সুযোগ ছিল, অনেক দামি গাড়ি বা বাড়ি করতে পারতাম ...
পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের শুটিং করছেন চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। কাজ ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গত রোববার তাঁর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন তিনি শুটিং থেকে বাসায় ফিরছিলেন।
প্রশ্ন :
গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে...
শুটিং শেষ করে ঢাকায় ঢুকছি। ইমন (সাহা) দাদার শুটিং ছিল। ‘সাইলেন্স: আ মিউজিক্যাল জার্নি’, আউটডোর শুটিং। এর মাধ্যমে প্রথমবার কোনো শর্টফিল্মে কাজ করলাম।
প্রশ্ন :
পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নায়কের স্বল্পদৈর্ঘ্যে কাজের পেছনে কোন ভাবনা কাজ করেছে?
গল্প ভালো লেগেছে। ইমনদার সঙ্গে যখন বসেছিলাম, মনে হয়েছে, এটাতে কাজ করা যায়। অন্য রকম একটা গল্প, যে রকম গল্পে আগে কখনো কাজ করা হয়নি। ভালো লেগেছে কাজটি করে। শুনেছি উৎসবের জন্য এটি তৈরি হচ্ছে। এই ফিল্মের মাধ্যমে নীলাঞ্জনা নীলার সঙ্গে প্রথম কাজ করলাম।
প্রশ্ন :
ভালো লাগার বিশেষ কারণ কী?
আমরা দেখি, অনেক সময় অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তারকারা হারিয়ে যান। সাধারণত কিছু ভুলের কারণে এমনটা ঘটে থাকে। ‘সাইলেন্স: আ মিউজিক্যাল জার্নি’ ছবির গল্পটা আমার চোখের সামনে দেখা কিছু তারকার জীবনের সঙ্গে মিল আছে, যাঁরা শিল্পের পেছনে না দৌড়ে টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছেন। এটা যে তাঁদের ধ্বংস করে, সেটাই তুলে ধরা হয়েছে খুবই সুন্দরভাবে। টাকাপয়সা মানুষের প্রয়োজন, শিল্পীদেরও। কিন্তু শিল্পের মধ্যে টাকাপয়সা একমাত্র ফ্যাক্ট না। অথচ আমরা প্রায়ই দেখছি, শিল্পের মানুষ শিল্পের চেয়ে টাকার ক্ষুধাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। এসব করে নিজের মেধা ও যোগ্যতাকে তাঁরা অবমূল্যায়ন করছেন। আমার এই কাজে একজন সম্ভাবনাময় শিল্পী যেন উপকৃত হন, সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে পারলে ভালো লাগবে। আমাদের চোখের সামনের গল্প, অল্প পরিসরে আনা হয়েছে।
প্রশ্ন :
এই যে বললেন, অনেকে শিল্পের পেছনে নয়, অর্থের পেছনে দৌড়াচ্ছেন, এটা কি নিজের দেখেছেন?
এখন যাঁরাই অভিনয়ে আসছেন, অভিনেতা–অভিনেত্রী যে–ই হোন, কিছুদিন যাওয়ার পরই উচ্চাভিলাষী চিন্তাভাবনা শুরু করেন। আমার কেন একটা গাড়ি নেই, অমুক ভাই বা বোনের তো আছে। ফ্ল্যাট আছে। নতুন মডেলের ফোনসেট কেন নেই। ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র কেন নেই। আরও কত কী...। কিন্তু তাঁদের যে একটা দীর্ঘ কষ্টকর ভ্রমণ আছে, সেটা মানতে চান না। কত কাঠখড় পুড়িয়ে তাঁরা এটা করেছেন, তা নিয়ে ভাবছি না। শিল্পের চেয়ে সবার বৈষয়িক দিকে মনোযোগ। আমি নিজেও তো অনেক দিন সংগ্রাম করা মানুষ। আমার ওস্তাদ জাকির হোসেন রাজুর সঙ্গে কত বছর লেগে ছিলাম। এরপর ‘জ্বি হুজুর’ ছবিটি করেছি। শিল্পে একটা স্ট্রাগল দরকার। এলাম, জনপ্রিয়তা পেয়ে গেলাম, অনেক নাটক, সিনেমা, গান হয়ে গেল। এক দিনে সব পেয়ে গেলে সেটার মূল্য কেউ দিতে চান না। এখন না সবাই এক দিনে সব পেয়ে যেতে চান। দেখা গেল, কিছুদিন অভিনয় ও গান করে ভালো লাগল না, তারপর ইউটিউব কনটেন্টের আর্টিস্ট হয়ে গেলেন। এরপর দেখা গেল, ভাইরাল হয়ে গেছেন। তারপর দিনদুনিয়ার কিছুই চোখে দেখেন না। এখানে স্থির হওয়ার জন্য একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
প্রশ্ন :
এটার জন্য তারকারাই শুধু দায়ী?
