তৃতীয় পক্ষ কেউ কেউ এ বিষয়ে গুজব ছড়িয়েছে: শবনম বুবলী
গত ৩০ সেপ্টেম্বর আড়াই বছরের ছেলে শেহজাদ খানকে প্রথম প্রকাশ্যে আনেন শাকিব খান ও বুবলী। এর তিন দিন পর ফেসবুক পেজে তাঁদের বিয়ের তারিখও জানান বুবলী। ওই দিনই আবার গুঞ্জন ছড়ায়, শাকিব খান ও বুবলীর বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। প্রেম, বিয়ে ও সন্তানের ব্যাপারে প্রথম আলোর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন শবনম বুবলী।
শাকিব খান আর আপনার প্রেম কবে থেকে?
‘বসগিরি’র আগেই আমাদের প্রিয়ারে নামে আরেকটি ছবি নিয়ে কথা হচ্ছিল। ফলে, শুটিংয়ের আগে থেকেই তার সঙ্গে কিছুটা জানাশোনা হয়েছিল। তা ছাড়া ফিল্মের বিষয়ে এই মানুষকে প্রথম চিনেছি, দেখেছি। এরপর গত পাঁচ বছর তার সঙ্গেই টানা কাজ করেছি। শুরু থেকেই আমার কাছে শাকিবের প্রতি অন্য রকমের সম্মানের জায়গা ছিল। অনেক বিষয় এখানে কাজ করেছে। ‘বসগিরি’র শুটিংয়ের শেষের দিকে আমাদের প্রেমের সম্পর্ক হয়। এরপর একটা সময় বিয়ে। তারপর সন্তান।
প্রেম, বিয়ে ও সন্তানের খবর গোপন রাখলেন কেন?
দেখুন, আমি কিন্তু সন্তানের বিষয়টি গোপন করিনি। যদি গোপনই রাখতে চাইতাম, তাহলে তাকে পেটে নিয়ে শুটিংয়ে যেতাম না। বাবু যখন আমার পেটে এসেছে, তখন থেকেই আমার কাজের সেক্টরের সবাই এ ব্যাপারে কমবেশি জানতেন। এটি ওপেন সিক্রেট ছিল। বীর ছবির শুটিংয়ে আমার অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি আপনারা খেয়াল করেছেন নিশ্চয়। তা ছাড়া আমাদের দুজনের পরিবার, কাছের মানুষ—সবাই তো জানতেন। সুতরাং এটিকে তো গোপন বলে না। হয়তো সেভাবে দর্শক, ভক্ত বা সংবাদকর্মীদের সামনে বিষয়টি প্রকাশ করিনি। কিন্তু গোপন তো রাখিনি। আগেও আমাদের প্রেম ও বিয়েসংক্রান্ত একাধিক খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তো আমরা একবারও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিইনি।
যুক্তরাষ্ট্রে কবে গিয়েছিলেন?
২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে যাই। বাবুর জন্ম হয় ওই বছরের ২১ মার্চ। ফিরে আসি একই বছরে ২৯ নভেম্বর। প্রায় নয় মাস ছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কিছুদিনের মাথায় পৃথিবীজুড়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ে। এর বিস্তার যে এত ভয়াবহ হবে, বুঝিনি। সারাক্ষণ অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ কানে আসত। হাসপাতালেও খুব কড়াকড়ি ছিল।
আপনজনেরাও রোগীর কাছে যেতে পারতেন না। সে সময় কাজিনরা ছাড়া আপনজন কেউই ওখানে আমার সঙ্গে ছিলেন না। করোনার কারণে কড়াকড়ি থাকায় কাজিনরাও ঠিকমতো হাসপাতালে আসতে পারতেন না। আর বাবুর জন্মের ব্যাপারটা যেহেতু একটু সিক্রেট ছিল, তাই আমারও সেভাবে মুভ করা হতো না। একা একা হাসপাতালে গিয়ে চেকআপ করানোটাও সে সময় খুবই স্ট্রাগলিং ছিল। অনেক কষ্ট করেছি ওই সময়। বাবুকে নিয়ে একা একা সময় কাটত। অবুঝ ছোট্ট সন্তানের সঙ্গে ভাবভঙ্গি দিয়ে গল্প করে সময় কাটত। এত ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে একা একা সুপারশপে যেতাম। কী সুন্দর করে আমার সঙ্গে সে মানিয়ে নিত! তার মুখের দিকে তাকিয়ে মাঝেমধ্য আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তাম।
শাকিব খানের সঙ্গে কথা হতো না?
