আমি কার সঙ্গে প্রেম করব, তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার
তিন সপ্তাহ আগে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’। মুক্তির পর থেকেই ছবিটি নিয়ে দর্শকের রয়েছে বাড়তি আগ্রহ। ছবির নারী চরিত্র গুলতির ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত নাজিফা তুষি। ছবি ও অন্যান্য বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি
প্রশ্ন :
মুক্তির আগে প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তির পর কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
চারপাশের সবাই ছবিটি দেখছেন। সিনেমা হলে টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি। দর্শকের চাপে কোথাও কোথাও শোর সংখ্যা বাড়াতে হচ্ছে। সিনেমা হলে গিয়ে জানতে পারছি, দর্শকেরা ‘হাওয়া’ দেখে বেরিয়ে ‘পরাণ’ দেখছেন, আবার অনেকে ‘পরাণ’ দেখে ‘হাওয়া’ দেখছেন। দুটি সিনেমাই দর্শকেরা দেখছেন। বাংলা সিনেমা দেখার আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে, এক নতুন দিনের সূচনা হয়েছে। যেখানে যাচ্ছি, সবাই ‘হাওয়া’র নায়িকা হিসেবে সম্বোধন করছেন।
প্রশ্ন :
মুক্তির আগে কি মনে হয়েছিল যে ছবিটি নিয়ে চারপাশে এমন আলোচনা হবে?
এতটা আশা করিনি। ভেবেছিলাম, হয়তো একশ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে মিডিয়ার মানুষ, যাঁরা শিল্প চর্চা করেন, ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ছবিটি দেখবেন। কিন্তু যেভাবে দেশে-বিদেশে ছবিটির দর্শক–চাহিদা তৈরি হয়েছে, তা অবিশ্বাস্য। বাংলা সিনেমায় এমন চিত্র আমার এ জীবনে দেখিনি। আমার কাজের মধ্য দিয়ে হচ্ছে, এটা তো আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন :
মুক্তির আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরেছেন, এখন প্রেক্ষাগৃহে ছুটছেন, কেমন লাগছে?
অনেক ভালো লাগছে। আনন্দ নিয়ে দর্শকের সিনেমা দেখার এই উৎসব উপভোগ করছি। সিনেমার এই সুন্দর সময়ই দেখতে চেয়েছিলাম। আমার কাজ যেন এখন সবার কাজ হয়ে গেছে। ইন্ডাস্ট্রির সবাই সিনেমাটি নিয়ে গর্ব করছেন। সিনেমাটির একজন শিল্পী হিসেবে এটা আমার জন্য আনন্দের, গর্বের।
প্রশ্ন :
নাকি ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি আগেই আলোচিত হওয়ার কারণে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের এই জোয়ার?
শুধুই গান দিয়ে দর্শক ধরে রাখা সম্ভব নয়। স্বীকার করছি, সিনেমায় গানটির প্রভাব আছে। সিনেমা মুক্তির আগে পোস্টার, গান, টিজার—যা যা প্রকাশিত হয়েছে, দর্শকেরা সব কটিরই প্রশংসা করেছেন। গানটা যে এভাবে ভাইরাল হবে, সেটা ভাবিনি। তবে শুধুই গান দিয়ে সিনেমা আলোচনায় রাখা সম্ভব নয়। গল্প ভালো না হলে দু-চার দিন চলত। কিন্তু এখনো ছবিটি নিয়ে হইচই চলছে। গল্প, মেকিং, শিল্পীদের অভিনয় ভালো না হলে চলত না। মানে কনটেন্টটাও দর্শক পছন্দ করেছেন।
প্রশ্ন :
গুলতি চরিত্রের সঙ্গে মিশে যেতে বেগ পেতে হয়নি?