সমাজ তো অন্য গ্রহের মানুষ বদলান না। সমাজের পরিবর্তন সমাজের মানুষই করছেন। এই অঙ্গনে তো এখন শিল্পের মানুষ কম, তাই এমনটা বেশি হচ্ছে। সংস্কৃতিমনা জাতি হঠাৎ করে অসংস্কৃতিবানদের হাতে পড়েছে। এটা হয়তো থাকবে না। আমার মতো করে যদি বলি, আমারও অনেক সুযোগ ছিল, অনেক দামি গাড়ি বা বাড়ি করতে পারতাম। কিন্তু মানুষ তো আমাকে অভিনয়ের জন্য ভালোবাসে। এটাকেই অনেক কিছু ভেবেছি। তাই অভিনয়টাই মন দিয়ে করার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন :
জীবনে এমন সুযোগ কতবার এসেছে?
আমর তো নানা জায়গায় যাওয়া হয়। সবার সঙ্গে কমবেশি জানাশোনাও আছে। অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাই অসংখ্যবার সুযোগ এসেছে। আমার আত্মতৃপ্তির জায়গা এটুকুই, আমার পেশা এখনো সিনেমা। অভিনয় করা।
প্রশ্ন :
রেজা ঘটকের পরিচালনায় ‘ডোডোর গল্প’ সিনেমায় কাজ করছেন আপনি। কেমন চলছে?
ভালোই চলছিল। মাঝে পরীমনি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এখন আবার শুরু হয়েছে। পরীর সঙ্গে অনেক দিন পর কাজ করছি। আগের কাজটা কী, সেটার নাম অবশ্য ভুলেও গেছি।
প্রশ্ন :
নতুন এই কাজ করতে গিয়ে পরীমনির মধ্যে কোনো পরিবর্তন লক্ষ করেছেন?
পরীমনি এখন অনেক বেশি পরিণত। কাজের ব্যাপারে তাকে গোছানো মনে হয়েছে। কথাবার্তা ও চলনবলনে আগের চেয়ে অনেক সিনসিয়ার। সাবলীল। আমার কাছে মনে হয়েছে, কাজের প্রতি আগ্রহটা বেড়ে গেছে। এটা দেখে ভালো লেগেছে।
প্রশ্ন :
সম্প্রতি সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) খেললেন। শেষে এই আয়োজনের এমন হাল হলো কেন?
আমরা সেমিফাইনালে বাদ পড়ে গেলাম। এরপর ফাইনাল আটকে যায়। চেষ্টা করেছিলাম যেন হয়, কিন্তু হয়নি। তবে এটা নিয়ে কথা না বলতে পারলেই ভালো হতো। সব বিষয়ে কথা বলিও না। ভাইরাল হওয়ার জন্য ক্যামেরার সামনে চিল্লাই না। কেন এমন হাল হয়েছে, আয়োজকেরা ভালো বলতে পারবেন।
প্রশ্ন :
একটা অন্য প্রসঙ্গ। আপনাকে দেখি শুটিং সময়ের ভিডিও ছবির শুটিং শেষ হওয়ার আগেই ফেসবুকে ছেড়ে দেন...
মাঝখানে কিছুদিন শুটিং স্পট বা এই–সেই লাইভ ভিডিও করতাম। এমনিতেই করতাম। ভালো লাগত বলেই করতাম। চার-পাঁচ মাস ধরে এটা আর করছি না। আমার কাছে মনে হয়েছে, টাকা খরচ করে টিকিট কেটেই তো দর্শক ছবি দেখছেন। আগেই যদি সব দেখেন, তাহলে তো আকর্ষণটা কমে যাবে। এটা আমার এখনকার উপলব্ধি। এখনো দেখি সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাই যাঁর যাঁর একটা কনটেন্ট দিচ্ছেন। ফেসবুক, ইউটিউবে দিচ্ছেন। এটা হয়তো সবার প্র্যাকটিসে পরিণত হয়েছে। হয়তো তাঁরা এটা এনজয়ও করছেন। তবে এসব ঠিক না।
প্রশ্ন :
সচেতনতায় আপনি ফিরে এলেও অনেককে এখনো করতে দেখা যায়।
এখন দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়াতে সবাই যাঁর যাঁর একটা কনটেন্ট দিচ্ছেন। ফেসবুক, ইউটিউবে দিচ্ছেন। এটা হয়তো সবার প্র্যাকটিসে পরিণত হয়ে গেছে। হয়তো তাঁরা এটা এনজয়ও করছেন। তবে এসব ঠিক না।
প্রশ্ন :
এখন আমরা আবার এমনও দেখছি, বিনোদন অঙ্গনের একে অন্যের নানা বিষয়ে অকারণ সমালোচনায় মেতে উঠছেন।
আমরা অনেক বেশি উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যাচ্ছি। একেকজন অতিমাত্রায় হিংস্র ও পরনিন্দাকারী হয়ে ওঠছি। নেগেটিভ চর্চাই আমরা বেশি করি। মৃত্যুর খবরেও আমরা হাসছি, এর চেয়ে খারাপ কিছু আর আছে! মানুষ মানুষকে ভালোবাসছে না। কারোর মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে না। নিজেকে নিয়ে আলোচনা করে না। শিল্প-সংস্কৃতি তো আর এমনি এমনি পেছায়নি। এটা বিস্তর আলোচনার বিষয়। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। অন্যের সম্মানহানি করতে গিয়ে অজান্তে নিজের সম্মানটাই হারাচ্ছেন তাঁরা, এটাও বুঝতে হবে। নিজেদের মধ্যে বোধের জাগরণ ঘটলে এসব আর থাকবে না।