হবে না কেন? সে সন্তানের বাবা, প্রতিদিনই তার সঙ্গে অনেকবার করে কথা হতো। ভিডিও কলে শাকিব বাবুকে দেখত, আকার-ইঙ্গিতে কথা বলত বাবুর সঙ্গে। করোনার মধ্যে বাংলাদেশে বসে বাবুকে নিয়ে সে–ও তো টেনশন করত।
সন্তানকে নিয়ে একা একা থাকার দিনগুলোয় কাকে বেশি মনে পড়ত?
আপনজনদের কথাই বেশি মনে পড়ত। আমার কাছে তখন মনে হয়েছিল, ওপরওয়ালার কাছ থেকে একটা আলাদা শক্তি এসেছিল আমার কাছে। না হলে একটা মেয়ের পক্ষে ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে দেশের বাইরে এত বড় কঠিন সময় পার করা সম্ভব ছিল না।
শেহজাদ খান বীর নামটি কার দেওয়া?
শেহজাদ খান নামটি দিয়েছে ছেলের বাবা। তার ইচ্ছা ছিল ছেলের নাম রাখবে। ওই সময় আমাকে নামের একটা তালিকা তৈরি করে দিতে বলেছিল। একটি তালিকা তাকে দিয়েছিলাম। এই নাম তালিকার এক নম্বরে ছিল। আমারও নামটা খুব পছন্দ। সে এই নামই পছন্দ করে। এই নামের একটা মানেও আছে। এটি আরবি শব্দ। অর্থ রাজার ছেলে। আর বীর নামটি আমি ও আমার মা মিলে দিয়েছি। নামটি দেওয়ার কারণও ছিল।
কী?
কারণ, আমি যখন বীর ছবির শুটিং করি, তখন বাবু আমার পেটে। ওই অবস্থায় শুটিং করেছি। বলতে গেলে শুটিংয়ে বাবা, মা ও সন্তান—তিনজনই একসঙ্গে ছিলাম। আমি তাকে পেটে করেই ছবিতে ফাইট করেছি, গানে নেচেছি; কোনো সমস্যা হয়নি। বলতে পারেন বীরের মতোই শুটিংয়ে আমার সঙ্গে থেকেছে আমার সন্তান। তা ছাড়া জন্মের মাসটাও ছিল স্বাধীনতার—মার্চ। সব মিলেই আমি ও মা মিলে এই নাম রেখেছি।
বর্তমান তো আপনি মা–বাবার সঙ্গে থাকেন। বাসায় কার সঙ্গে বীরের সখ্য বেশি?
আমার বাইরে নানা, নানি ও মামার সঙ্গে। সারাক্ষণ ‘নানুমা’, ‘নানুমা’ বলে ডাকে। আমি কিন্তু মাম্মি, ড্যাডি—এসব শিখাই না। মা, বাবা—এভাবে ডাকতে শেখাই। পরিস্থিতির কারণে সে বাংলাদেশের বাইরে জন্মগ্রহণ করেছে। কিন্তু আমি চাইব বাংলাদেশি সত্তা যেন তার ভেতর থাকে। সে বাসায় ‘মা’, ‘বাবা’, ‘নানুমা’, ‘নানাভাই’ বলে ডাকে। নানুমার সঙ্গে একটু বনিবনা না হলে চুপ করে নানাভাইয়ের কাছে গিয়ে বসে থাকে। মাঝেমধ্যে দুষ্টুমিও করে। বাসায় মা আমাকে সাধারণত ‘বুবন’ বলে ডাকেন। কয়েক দিন আগে আমি আমার ঘরে। কোনো একটা কাজে মা আমাকে ‘এই বুবলী’ বলে ডাকছিলেন। ও আমার পাশে বসে গেম খেলছিল। মাকে ভেঙিয়ে সে ভাঙা ভাঙা গলায় বলছে, ‘এই বুবলী! এই বুবলী!’ হা হা হা। আমি ওর মুখে এ কথা শুনে কিছুটা ইমোশনাল হয়েছিলাম।
বাবার সঙ্গে বীরের কথা হয়?