এই চরিত্র আমার জন্য সহজ ছিল না। শুটিংয়ের আগে তাই এক বছর আমাকে গ্রুমিং করতে হয়েছে। ছয় মাস অনুশীলন করেছি। শুধু চিত্রনাট্য পড়া নয়, আমাকে চরিত্র হয়ে ওঠার কাজ করতে হয়েছে। ছয় মাস তুষি থেকে বেরিয়ে গুলতির মতো চলতে চেয়েছি। বেদেপল্লিতে যাওয়া, শহুরে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, শাড়ি পরে থাকাসহ চরিত্রের জন্য সবই করেছি। শুধু আমি নই, আমার টিমের সবাই এভাবে জীবন যাপন করেছেন। খাটে ঘুমাতাম না, বিষণ্ন থাকার চেষ্টা করতাম। চরিত্র হয়ে ওঠার জন্য টিম আমাকে যা যা বলেছে, সবই করেছি। আমি ভেবেছি, এই কষ্ট একসময় আমার সম্পদ হবে। কাজটি করতে গিয়ে আমি একজন অভিনেত্রী হওয়ার রাস্তা দেখেছি।
প্রশ্ন :
শুটিংয়ের দিনগুলো?
শুটিংয়ের আগে আমাদের প্রস্তুতি অনেক ভালো ছিল বলে কাজটা সহজ ছিল। পরিচালক আমাদের বলেছেন, আমরা শুটিং করতে যাচ্ছি না। আমরা শুধু গল্পের চরিত্রের জীবন যাপন করতে যাচ্ছি। ক্যামেরা আমাদের ফলো করবে। গুলতি, চান মাঝি, ইব্রাহিমরা সবাই চরিত্রের মধ্যে থেকেছেন দীর্ঘদিন। শুটিংয়ের দিনগুলোতে আমরা অফ স্ক্রিনেও চরিত্রের মধ্যে থাকতাম। তবে শুটিংয়ের সময় সমুদ্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের ওপর দিয়ে অনেক বিপদও গেছে।
প্রশ্ন :
দর্শকেরা আপনার অভিনয়ের কোন দিকটা পছন্দ করেছেন?
সবাই বলেন শেষের দৃশ্যটা। যখন গুলতি সাপ থেকে মানুষের রূপ ধারণ করে। পাশাপাশি অ্যাকশন দৃশ্যও অনেকের কাছে ভালো লেগেছে। গুলতির মধ্যে একজন তেজি নারীর রূপ ছিল। সেই দিকগুলোও অনেকের ভালো লেগেছে।
প্রশ্ন :
‘আইসক্রিম’ ছবির পর অনেক বছরে চলে গেছে। এত দিন পর এই ছবিতে কাজের আগ্রহ হলো কেন?
২০১৬ সালে ‘আইসক্রিম’ মুক্তির পর ভালো স্ক্রিপ্ট, ভালো চরিত্র ও ভালো টিমের সঙ্গে কাজ করার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এই সময়ে আবার নিজের অভিনয়ের উন্নতির জন্যও কাজ করেছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমি যে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছি, তার ফল আমি পেয়েছি। উদ্দেশ্য সৎ থাকলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ‘হাওয়া’ তার প্রমাণ। আমি তাড়াহুড়া করতে চাইনি, ধীরেসুস্থে এগিয়েছি। আমি সংখ্যার চেয়ে মানে বিশ্বাস করি।
প্রশ্ন :
আপনাকে নিয়ে একেক সময় একেকজনের প্রেমের সম্পর্কের গল্প শোনা যায়।
একটা ছেলে ১০ জন মেয়ের সঙ্গে প্রেম করলে কেউ মাতামাতি করে না। অথচ একটা মেয়ের বেলায় সবাই মাতামাতি করে—এটাই আমাদের সোসাইটি। শোবিজের মেয়ে হলে তো আরও বেশি। এমন কোনো অভিনেত্রী আছেন, যাঁকে নিয়ে প্রেমের গুঞ্জন হয়নি, হচ্ছে না? আমি কার সঙ্গে প্রেম করি, কার সঙ্গে দেখা যায়, এই ধরনের গুঞ্জন থাকবেই—এসব মেনে নিয়েই কাজ করতে হবে। আমি কার সঙ্গে প্রেম করব, তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। মানুষও এ ধরনের বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে আনন্দ পায়। এটা অনেকটাই কালচারে পরিণত হয়েছে। বিয়ের পর ছেলে–মেয়ের বয়সের ব্যবধান, কার বিয়ের আগে বাচ্চা হলো—এসব নিয়েও আলোচনা করতে, লিখতে কিছু মানুষ আনন্দ পান, মজা পান। যারা এসব নিয়ে মেতে থাকতে চায়, থাকুক, আমরা আমাদের মতো কাজ করতে থাকি।