শুভ জন্মদিন।
জিয়াউল রোশান: ধন্যবাদ।
প্রথম আলো :
কেমন কাটল এবারের জন্মদিন?
জিয়াউল রোশান: কেটেছে, মন্দ নয়। তবে উদ্যাপন করা হয়নি। সাধারণত করা হয়ও না। তবে অন্য সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে গেল একটা বছর অনেক দিক থেকে ভালো, আবার অনেক দিক থেকে খারাপ। একটা মানুষের সব সময় তো আর ভালো যায় না। তারপরও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, সুস্থ আছি—এটাই বড় বিষয়। সত্যি বলতে, গেল দুই বছরে এই জীবনে নতুন করে সংযোজন হয়েছে আমার মেয়ে আর ছেলে। সে হিসেবে যদি বলি, সবচেয়ে বড় অর্জন আমার দুই সন্তান। ওদেরকে বুকে জড়িয়ে নিলে সবকিছু ভুলে যাই। জীবনে যা–ই ঘটুক না কেন, আমি ওদের মাঝে সুখ খুঁজে পাই।
কয়েক মাস ধরে কাজ থেকে দূরে আছেন। একাধিক সিনেমার শুটিং শুরু করবেন বলেছিলেন, তা তো হয়নি। আবার নতুন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও সেসব হচ্ছে না। এ বিষয়গুলো কতটা ভাবাচ্ছে?
জিয়াউল রোশান: সত্যি বলতে, সময়টা খুব বিরক্তিকর যাচ্ছে। অনেক বেশি যন্ত্রণা যে দিচ্ছে, তা নয়। তবে সিনেমার প্রতি যতটুকু ভালোবাসা আছে, তাতে সিনেমা নিয়েই ব্যস্ত থাকতে বেশি ভালো লাগে। বর্তমান বাস্তবতায় তো তা হচ্ছে না, সম্ভাবনাও দেখছি না। তিন মাসের মতো কোনো কাজ করছি না। শুধু ডাবিং কিংবা পোস্ট–প্রোডাকশনের কাজ হয়েছে। তা ছাড়া এই সময়ে স্টেজ শো–ও হয়, এ বছর তার লক্ষণও দেখছি না। সময়টা পরিবারকে বেশি দিচ্ছি, ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি।
প্রথম আলো :
তাহলে এখন কী কাজে ব্যস্ত?
জিয়াউল রোশান: কর্মব্যস্ত না থাকলে একঘেয়ে লাগে। ওই যে বললাম, সন্তানদের সময় দিচ্ছি। বাসায় থাকছি। মাঝেমধ্যে বের হয়ে যখন ফিরি, সুখ লাগে।
সিনেমায় কাজ করাটা তো পেশাও।
জিয়াউল রোশান: সেটাই, সিনেমায় অভিনয় রুটিরুজির জায়গা। আমার যেহেতু বিশেষ কোনো ব্যবসা নেই, অন্য কাজও করি না—তাই এ সময়টা তো আমাদের যন্ত্রণার অংশও। এই তিন-চার মাসে এমন শিক্ষা পেলাম, মনে হয়েছে একটা পেশার ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। শুধু আমার নয়, কারোরই বর্তমান বাস্তবতায় এক পেশার ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। এই পরিস্থিতি আমাকে নতুন কিছু করতে ভাবতে বাধ্য করেছে। এই পরিস্থিতি কোভিড সময়ের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছে। ওই সময়টায় অবশ্য দুই বছরের জন্য সব বন্ধ ছিল। এখন যে পরিস্থিতি, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর মধ্যে দুই সন্তানের বাবা হয়েছি। আমি শুনেছিলাম, যখন কেউ একজন বাবা হয়, তখন দায়িত্ব বেড়ে যায়। সেই জায়গা থেকে তিন মাস এভাবে বসে থেকে উপলব্ধি হয়েছে, সিনেমার বাইরে আরও কিছু করতে হবে। তবে যতই বলি না কেন, এভাবে বসে থাকাটা হতাশারও। মাঝে মাঝে এ–ও ভাবি, দিন শেষে একজন পুরুষ মানুষকে তো বাইরে কাজ করতে হয়। ওই জায়গা থেকে ভাবলে হতাশ তো লাগেই। কারণ, কেন আমি কিছু করছি না, করা হচ্ছে না বা কাজ কেন হচ্ছে না। প্রযোজকেরা এখন অনেকে যোগাযোগ ছাড়া আছেন—এই পরিস্থিতি খুবই বেদনাদায়ক এবং আমাদের সিনেমার জন্য নেতিবাচকও। প্রযোজকেরা আসলে সিনেমায় বিনিয়োগ করতে আসেন। তাঁরা কেন হঠাৎ এমন পরিস্থিতিতে একেবারে হারিয়ে যাবেন! এটা মোটেও উচিত নয়। তাহলে আমাদেরও তো সিনেমার প্রতি নির্ভরতা কমে যাবে। সিনেমার প্রতি আগ্রহ, ভালোবাসা সবই নষ্ট হয়ে যাবে।
এই সময়ের শিল্পীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়েও কথা হচ্ছে।
জিয়াউল রোশান: আমি মনে করি, একজন শিল্পীর রাজনীতি থেকে একেবারে দূরে থাকা উচিত। কোনো কিছুর প্রভাব বিস্তার করার জায়গা শিল্পাঙ্গন নয়। এটা নিছক বিনোদনের জায়গা। আমরা সিনেমা করি, কাজ করি—এখানে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব চাই না। সিনেমাটা শুধু এগিয়ে যাক সিনেমার মানুষ দিয়েই। সবাই সিনেমাকে ভালোবাসুক। কোনো শিল্পী রাজনৈতিক সমর্থন ব্যক্তিগতভাবে করুক; কিন্তু সিনেমায় এসে সেটার প্রভাব যেন না পড়ে। রাজনৈতিক দল সমর্থনের জন্য কোনো শিল্পীকেই যেন প্রতিহিংসার শিকার হতে না হয়। তবে একজন শিল্পী সক্রিয় রাজনীতি করুন, এটা তাঁর ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা পছন্দ করেন না। কারণ, শিল্পীর ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষী সব দল–মতের হয়—এটা আমার অভিজ্ঞতা। শিল্পী বিশেষ কোনো দলের হলে, সেই শিল্পীকে অন্য দলের সমর্থকের চক্ষুশূল হতে হয়।
প্রথম আলো :
কাজ যেহেতু নেই, নতুন কিছু করার কথা ভাবছেন?
জিয়াউল রোশান: সত্যি বলতে এখন যে পরিস্থিতি চলছে, নতুন কিছু করার কথা না ভেবে উপায় নেই। গেল তিন মাসে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, নতুন কিছু ভাবতে বাধ্য হচ্ছি। বর্তমান এই পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবসা করার কথা ভাবছি। কোন ধরনের ব্যবসা করব, তা অবশ্য চূড়ান্ত করিনি।
প্রথম আলো :
এবার সিনেমা প্রসঙ্গ। কয়েকটি ছবি তো মুক্তির অপেক্ষায় আছে।
জিয়াউল রোশান: ‘পুলসিরাত’, ‘জামদানি’, ‘প্রেম পুরান’—এই তিন ছবির শুটিং, ডাবিং, পোস্ট–প্রোডাকশন সবই শেষ। কিছু অংশের শুটিং বাকি আছে, এ রকম আরও কয়েকটা সিনেমা আছে, সেসবের অবশ্য কোনো হদিস নেই।