হ্যাঁ, প্রায় প্রতিদিনই ভিডিও কলে বীরের বাবার সঙ্গে কথা হয়। দেখাও হয়।
ছেলেকে কীভাবে গড়ে তুলতে চান?
আমি বাবুকে খুব পর্যবেক্ষণ করি। প্রতি সেকেন্ডে, প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করি। পৃথিবীতে আসার পর এক থেকে দেড় বছর আমি কাজই করিনি। ওর সঙ্গে খুব ক্লোজ সময় গেছে আমার। এখনো কাজের বাইরে বাসায় পুরো সময় বাবুকে দিই। কোন জায়গায়টায় তার ইন্টারেস্ট বেশি, আমি নোটিশ করছি। যেদিকে ওর ইন্টারেস্ট বেশি থাকবে, সেদিকেই তাকে ফোকাস করতে চাইব। ডেফিনেটলি চাইব, একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে সে। ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত হবে।
তার মধ্যে কিন্তু হিরোইজম ব্যাপারটা পিচ্চিকাল থেকেই আছে। বাই বর্ন একটা হিরোইজম ব্যাপার থাকে না, বীরের মধ্যে সেই ভাব আছে কিন্তু। আমি বাংলা সিনেমাকে শ্রদ্ধা করি, সো আমার ছেলে সিনেমা করতে পারবে না, এমনটা আমি কখনোই চাইব না। সে বড় হয়ে চাইলে অবশ্যই সিনেমা করতে পারে। আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমেরিকাতেও যদি সে ফিল্ম নিয়ে লেখাপড়া করতে চায়, করতে পারবে। তবে সবার আগে লেখাপড়ার দিকে আমার জোরটা বেশি থাকবে।
আপনাদের নাকি বিচ্ছেদ হয়ে গেছে?
কয়েকটি অনলাইনে পোর্টালে খবরটি দেখেছি। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এ খবর কোথা থেকে এল, বুঝতে পারছি না। এটি পুরাটাই মিথ্যা। দেখুন, আমরা যেদিন সন্তানের ছবি দিয়ে একটা সুন্দর, ভালো খবর প্রকাশ করলাম, সেদিনই এ মিথ্যা খবর এল। আপনারা তো প্রেম ও বিয়ের খবর আগে থেকেই কিছুটা হলেও জানতেন। এ বিষয়ে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। সে সময় এসব খবরে অতটা গুরুত্ব দিইনি। বেশি গুরুত্ব ছিল বাবুর খবরটি নিয়ে। কিন্তু এত ভালো একটা খবর দেওয়ার দিনই এ ধরনের একটা ভিত্তিহীন খবর! খুবই মর্মাহত হয়েছি, খারাপ লেগেছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা মা–বাবা মিলে এভাবে কি বাবুর খবরটি সবাইকে দিতাম? সাংবাদিক ভাইদের দোষ দেব না।
আমার কাছে মনে হয়েছে, তৃতীয় পক্ষ কেউ কেউ এ বিষয়ে গুজব ছড়িয়েছে। সেই পক্ষ সাংবাদিক ভাইদের এ বিষয়ে মিথ্যা খবরটি লিখতে উৎসাহিত করেছে।