে শিল্পীর জীবনে যত বেশি কষ্ট ও সংগ্রাম, সে তত বেশি সমৃদ্ধ। বিত্তশালী লোক কখনো শিল্পী হতে পারে না। শিল্পীর জীবনে কোনো না কোনো কষ্ট থাকতে হবে। কষ্ট করেনি আর গরিব ছিল না, এমন লোকজন শিল্পী হতে পারে না। হয়তো মানুষের কাছে পৌঁছায়, জনপ্রিয়তা পায় কিন্তু শিল্পী হতে পারে না। শিল্পী অনেক বড় একটা বিষয়। শুধু অর্থনৈতিক কষ্ট নয়, পারিবারিক কষ্টসহ সব ধরনের কষ্টই এর মধ্যে আছে। জীবনে প্রেমিকা লাগে, প্রেমিকার কষ্টও লাগে, আবার বউয়ের কষ্টও লাগে।
প্রথম আলো :
‘বেদনার কান্না’র পর নতুন কী আসবে?
তরুন মুন্সী: বেশ কয়েকটি নতুন গানের কাজ হচ্ছে। শিগগিরই আসবে ‘মইরা গেলে কোথায় চলে যায়’ গানটি। এই গানে আমার বাবা মারা যাওয়ার ব্যাপারটা থাকবে। খালিদ (চাইম ব্যান্ডের খালিদ) কাকার চলে যাওয়াটা থাকবে।
প্রথম আলো :
চাইমের খালিদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা...
তরুন মুন্সী: খালিদ কাকার মা আমার দাদির ছোট বোন। আর তাঁর বাবা আমার দাদার কাজিন। আমার দাদা-দাদিও ফার্স্ট কাজিন। দুই দিক থেকেই আত্মীয়। তিনি আমার আদর্শ। এর বাইরে আইয়ুব বাচ্চু ও আজম খান সবচেয়ে প্রিয় ও আদর্শ।
প্রথম আলো :
এই তিনজন আপনার আদর্শ যে কারণে...
তরুন মুন্সী: প্রত্যেকের ভাবমূর্তি, কণ্ঠ, সৃজনশীলতার কারণে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। গীতিকারদের মধ্যে নজরুল ইসলাম বাবু ও কাউসার আহমেদ চৌধুরী—এই দুজনের কারণে গান লেখার উৎসাহ পেয়েছি। লাকী আখান্দের কারণে সুর করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আমি যখন গান করছি, তখন তাঁর সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, তা কেউ না দেখলে বোঝানো যাবে না। আফসোস, তাঁর সুরে বেঁচে থাকতে কোনো গান করতে পারিনি। শিগগিরই লাকী ভাইয়ের সুরে মাশু ভাইয়ের কথায় একটা গান করব।
যাঁকে সুরকার হিসেবে আদর্শ মানতেন, তাঁরই সুরে গান গাইতে যাচ্ছেন, অনুভূতি কেমন?
তরুন মুন্সী: লাকী ভাইয়ের সুর করে রেখে যাওয়া একটি গান মাশু ভাইয়ের কথায় গাইতে পারছি, এটা তরুন মুন্সী হওয়ার সবচেয়ে বড় অর্জন। আর জীবনের শুরুর দিকে চারটি গান আমার কথা ও সুরে আজম খান গেয়েছিলেন। ব্যস্ত ভবঘুরে ক্যাসেটের টাইটেল গানটাও আমার ছিল, এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। আমি শুধু আজম খানের ভক্ত নই, তাঁর গাওয়া গানের গীতিকার-সুরকারও ছিলাম, ভাবতেই বিস্ময় লাগে।
প্রথম আলো :
দেশ টিভিতে চাইম ব্যান্ডের হয়ে গাইলেন...
তরুন মুন্সী: খালিদ কাকার মৃত্যুর পর আমার বাকি ফুফু-চাচারা বলছিল, যদি ব্যান্ডটাকে টেকাতে পারো, কিছু একটা করো। ওরাও চায়, ব্যান্ডটা টিকে থাকুক। ব্যান্ড সদস্যরাও চাইছিল, তাদের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছিল। চাইম যদি সক্রিয় থাকতে চায়, আমি যদি পাশে থাকতে পারি, সেটাও আমার ভালো লাগা। কিছু ছেড়ে কিছু ধরব, এ রকম কিছু নয়। আমার নিজের দল তরুণ ব্যান্ডও আছে, যা ১০ বছর ধরে চলছে। চাইমের কার্যক্রম যাতে থেমে না যায়, সেটা ভেবে পারিবারিক কারণে আমার সম্পৃক্ত হওয়া। বিষয়টা মোটেও এমন নয়, আমি হঠাৎ চাইম ব্যান্ডের হয়ে গাইলাম, তরুণ ব্যান্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেল। তরুণ ব্যান্ডের কোনো গান চাইমে গাইব না, একইভাবে চাইমেও তরুণ ব্যান্ডের গান গাইব না।